লিয়োনেল মেসি। —ফাইল চিত্র।
শুভেচ্ছা বার্তা আসছে ঘনঘন। মধ্যরাত থেকে দলের হোটেলে উৎসবের আবহ। কোপা আমেরিকায় মঙ্গলবার প্রতিপক্ষ চিলি। সমীহ করার মতো ফুটবল শক্তি। তবু সোমবার আর্জেন্টিনার ফুটবলারেরা উৎসবে মেতে। কেন্দ্রে অবশ্যই লিয়োনেল মেসি।
৩৭ বছর পূর্ণ করে ফেললেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তৃতীয় অধিনায়ক। কোপাতেও দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশের হয়ে আগামী বিশ্বকাপ খেলা অনিশ্চিত। জন্মদিনের সময় এত বড় ফুটবলের আসর আর না-ও আসতে পারে ফুটবলার মেসির জীবনে। তাই উৎসব আটকায় কে? কোচ লিয়োনেল স্কালোনিও তো মেসিভক্ত। এক সময় ছিলেন সতীর্থ। দলের সাফল্যের জন্য অনেকটাই নির্ভর করেন প্রবীণ ফুটবলারের উপর। ২৪ ঘণ্টা পর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থাকলেও মেসিকে ঘিরে ফুটবলারদের উৎসবে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা বা ইচ্ছা নেই তাঁর।
বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের দু’ভাগ করে দিয়েছেন মেসি। এক ভাগকে নিজের ভক্ত করে তুলেছেন। আর একটি দল আছে, যারা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ভক্ত। তারা মেসিকে পছন্দ না করলেও উপেক্ষাও করতে পারেন না। বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে কার দখলদারি বেশি, তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। তুল্যমূল্য বিচার হতে পারে। কিন্তু সাফল্যের পরিসংখ্যানে রোনাল্ডোকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক।
মেসির একটা বিশ্বকাপ আছে। রোনাল্ডো এখনও সফল হননি। এই একটা ট্রফিতেই প্রধান প্রতিপক্ষকে ১০ গোল দিয়ে রেখেছেন এমএল টেন। কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের আগে এবং পরের পরিস্থিতি ভিন্ন। মেসি তখনও জাতীয় নায়ক ছিলেন আর্জেন্টিনায়। এখনও আছেন। তখন ছিলেন ‘ট্র্যাজিক হিরো’। এখন তিনি ‘সুপার হিরো’। তাই তাঁর জন্মদিন ঘিরে মানুষের উন্মাদনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্জেন্টিনার ফুটবল জনতা কখনও আশা ছাড়েননি মেসিকে নিয়ে। লিয়োও তাঁদের ভরসার মর্যাদা দিয়েছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। ১৯৮৬ সালের পর ২০২২। ৩৬ বছরের ব্যবধানে দেশকে বিশ্বকাপ দিয়েছেন মেসি। আর একটা বিশ্বকাপ এক বছর পর। মেসি সর্বোচ্চ পর্যায় খেলার মতো ফিট থাকবেন কিনা, এখনই বলা সম্ভব নয়। তাই কোপা আমেরিকার ট্রফিটা আরও এক বার তাঁর হাতে তুলে দিতে চান আর্জেন্টিনার ফুটবলারেরা। সেটাই হবে মেসির জন্মদিনের সেরা উপহার।
গত বারের চ্যাম্পিয়ন হিসাবে কোপা আমেরিকা খেলছে আর্জেন্টিনা। প্রতিযোগিতার শেষেও মেসির মাথায় বিজয়ীর তাজ দেখতে চান ফুটবলপ্রেমীরা। এ বারের প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মেসিই। তিনি না থাকলে আগ্রহও থাকবে না। পৃথিবীর অন্য প্রান্তে চলছে ইউরো কাপ। জনপ্রিয়তা, আকর্ষণ, আগ্রহের লড়াইয়ে ইউরোপের ফুটবলকে একাই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন লাতিন আমেরিকার মেসি।
ফুটবল ভক্তদের প্রত্যাশার শেষ নেই। মেসি জেতাবেন, এই বিশ্বাস নিয়েই তাঁরা মাঠে যান। ৩৬ বছর পূর্ণ করে ফেলা মেসিকে আটকাতে এখনও প্রতিপক্ষ দলের কোচেদের মাথা খাটাতে হয়। বিপক্ষের দু’জন, তিন জন ফুটবলারকে একাই ব্যস্ত করে রাখেন মেসি। তাতে তাঁর সতীর্থদের খেলা সহজ হয়ে যায়। মাঠে তুলনায় বেশি ফাঁকা জায়গা পেয়ে যান। সে জন্যই গঞ্জালো মন্টিয়েল, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, দে পলেরা চান মেসি ২০২৬ সালের বিশ্বকাপটাও খেলে দিন। অন্তত তিনি মাঠে থাকলে তাঁরা বাকিটা কিছুটা সহজে বুঝে নিতে পারবেন।
আর্জেন্টিনা শিবিরকে মেসির জন্মদিন ঘিরে কী কী আয়োজন হয়েছে, তা গোপন রাখা হয়েছে। মেসিকেও আগে জানানো হয়নি। তাঁরা আসল উপহার দিতে চান ১৪ জুলাই রাতে। সে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভক্তদের আটকায় কে! মেসিকে কাছে পাওয়ার সুযোগ নেই। তবু আনন্দ, উচ্ছ্বাসের খামতিও নেই। যে যাঁর মতো করে মেসির জন্মদিন পালন করছেন। এখানেও রোনাল্ডোর থেকে কিছুটা এগিয়ে মেসি। তাঁকে ঘিরে ভক্তদের আবেগ, ভালবাসা, উচ্ছ্বাস, আন্তরিকতা অনেক প্রবল। জন্মদিনে মেসি কী চান? জানা নেই ভক্তদের। তাঁরা চান আর একটা কোপা আমেরিকা। আরও কয়েক বছর বিশ্ব ফুটবলে মেসির শাসন।
পেলের মতো সম্রাট বা মারাদোনার মতো রাজপুত্র নন। নিজের মুখে নিজেকে কখনও সেরা বলে দাবি করতে হয়নি। তিনি মেসি। সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য তাঁর বাঁ পা-ই যথেষ্ট। ফুটবল ছাপিয়ে অনেক বেশি ভালবাসার, অনেক বেশি আবেগের নাম।
(ভ্রম সংশোধন: লিয়োনেল মেসি ৩৭ বছর পূর্ণ করে ৩৮-এ পা দিলেন। প্রথমে এই প্রতিবেদনে ৩৬ বছর লেখা হয়েছিল। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।)