কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হল এফআইআর। ছবি: পিটিআই
রাজধানীতে প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল দিল্লি পুলিশ। রবিবার সকালে তাঁদের আটক করা হয়। রাতের দিকে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বড়খাম্বা থানায়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ছ’টি ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করা হয়েছে।
বিনেশ ফোগট, সাক্ষী মালিক এবং বজরং পুনিয়াদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির যে যে ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে তা হল ১৪৭, ১৪৯, ১৮৬, ১৮৮, ৩৩২, ৩৫৩। কুস্তিগিরদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরেই পুলিশ প্রতিবাদের জায়গা পরিষ্কার করে দেয়। কম্বল, লেপ, কুলার, ফ্যান, ত্রিপল সবই সরিয়ে নেওয়া হয়। শোনা গিয়েছে, কুস্তিগিরদের আর প্রতিবাদ করতে ওই জায়গায় ফিরতে দেওয়া হবে না।
দিল্লি পুলিশের আইনশৃঙ্খলা বিভাগের স্পেশ্যাল কমিশনার দীপেন্দ্র পাঠক জানিয়েছেন, পুলিশের তরফে বার বার অনুরোধ করা হলেও কুস্তিগিররা সরেননি। যে পুলিশরা তাঁদের আটকাতে গিয়েছিলেন তাঁদের ধাক্কা দেন। তিনিই জানিয়েছেন, প্রতিবাদীদের আর যন্তর মন্তরের সামনে ফিরতে দেওয়া হবে না।
তবে সাক্ষী মালিক বলেছেন, “আমাদের প্রতিবাদ এখনও শেষ হয়নি। পুলিশ আমাদের ছেড়ে দিলে আবার ওই জায়গাতেই ফিরে প্রতিবাদ শুরু করব। এই দেশে কোনও একনায়কতন্ত্র সহ্য করা হবে না। কোনও দিন আমরা ভাবিনি রাস্তায় নেমে এ ভাবে আন্দোলন করতে হবে। আমাদের দেশের মেয়েরা অনেক শক্তিশালী। যদি তারা বিদেশের মাটিতে গিয়ে পদক জিততে পারে, তা হলে দেশের মাটিতে লড়াইয়েও হারবে না।”
রবিবার নতুন সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন কুস্তিগিরেরা। তার আগে যন্তরমন্তরে পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের। তার জেরে আটক হন বিনেশ, সাক্ষী, বজরং-সহ কয়েক জন কুস্তিগির। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহকে গ্রেফতারের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে ধর্না দিচ্ছেন তাঁরা। কুস্তিগিরদের আটকের ঘটনার নিন্দা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি টুইটারে লেখেন, ‘‘দিল্লি পুলিশ যে ভাবে সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগত এবং অন্য কুস্তিগিরদের টানাহেঁচড়া করল, তাকে ধিক্কার জানাই। আমাদের চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে এই ব্যবহার লজ্জাজনক। গণতন্ত্রের ভিত্তি সহিষ্ণুতা। স্বৈরাচার অসহিষ্ণুতার জন্ম দেয়। আমি আটকদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। কুস্তিগিরদের পাশে রয়েছি।’’
ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। যদিও কেন্দ্রীয় শাসকদল বিজেপির সাংসদ ব্রিজভূষণ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁকে সরানোর দাবিতে গত মাস থেকে দিল্লির যন্তর মন্তরে আন্দোলন করে চলেছেন ক্রীড়াবিদেরা। তাঁরা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, রবিবার উদ্বোধনের দিন নতুন সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাবেন। ‘মহিলা মহাপঞ্চায়েত’ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিলেন। রবিবার সকালে কুস্তিগির বিনেশ অভিযোগ করেন, প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের সমর্থনে জড়ো হওয়া মানুষ জনকে আটক করছে পুলিশ। টুইটারে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে তিনি জানান, দেশ মনে রাখবে, নতুন সংসদ ভবন যখন উদ্বোধন হচ্ছিল, তখন কী ভাবে অধিকারের জন্য মহিলাদের লড়াই দমন করা হয়েছিল।
বিক্ষোভ মোকাবিলায় আগে থেকে প্রস্তুত ছিল পুলিশও। গোটা দিল্লি কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়। জায়গায় জায়গায় ছিল ব্যারিকেড। গাড়ি আটকে চেকিং চলছিল। মধ্য দিল্লিতে মোতায়েন ছিলেন হাজার হাজার পুলিশকর্মী। দিল্লি মেট্রোর কেন্দ্রীয় সচিবালয় এবং উদ্যোগ ভবন স্টেশনের সমস্ত প্রবেশ এবং প্রস্থান পথ বন্ধ রাখা হয়েছিল। কুস্তিগিরদের কর্মসূচির অনুমোদন আগেই খারিজ করেছিল পুলিশ। তার পরেও কুস্তিগিরেরা নতুন সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে গোল বাধে। দীপেন্দ্র বলেন, ‘‘আমরা ক্রীড়াবিদদের সম্মান করি। কিন্তু নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনে কোনও বিশৃঙ্খলা হতে দিতে পারি না।’’
অন্য দিকে, কুস্তিগিরদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইত। তিনি ঘোষণা করেছেন, দিল্লির গাজিপুর সীমান্তে জড়ো হচ্ছেন হাজার হাজার কৃষক। তার পর বিভিন্ন সীমানা দিয়ে দিল্লিতে প্রবেশের চেষ্টা করবেন। পুলিশ আগেভাগে প্রস্তুত রয়েছে। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সীমানায় কড়া প্রহরা থাকছে। প্রত্যেকটি গাড়ি চেক করে প্রবেশ করানো হবে। দিল্লি পুরসভাকে অস্থায়ী জেল তৈরির জন্য অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। পুরনো বাওয়ানায় পুরসভা চালিত প্রাথমিক স্কুলে সেই জেল তৈরি করতে চাইছে পুলিশ। সে জন্য পুরসভার অনুমতি চেয়েছে।