FIFA World Cup Qatar 2022

গতির ঝড় তুলে বাজিমাত মেসিদের

গত বিশ্বকাপের চেয়ে রক্ষণ অনেক বেশি মজবুত হয়েছে। এই ব্যাপারে প্রশংসা প্রাপ্য কোচ স্কালোনির। ও বুঝেছে, ইউরোপীয় দলের সঙ্গে শরীরী ফুটবলে পাল্লা দিতে হলে নিজের ঘর আগে সুরক্ষিত রাখা দরকার।

Advertisement

মজিদ বাসকর

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:২৪
Share:

অপ্রতিরোধ্য: গোল করলেন, করালেন। তাঁর দাপটেই ধরাশায়ী ক্রোয়েশিয়া। ফাইনালে আর্জেন্টিনা। দলের প্রথম গোলের পরে মেসি। মঙ্গলবার। রয়টার্স

মেসি, মেসি এবং মেসি। মঙ্গলবার রাতের ক্ষুধার্ত আর্জেন্টিনা ও লিয়োর ফুটবল দেখার পরে বিশ্বাস করছি, এ বার কাপ উঠতে চলেছে ওর হাতেই। প্রতিপক্ষ হিসেবে রবিবার ফ্রান্স থাকুক বা মরক্কো, এই আর্জেন্টিনার রাশ টেনে ধরা ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠছে।

Advertisement

আর যার দিকে তাকিয়ে বিশ্ব, সেই আর্জেন্টিনীয় অধিনায়ক ফের উপহার দিল মোহময়ী ফুটবল। পেনাল্টি থেকে নিজে গোল করল। আর ৬৯ মিনিটে এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার গভার্দিয়লকে বাঁ দিক থেকে পায়ের জাদুতে বোকা বানিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে বল সাজিয়ে দিল আলভারেসকে। ওই জায়গা থেকে গোল না করা হত অপরাধ। ও সেটা করেনি। ২০১৪ সালের পরে আবার মেসির সামনে বিশ্বকাপের হাতছানি।

সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচে হারের পরে অনেকের মতো আমিও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। যে দলটার মধ্যে এত বৈচিত্র এবং একজোট হয়ে লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে, তাদের হার আমাকেও ধাক্কা দিয়েছিল।

Advertisement

কিন্তু তার পর থেকে মঙ্গলবারের সেমিফাইনাল, আর্জেন্টিনার খেলায় এক দারুণ পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। গত বিশ্বকাপের চেয়ে রক্ষণ অনেক বেশি মজবুত হয়েছে। এই ব্যাপারে প্রশংসা প্রাপ্য কোচ স্কালোনির। ও বুঝেছে, ইউরোপীয় দলের সঙ্গে শরীরী ফুটবলে পাল্লা দিতে হলে নিজের ঘর আগে সুরক্ষিত রাখা দরকার। সেই কাজটা সুন্দর ভাবে পালন করছে মোলিনা, রোমেরো, ওটামেন্ডিরা। এর মধ্যে মোলিনার দ্রুত ওভারল্যাপে ওঠা চোখে পড়ার মতো। এখন তো ওভারল্যাপ ব্যাপারটা ফুটবল থেকে প্রায় হারিয়েই গিয়েছে।

দ্বিতীয় পরিবর্তন হল, আর্জেন্টিনার এই দলটা দ্রুত নিজেদের মধ্যে পাস খেলে যে ভাবে প্রতিপক্ষের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, সেটা সামাল দেওয়া মোটেও সহজ নয়। সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে পর্যন্ত দলটা ৩২৮৯টা পাস খেলেছে নিজেদের মধ্যে। অর্থাৎ এই বিষয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে স্কালোনি। তার সুফল মিলল।

৩৪ মিনিটে অনেকটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে আলভারেস গতিতে ঢুকে ফেলে ক্রোয়েশিয়ার পেনাল্টি বক্সের মধ্যে। এই দ্রুত আক্রমণটাই বুঝতে পারেনি লভরেন বা গভার্দিয়ল। এই বিশ্বকাপে টাইব্রেকার আটকে নায়ক হয়ে ওঠা লিভাকোভিচ বাধ্য হল আলভারেসকে ট্রিপ করতে। আমি মনে করি, পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্ক হতে পারে না। এর পরে যে শট নিল মেসি, ওটা কোনও গোলকিপারের পক্ষেই বাঁচানো সম্ভব নয়। দ্বিতীয় পোস্টের উপর দিয়ে বল জড়িয়ে গেল।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে আলভারেসের প্রথম গোলও পরিকল্পিত আক্রমণ থেকেই এল। নিজেদের মাঝমাঠের একটু উপর থেকে বল ধরে আলভারেস গতিতে হারাল ক্রোয়েশিয়া রক্ষণকে। চূড়ান্ত মুহূর্তে ওর নিয়ন্ত্রণ থেকে বল বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ডিফেন্ডার সোসার বুকে বল লেগে গিয়ে পড়ল ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ২২ বছরের ফরোয়ার্ডের পায়ে। গোল করতে ও আর ভুল করেনি। প্রথমার্ধের ওই দুটো গোলই ক্রোয়েশিয়াকে ম্যাচ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

চার বছর আগে গ্রুপ পর্বে ০-৩ গোলে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হার নিশ্চয়ই ভোলেনি স্কালোনি। সেই তথ্য মাথায় রেখে দলটাই সাজাল ৪-৪-২ ছকে। সামনে মেসি ও আলভারেসকে রেখে মাঝমাঠ এবং রক্ষণের মধ্যে সংযোগের সেতু তৈরি করে স্কালোনি। কারণটা স্পষ্ট। প্রতিপক্ষকে মিনিট পনেরো বুঝে নিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে খোলস ছেড়ে। সেটাই হয়েছে।

ওই ১৫ মিনিট মদ্রিচদের দখলে বল ছিল ৫৩ শতাংশ। কিন্তু কোচ দালিচ বুঝতে পারেনি, ব্রাজিলের বিরুদ্ধে মাঝমাঠে যে ফাঁকা জায়গা পেয়ে পেরিসিচ বা কোভিচিচ বারবার চাপে ফেলে দিচ্ছিল তিতের রক্ষণকে, সেটা আর্জেন্টিনারক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। ব্রাজিল এ বার শুরু থেকে বেশি নির্ভর করেছে ভিনিসিয়াস, রিচার্লিসন বা নেমারের ব্যক্তিগত দক্ষতার উপরে। যে মুহূর্তে সেই তত্ত্ব ব্যর্থ হল, নেমে এসেছে বিপর্যয়। যা কাপের অন্যতম সেরা দাবিদারদের ফিরিয়ে দিয়েছে শূন্য হাতে।

আর্জেন্টিনার দর্শনটা আবার সম্পূর্ণ উল্টো। দল হিসেবে খেলো, প্রতিপক্ষ তোমার দুর্গে দাঁতও ফোটাতে পারবে না। মদ্রিচরা যতবার আক্রমণ তৈরি করেছে, দেখা গেল আর্জেন্টিনা পেনাল্টি বক্সের উপরে কমপক্ষে সাত জন ফুটবলার দাঁড়িয়ে। তার চেয়েও বড় ব্যাপার, ক্রোয়েশিয়া দলে কোনও স্ট্রাইকারই নেই। পুরো ম্যাচে প্রচুর দৌড়লাম, অনেক সুযোগও তৈরি হল। কিন্তু গোল করার লোক না থাকলে সব পরিশ্রমই তো বৃথা।

মদ্রিচরা বোধহয় এই বড় শিক্ষাটাই নিয়ে গেল কাতার থেকে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement