সাম্বা-ফাঙ্ক যুগলবন্দিতে স্পেন-বধ ব্রাজিলের

স্টেডিয়ামের গ্যালারির চেয়ারের রং হলুদ। ২৯ হাজার দর্শকদের অধিকাংশের গায়েই হলুদ রংয়ের জার্সি। ওয়ার্ম আপ করার জন্য মাঠে নেমেই চমকে গিয়েছিল পুরো ব্রাজিল দল।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

কোচি শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৫:২৮
Share:

উৎসব: কোচিতে স্পেনের বিরুদ্ধে গোল করার পরে অভিনব নাচ ব্রাজিল দলের। অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপে। ছবি: গেটি ইমেজেস

স্পেন ১ : ব্রাজিল ২

Advertisement

সাম্বার ছন্দে তিকিতাকা স্তব্ধ!

কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম নয়। শনিবার অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ব্রাজিল যেন নিজেদের দেশের মাঠেই খেলতে নেমেছিল!

Advertisement

স্টেডিয়ামের গ্যালারির চেয়ারের রং হলুদ। ২৯ হাজার দর্শকদের অধিকাংশের গায়েই হলুদ রংয়ের জার্সি। ওয়ার্ম আপ করার জন্য মাঠে নেমেই চমকে গিয়েছিল পুরো ব্রাজিল দল। অথচ ম্যাচ শুরু হওয়ার পরেই ছন্দপতন! হলুদ মঞ্চে শুরু লাল ঝড়ের তাণ্ডব।

স্পেনের ফুটবলাররা নিজেদের মধ্যে দশ-বারোটা পাস খেলতে খেলতে আক্রমণে উঠছে। নেতৃত্বে ফেরান তোরেস ও মহম্মদ মুখলিস। স্প্যানিশ ফুটবলে ভবিষ্যতের আন্দ্রে ইনিয়েস্তা-জাভি হার্নান্দেজ! এই চাপ সামলাতে না পেরে ম্যাচের পাঁচ মিনিটে নিজের গোলেই বল ঢুকিয়ে দেয় ব্রাজিলের ডিফেন্ডার ওয়েসলি।

তিকিতাকা ১

সাম্বা ০

দু’বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে বিপর্যয়ের আতঙ্ক। সে বারও প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে হেরে আত্মবিশ্বাসটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ব্রাজিল ফুটবলারদের। কোনও মতে পৌঁছেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে ০-৩ হেরে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়েই চিলে থেকে দেশে ফিরেছিল ব্রাজিলের ফুটবলাররা। তখনও কোচ ছিলেন কার্লোস আমাদেউ-ই।

আরও পড়ুন: প্রথম ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে ত্রুটি শোধরাতে নেমে পড়ল টিম ইন্ডিয়া

তবে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগেই ব্রাজিল কোচ জানিয়েছিলেন, স্পেনের স্ট্র্যাটেজি তাঁদের কাছে অজানা নয়। প্রতিপক্ষকে হারানোর জন্য তৈরি। আর অনুশীলনের সময় পাওলো হেনরিক সাম্পাইও ফিলফো (পাওলিনহো), লিঙ্কন ডস স্যান্টোস ও বের্নার সৌজা ডি’সিলভা-দের কার্লোস বলেছিলেন, স্পেনের ফুটবলারদের বল ধরতে দেওয়া চলবে না। তোমরা নিজেদের মধ্যে পাস খেলো। শনিবার স্পেনের বিরুদ্ধে এই ত্রয়ীর দাপটেই ঘুরে দাঁড়াল ব্রাজিল। ২৬ মিনিটে লিঙ্কনকে দিয়ে গোল করালেন ব্রেনের। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে মার্কোস আন্তোনিও-র পাস থেকে গোল করে ব্রাজিলকে এগিয়ে দিলেন পাওলিনহো। শুধু তাই নয়। ব্রাজিল ত্রয়ী পুরো ম্যাচটাকেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছিল। যখন পাওলিনহো ও লিঙ্কন আক্রমণে উঠছে, তখন ব্রেনের নেমে আসছে মাঝমাঠে। আবার যখন ব্রেনের আক্রমণে উঠছে, তখন নামছে লিঙ্কন। নিজেদের মধ্যে এত দ্রুত তারা জায়গা পরিবর্তন করছিল, স্পেনের ডিফেন্ডাররা বুঝতেই পারছিল না।

২০০২ সালে ব্রাজিলের শেষ বার বিশ্বকাপ জয়ের সময় পাওলিনহো, ব্রেনের ও লিঙ্কনের বয়স ছিল মাত্র দুই। সেই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের নায়ক ছিলেন রোনাল্ডো, রিভাল্ডো ও রোনাল্ডিনহো। দেড় দশক পরে এই নতুন তিন তারার খেলায় যেন ‘ট্রিপল রো’-র ছায়া!

পাউলিনহো খেলে ভাস্কো দা গামায়। ফ্ল্যামেঙ্গোর ফুটবলার লিঙ্কন। আর ব্রেনের খেলে পামেইরাসে। ঘরোয়া লিগে তারা একে অপরের শত্রু। কিন্তু জাতীয় দলে ছবিটা একেবারেই উল্টো। তিন জনের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব। সতীর্থরা মজা করে বলে, ‘ট্রিপল রো’-র পরে এ বার ‘পিবিএল’ যুগ শুরু হল ব্রাজিল ফুটবলে!

পাওলিনহো-দের উত্থানের দিনে হতাশ করল সেই আবেল রুইস। ব্রাজিলের ভিনিসিয়াস জুনিয়র ছিটকে যাওয়ার পর এই বিশ্বকাপে তাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল ফুটবলপ্রেমীদের। প্রথম ম্যাচে অন্তত মন ভরাতে ব্যর্থ রুইস। একাধিক গোল নষ্ট করল স্পেন অধিনায়ক। অথচ চোদ্দো বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালের বদলা নিতে আবেল-এর উপরেই নির্ভর করেছিল স্পেন।

তবে ব্রাজিল মানে এখন শুধুই সাম্বা নয়। ফাঙ্ক ড্যান্স-ও!

স্পেনের বিরুদ্ধে গোল করেই গ্যালারির সামনে চলে গিয়েছিল লিঙ্কন। তারপর শুরু হল নাচ।

ষাটের দশকে আফ্রো-আমেরিকানরা এই নাচের আবিষ্কর্তা। জ্যাজ, ব্লু, হিপহপের সঙ্গে আফ্রিকার লোকসংগীতের মিশ্রন। ব্রাজিলেও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই নাচ। আর শনিবার কোচির দর্শকদের মাতিয়ে দিলেন লিঙ্কন।

সাম্বা ফিরল পাউলিনহো-র গোলের পর। বদলে গেল স্কোরলাইনও।

সাম্বা ২

তিকিতাকা ১

পাওলিনহো-ও গোল করে দৌড়ে যায় গ্যালারির সামনে। নাচ শেষ করে বুকের বাঁ দিকে চাপড় মারতে মারতে যেন বলছিল— আমরাই বিশ্বফুটবলের শাসক!

ব্রাজিল: গ্যাব্রিয়েল ব্রাজাও, ওয়েসলি, ভিতাও, লুকাস হেল্টার (মাতেউস), ভিক্টর ববসিন (রদরিগো গুথ), ওয়েভারসন, পাওলিনহো, মার্কোস আন্তোনিও, বের্নার সৌজা ডি’সিলভা ও লিঙ্কন ডস স্যান্টোস।

স্পেন: ফার্নান্দেজ আলভারো, মাতেউ খাউমে (ভিক্টর পেরেরা), মিরান্দা খুয়ান, সের্জিও গোমেজ(পেদ্রো), তোরেস ফেরান, মুখলিস মহম্মদ, আবেল রুইস, গার্সিয়া আলভারো (হোসে লারা), গার্সিয়া এরিক ও বিতিয়া কার্লোস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement