ভারতীয় দলের অনুশীলনে সুনীলরা। -ফাইল চিত্র
দীর্ঘ ২৮ বছর পরে ফের এ দেশে পা রাখলেন তিনি। তবে এ বার কোচ হয়ে। সময় বদলে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে তাঁর ভূমিকাও।আগের বারের মতো ফুটবলার আর তিনি নন।
আজ, বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বে ভারতের সামনে ওমান। দলের কোচ নেদারল্যান্ডসের প্রাক্তন ফুটবলার এরউইন কোম্যান দল নিয়ে এসেছেন গুয়াহাটিতে। বিশ্বফুটবল এক ডাকে চেনে এরউইন কোম্যানকে। নেদারল্যান্ডসের প্রাক্তন ফুটবলার রোনাল্ড কোম্যানের ভাই তিনি। রুড খুলিট, মার্কো ভ্যান বাস্তেন, ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ডরা একসময়ে ছিলেন সেই সময়ের হল্যান্ড ফুটবলের ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। সেই দলের সদস্য ছিলেন দুই কোম্যান ভাই।
১৯৯১ সালে এরউইন খেলে গিয়েছেন এ দেশে। সেই সফরে কলকাতার মনও জিতে নিয়েছিলেন তিনি এবং তাঁর দল। তখন পিএসভি আইন্দহোভেনের ফুটবলার ছিলেন এরউইন। সেই সময়ে নেদারল্যান্ডসের ক্লাব পিএসভি-তে তারকার মেলা। কে নেই সেই দলে!গোল আগলানোর দায়িত্বে ভ্যান ব্রুকলিন। রোমানিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা পপেস্কু, জাম্বিয়ার তারকা কালুষা বাওয়ালা, বেলজিয়ামের এরিক জেরেটের মতো ফুটবলার সেই দলে। ব্রাজিলের রোমারিও আক্রমণভাগে। যদিও ভারত-সফরে খেলতে আসেননি রোমারিও। দলটার রিমোট কন্ট্রোল তখন ববি রবসনের হাতে।
আরও পড়ুন: অঘটন ঘটানোর আশায় সুনীল থেকে গুরপ্রীত
আরও পড়ুন: দিনের পর দিন যৌন হেনস্থা, গোয়ায় কোচের দুষ্কর্মের ভিডিয়ো তুলল বাংলার কিশোরী সাঁতারু
এ দেশে এসে তিন-তিনটি ম্যাচ খেলেছিল পিএসভি। প্রথম দু’টি ম্যাচে ভারতের মূল দলকে বিধ্বস্ত করেছিল তারা। কলকাতায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তৃতীয় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই ম্যাচে পিএসভির প্রতিপক্ষ ছিল আইএফএ একাদশ। চিবুজোর, চিমা ওকোরির মতো তারকা বিদেশিরা খেলেছিলেন আইএফএ একাদশের হয়ে। তবুও থামানো যায়নি পিএসভির জয়রথকে।
দেশের জার্সি পরে হল্যান্ডের দলটির বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন প্রাক্তন তারকা সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। পিএসভি-র সঙ্গে টক্করের ছবি এখনও তাঁর স্মৃতিতে জীবন্ত। ডায়রির ছেঁড়া পাতা উল্টে সত্যজিৎ বলছিলেন, “অসাধারণ দল ছিল পিএসভি। ভারতে খেলতে আসা সেরা ক্লাব ওরাই। আমাদের নাস্তানাবুদ করে দিয়েছিল। প্রথম ম্যাচে ৮-০ গোলে হেরে যাই আমরা। পরের ম্যাচটাতেও আমরা ৭-১ গোলে হেরে যাই।” ভারতের নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড ছিল বিকাশ পাঁজির হাতে। তিনিই একমাত্র গোল করেছিলেন। সেই গোল হজম করার পরে পিএসভি অন্য অবতারে ধরা দেয়। সত্যজিৎ বলছিলেন, “আমরা এক গোল দিতেই ওরা আরও তেড়েফুঁড়ে খেলা শুরু করে দিল। আমরা পিএসভি-র জালে বল জড়াতেই ওরা বল সেন্টারে এনে পাঁচ টাচে গোল করে গেল। আমাদের বল ছুঁতেই দেয়নি।’’
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আইএফএ একাদশের হয়ে খেলেছিলেন প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার কৃষ্ণেন্দু রায়। এত দিন বাদে সেই ম্যাচের স্মৃতি ফিকে হয়ে গিয়েছে তাঁর মনে। বলছিলেন, ‘‘ওদের দলটা ভাল ছিল। একাধিক বিশ্বকাপার খেলতে এসেছিলেন। এর বেশি কিছু মনে পড়ছে না।’’ যুবভারতীর ম্যাচে এরউইন কোম্যান এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খেলা ঘুরিয়ে দিচ্ছিলেন। সেই তিনিই গুয়াহাটিতে সুনীল ছেত্রীকে থামানোর পরিকল্পনা করবেন। কোম্যানের কোচিংয়ের সঙ্গে তাঁর দলের দিকেও সবাই তাকিয়ে থাকবেন। সুনীলদের গ্রুপে রয়েছে বাংলাদেশ, ওমান, কাতার, আফগানিস্তান। ভারতের কাজ কতটা কঠিন? সত্যজিৎ বলছেন, ‘‘ওমান খুব শক্তিশালী দল। ভারতকে মরিয়া হয়ে লড়তে হবে।’’ কৃষ্ণেন্দু বলছেন, ‘‘কঠিন ম্যাচ। সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহই নেই। তবে এই ধরনের ম্যাচ যত খেলবে, ততই ভারতের জন্য ভাল।’’