নতুন বছরের আগে দেখা যাবে না ক্রেসপি, ভিপি সুহেরদের দ্বৈরথ।—ফাইল চিত্র।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের ধাক্কা লাগল এ বার কলকাতা ফুটবলেও। যার জেরে বন্ধ হয়ে গেল রবিবার আই লিগের প্রথম ডার্বি। খেলা কবে হবে, তা অবশ্য সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন জানাতে পারেনি। সূত্রের খবর, নতুন বছরে জানুয়ারির শেষ দিকে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস বনাম কিবু ভিকুনার দেখা হতে পারে যুবভারতীতে। তবে যা পরিস্থিতি, তাতে দু’টি দলেরই দিন পনেরো আর খেলা নেই।
লোকসভায় ‘ক্যাব’ পাস হওয়ার পরে রাজ্য জুড়ে মিটিং-মিছিল-অবরোধ চলছে। তাই বুধবার স্টেডিয়াম কমিটির সভায় বিধাননগর পুলিশের পক্ষ থেকে ম্যাচ সংগঠক মোহনবাগান কর্তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, যুবভারতীর সব গ্যালারির টিকিট বিক্রি করা যাবে না। গ্যালারির একটা বড় অংশ ফাঁকা রাখতে হবে। কারণ ৬৫ হাজার দর্শকের নিরাপত্তার জন্য যত পুলিশ দরকার, তা এই মুহূর্তে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তুলে আনা সম্ভব নয়।
এই অবস্থায় ম্যাচ করার ব্যাপারে বেঁকে বসেন সবুজ-মেরুন কর্তারা। ক্লাবের অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত একটি চিঠি পাঠান দিল্লির সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে। সঙ্গে জুড়ে দেন পুলিশের চিঠিও। তাতে তিনি লেখেন, ‘‘ডার্বি দেখার জন্য সারা বছর দু’দলের সমর্থকেরা মুখিয়ে থাকেন। পুলিশের নির্দেশ মেনে ম্যাচ করতে হলে বহু সমর্থক খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন। স্টেডিয়ামের একটা অংশ ফাঁকা থাকবে। আমরা চাই নতুন বছরের জানুয়ারিতে ডার্বি হোক।’’ এই চিঠি উদ্ধৃত করে সন্ধ্যায় ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, রবিবারের খেলা স্থগিত রাখা হচ্ছে। আই লিগের সিইও সুনন্দ ধর দিল্লি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘কবে ডার্বি হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। সূচি নিয়ে ক্লাবগুলি এবং সম্প্রচার সংস্থার সঙ্গে কথা বলার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ১৯ জানুয়ারির আগে খেলা হওয়া কঠিন।’’
এ দিকে, ইতিমধ্যেই অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। বুধবার থেকে কাউন্টারে টিকিট দেওয়ার কথা ছিল সমর্থকদের। তা না করে হঠাৎ-ই ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষিপ্ত ইস্টবেঙ্গল। ক্লাবের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, ‘‘ফেডারেশন আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই ম্যাচ বন্ধ করেছে। চিঠিতে পুলিশ নির্দিষ্ট করে কোথাও লেখেনি যে, কত দর্শক স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারবেন। শুধু তাই নয়, কেন এটা পুলিশ চাইছে তার কারণও চিঠিতে লেখা নেই। যারা এটা করলেন তারা ফুটবলের ‘কালিদাস’। ফুটবলের ক্ষতি করছেন। ম্যাচ না হলে বাংলায় যে অরাজক অবস্থা চলছে সেটা আরও বেশি করে প্রমাণিত হবে।’’ এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে ইস্টবেঙ্গল। ‘‘আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে খেলা হোক। পুলিশ ব্যবস্থা নিক,’’ বলেছেন লাল-হলুদ শীর্ষকর্তা। পাল্টা মোহনবাগান অর্থসচিব বলে দিলেন, ‘‘অর্ধেক গ্যালারি ফাঁকা রেখে খেলা হলে সেটা কি কলকাতার ফুটবলের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন হত? বাস-ট্রেন বন্ধ থাকলে আমাদের মতো ওদের সমর্থকেরাও তো খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হতেন।’’ অন্য দিকে বিধাননগর পুলিশের ডিসি (সদর) কুণাল আগরওয়াল রাতে বললেন, ‘‘আমরা ডার্বি বন্ধ করতে বলিনি। তবে দর্শকদের জন্য ম্যাচের পুরো টিকিট বিক্রি করতে বারণ করেছি। কারণ আমাদের হাতে পর্যাপ্ত পুলিশ নেই।’’ জানা গিয়েছে ম্যাচ করতে প্রায় তিন হাজারের মতো পুলিশ লাগে।
পুলিশের চিঠিকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে মোহনবাগান ম্যাচ বন্ধ করার ব্যবস্থা করলেও এর পিছনে অন্য দুটি কারণের কথা শোনা যাচ্ছে। এক) ম্যাচ সংগঠন করতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হবে। পুলিশ ২০ হাজার টিকিটের বেশি না বিক্রি করতে দিলে আর্থিক ক্ষতি হবে। দুই) দলের নির্ভরযোগ্য মিডিয়ো জুলেন কলিনাস চোটের জন্য মাঠের বাইরে। নতুন আসা বিদেশি স্ট্রাইকার সেনেগালের পাপা বাবাকার দিয়াওয়ারকেও পাওয়া যাবে পয়লা জানুয়ারি থেকে। রবিবার খেলা হলে তাঁদের কাউকেই পেতেন না কিবু ভিকুনা।