আগমন: অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে রবিবার ব্রাজিলের সামনে জার্মান চ্যালেঞ্জ। সেই যুদ্ধে নামতে কলকাতায় পৌঁছে গেল ব্রাজিল দল। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
দীপাবলির বিকেলে কলকাতা মাতোয়ারা সাম্বার ছন্দে!
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩.২৫। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে একে একে বেরিয়ে এল পাওলো হেনরিক সাম্পাইও ফিলফো (পাওলিনহো), লিঙ্কন ডস স্যান্টোস-রা। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে হন্ডুরাস-বধ করে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পরে বুধবার গভীররাত পর্যন্ত ব্রাজিলের টিম হোটেলে উৎসব চলেছিল। কলকাতার উড়ান ধরার জন্য ভোর চারটেয় বেরতে হয়েছে। তার উপর দীর্ঘ বিমানযাত্রা। যে কারণে এ দিন সন্ধ্যায় অনুশীলনের পরিকল্পনাও বাতিল করে দেন ব্রাজিল কোচ কার্লোস আমাদেউ।
কিন্তু রাজারহাটের টিম হোটেলে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই বদলে গেল ছবিটা। লবিতে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ‘থিম সং’ বাজছিল। ক্লান্তি ভুলে সাম্বায় মেতে উঠল মার্কোস আন্তোনিও, ব্রেনের সৌজা-রা! সতীর্থদের নাচ শেষ হওয়ার পরেই কেক কাটল ভিক্টর ববসিন। কোচ কার্লোস আমেদেউ দাঁড়িয়ে ছিলেন একটু দূরে। তাঁকে কেক দিয়ে এল ববসিন। রোনাল্ডিনহোর ক্লাব গ্রেমিও থেকে উত্থান তার। ব্রাজিল দলের মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা সের্জিও বুস্কেৎসের ভক্ত ববসিন।
ফুরফুরে মেজাজে থাকা ব্রাজিল দলকে দেখে কিছুটা বিস্মিতই হয়ে পড়েছিলেন একই হোটেলে থাকা জার্মানির সাপোর্ট স্টাফ। ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানি সাত গোলে বিধ্বস্ত করেছিল পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। সেই যন্ত্রণা এখনও কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে ব্রাজিল ভক্তদের মনে। রবিবার অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ ফের জার্মানি।
ব্রাজিল কোচ কলকাতায় পা দিয়েই অবশ্য বলে দিলেন, ‘‘তিন বছর আগের বিপর্যয় নিয়ে বেশি ভাবতে চাই না। কারণ, অলিম্পিক্সে ওদের হারিয়েই প্রথমবার ফুটবলে সোনা জিতেছি আমরা। সেটাই ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করবে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘সিনিয়র দলের কেউ এখানে নেই। এমনকী সাপোর্ট স্টাফও আলাদা। তাই তিন বছর আগে বিশ্বকাপে হারের প্রভাব এই দলটার মধ্যে পড়বে বলে মনে হয় না।’’
প্রস্তুতি: বৃহস্পতিবার কলকাতায় পৌঁছেই টিম হোটেলের জিমে ঢুকে পড়লেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। নিজস্ব চিত্র
কলকাতায় ব্রাজিল দলকে নিয়ে উন্মাদনা দেখে মুগ্ধ কার্লোস। জানালেন, কলকাতাতেই অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। বললেন, ‘‘মুম্বইয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ড্রয়ের পরে কলকাতায় এসেছিলাম। এখানেই শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করি।’’ কেন? ‘‘দুর্গাপুজোর কারণেই আমরা বাধ্য হয়ে মুম্বইয়ে প্র্যাকটিস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শেষ মুহূর্তে।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘ব্রাজিলকে নিয়ে কলকাতার মানুষের আবেগের কথা শুনেছি। ভাবতে পারিনি, এখানেও আমাদের এত সমর্থক থাকবেন।’’
মাঠে না নামলেও জার্মানি-বধের প্রস্তুতি এ দিন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে ব্রাজিল শিবিরে। টিম হোটেলের জিমেই হাল্কা ফিটনেস ট্রেনিং করে ফুটবলাররা। হন্ডুরাসের বিরুদ্ধে প্রথম দলে খেলা ফুটবলারদের জন্য এ দিন ‘অপশনাল’ প্র্যাকটিস ছিল। কিন্তু পাওলিনহো-রা বিশ্রাম না নিয়ে জিমে চলে যান। শুধু তাই নয়। ম্যাচের আগে ফুটবলাদের ফিট রাখার জন্য খাদ্যতালিকাও প্রস্তুত। তবে হোটেলের খাবার ছুঁয়েও দেখে না ফুটবলাররা। প্রাতঃরাশ থেকে নৈশভোজ— সবই তৈরি করেন দলের শেফ। পাওলিনহো-রা মধ্যাহ্ন ও নৈশভোজ সারছে ‘রাইস অ্যান্ড বিনস’ দিয়ে। সঙ্গে থাকছে বিভিন্ন ধরনের স্যালাড। আর রাত আটটায় ম্যাচ থাকলে বিকেলে ফুটবলারদের মেনুতে থাকে পাস্তা ও গ্রিলড চিকেন।
কলকাতায় ভেটকি মাছ খেয়ে অভিভূত হয়ে পড়েছিল ইংল্যান্ডে দলের সদস্যরা। ব্রাজিলীয়দেরও মাছ খুব প্রিয়। কিন্তু সবই সামুদ্রিক মাছ। ব্রাজিল দলের এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমরা এখানে অনূর্ধ্ব বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই এসেছি। তাই কোনও রকম ঝুকি নিতে চাই না। শুনেছি, ভারতীয় খাবার খুব সুস্বাদু। তবে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরেই ভারতীয় খাবারের স্বাদ নেব।’’
ব্রাজিল শিবির ফুরফুরে মেজাজের মধ্যেও সামান্য উদ্বেগ মিডফিল্ডার ভিনিতো-কে নিয়ে। গোয়ায় নিজারের বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচ মাথায় চোট পেয়েছিল ভিনিতো। ফিফার নিয়মে মাথায় আঘাত লাগলে আট দিন বিশ্রামের পরেই ম্যাচ খেলার অনুমতি দেওযা হয় সেই ফুটবলারকে। ফলে জার্মানির বিরুদ্ধেও তাকে পাওয়া যাবে না।