ফাঁকা মাঠে খেলা। নিজস্ব চিত্র।
মাত্র সাত দিনের ব্যবধান। তার মধ্যেই আমুল বদলে গেল ছবিটা।
গত ২ অক্টোবর গাঁধী জয়ন্তীতে নওদার মধুপুরে স্থানীয় একটি ক্লাবের ফুটবল টুর্নামেন্টে ভেঙে গিয়েছিল যাবতীয় বিধিনিষেধ। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, করোনা আবহেও গায়ে গা ঠেকিয়ে ফুটবল দেখতে ওই দিন মাঠে ভিড় করেছিলেন কয়েকশো দর্শক। শাসক দলের একাধিক নেতা মঞ্চ আলো করে দিনভর সেই ফুটবল দেখেন। অভিযোগ, আগাম খবর পেলেও শাসকদলের একদল নেতার ‘প্রচ্ছন্ন সমর্থন’ থাকায় নিয়ম ভাঙতে দেখেও খেলা বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়নি পুলিশ।
মধুপুর থেকে দূরত্ব মেরেকেটে ত্রিশ কিমি বেলডাঙার বড়ুয়া মোড়ের। সেখানকারই একদল যুবক দেখিয়ে দিলেন, কীভাবে বিদেশের ক্লাবগুলির ধাঁচে দর্শকশূন্য মাঠে ফুটবল আয়োজন করা যায়। শুক্রবার বড়ুয়া মোড় সংলগ্ন একটি মাঠে এলাকার ১২টি দলকে নিয়ে ওই খেলা হয়। দর্শক যাতে ভিড় না করেন, সেই জন্য আগাগোড়া তালাবন্ধ রাখা হয়েছিল মাঠ। ফাঁক গলে যাতে দর্শক ঢুকে না পড়েন, সেই জন্য ছিল বাঁশের ব্যারিকেড এবং প্রহরাও। যদিও বৃহস্পতিবার পর্যন্তও স্থানীয় বাসিন্দারা সংগঠকদের এমন পরিকল্পনার কথা জানতেন না।
কী করে এটা সম্ভব হল? জানা গিয়েছে, বেলডাঙা থানার ওসি জামালুদ্দিন মণ্ডল এবং স্থানীয় এক তৃণমূল বিধায়ক সদর্থক ভূমিকা নিয়েছেন এক্ষেত্রে। ফুটবল টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা কানে গিয়েছিল বেলডাঙা থানার। তারা উদ্যোক্তাদের এ ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজন থেকে বিরত থাকতে বলেছিল। ওই এলাকায় বাড়ি নদিয়ার কালীগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক হাসানুজ্জামানের। সংগঠকরা তাঁর দ্বারস্থ হলে বিধায়ক স্পষ্টই জানিয়ে দেন, একমাত্র দর্শকশূন্য মাঠে খেলা হলেই তিনি টুর্নামেন্ট আয়োজন সমর্থন করবেন। আয়োজকরা তা মেনে নেন। বিধায়ক এদিন বলেন, “আমি ওদের বলি, করোনা সংক্রান্ত সমস্ত নির্দেশিকা মেনে খেলা করতে হবে। তাহলেই আমি পুলিশকে অনুমতির জন্য বলব। ভাল লাগছে যে আয়োজকরা আমার কথা শুনেছে।’’ উদ্যোক্তাদের অন্যতম নীল শেখ বলেন, ‘‘আমরা বিধায়ক এবং পুলিশকে আশ্বাস দিয়েছিলাম যাবতীয় নিয়ম মেনে খেলা পরিচালনা করা হবে। স্থানীয় বাসিন্দারাও আমাদের অনুরোধ রেখে মাঠে আসেননি। সকলের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না।’’
আয়োজকদের প্রশংসা করে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি বলেন, ‘‘বেলডাঙায় করোনা বিধি মেনে ফুটবল হওয়ার কথা শুনে ভাল লাগছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট তো এভাবেই নিয়ম মেনে দর্শকশূন্য মাঠে হচ্ছে।’’ সংস্থার সহকারী সম্পাদক জগন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই চেয়েছিলাম, সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে যেন এভাবেই দর্শকশূন্য মাঠেই খেলা হয়। বেলডাঙার ওই যুবকরা জেলার মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।’’