চিলিচের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রস্তুতিতে মগ্ন ফেডেরার। ছবি: রয়টার্স
শেষ বার কবে রজার ফেডেরার গোটা টুর্নামেন্টে কোনও সেট না হারিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছে?
শুক্রবার সেমিফাইনালের পরেই নিশ্চয়ই অনেকেই হয়তো ইন্টারনেটে খুঁজতে শুরু করে দিয়েছিলেন তথ্যটা। সত্যি, বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামে ফেডেরারকে অনেকেই হয়তো এগিয়ে রেখেছিল ট্রফি জেতার দৌড়ে, কিন্তু এ ভাবে কোনও সেট না হারিয়ে ফাইনালে উঠবে ও, হয়তো অনেকেই ভাবেনি।
অস্ট্রেলিয়া ওপেনের ফাইনালের দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেখে বলতে পারি দু’জন সেরা ফর্মে থাকা খেলোয়াড় ট্রফি জেতার লড়াইয়ে নামছে রবিবার। এক জনের সামনে দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম আর এক জনের সামনে ২০ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার সুযোগ। কে কতটা এগিয়ে থাকবে ফাইনালে? অবশ্যই ফেডেরার এগিয়ে। তবে আমি ৬০-৪০ এগিয়ে রাখব ফেডেরারকে। তার কারণটা বলছি।
রাফায়েল নাদালের বিরুদ্ধে চিলিচের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা আমি দেখেছি। নাদালের হয়তো চোট ছিল, কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ সেটে চিলিচ দুরন্ত খেলেছে। আমার তো মনে হয় নাদালের চোট না থাকলেও চিলিচই জিতত ওই ম্যাচটায়। সেমিফাইনালে তো ও স্রেফ উড়িয়ে দিল ব্রিটেনের কাইল এডমুন্ডকে। তাই বলছি ফাইনালে যদি ও শারীরিক ভাবে পুরো ফিট থাকতে পারে আর শুরুতেই ছন্দ পেয়ে যায় তা হলে ফেডেরারকে বিপদে ফেলে দিতে পারে। তা ছাড়া এটাও কিন্তু ভুললে চলবে না, ২০১৪ যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে সেমিফাইনালে কিন্তু ও ফেডেরারকে হারিয়েছিল। চার বছর আগে ওটাই ওর প্রথম এবং এক মাত্র গ্র্যান্ড স্ল্যাম।
গত বছর উইম্বলডনে অবশ্য ফেডেরার ফাইনালে স্ট্রেট সেটে চিলিচকে উড়িয়ে দিয়েছিল। তবে সেই ম্যাচে কিন্তু পুরো ফিট ছিল না চিলিচ। ওর পায়ে ফোঁড়ার সমস্যা ছিল। ঠিক যে সমস্যায় শুক্রবার ফেডেরারের সেমিফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী চুং ম্যাচ ছেড়ে দিল। সে রকম সমস্যায় কিন্তু এ বার নেই চিলিচ। ফাইনালে তাই ও ফেডেরারের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। সব চেয়ে বড় কথা ফেডেরার যে ভাবে ম্যাচে পুরোপুরি নিয়য়ন্ত্রণ রেখে খেলতে পছন্দ করে, তাতে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা চিলিচের আছে।
অবশ্য ফাইনালে ছ’ফুট ছ’ইঞ্চি লম্বা চিলিচের প্রতিদ্বন্দ্বী একেবারে অন্য রূপে হাজির। এমন এক জন, গোটা টুর্নামেন্টে যার খেলায় কোনও খুঁত পাওয়া যায়নি। আগাগোড়া ছন্দে, প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলে গিয়েছে ফেডেরার। সেমিফাইনালে হয়তো কোরিয়ার সুং হেয়ানকে চোটের জন্য দ্বিতীয় সেটেই সরে দাঁড়াতে হল। তবে ও পুরো ম্যাচ খেললেও ফেডেরার স্ট্রেট সেটেই জিতত। এ রকমই দাপট দেখাচ্ছে মেলবোর্নে ৩৬ বছর বয়সি চিরতরুণ খেলোয়াড়। যত দিন যাচ্ছে ততই যেন ফেডেরারের খেলা আরও ধারালো হয়ে উঠছে।
ফেডেরারের বিরুদ্ধে ফাইনাল নিয়ে চিলিচ শুনলাম বলেছে যে আক্রমণের জবাব আক্রমণ করে দিতে চায়। যে স্ট্র্যাটেজিতে চিলিচের সার্ভিস একটা বড় অস্ত্র হতে পারে ফাইনালে। ওর সার্ভিসের গতি ফেডেরারের চেয়ে বেশি। তবে ফেডেরারের সার্ভিসটাও কিন্তু কম বিপজ্জনক নয়। ফেডেরারের সার্ভিসে সুইং অনেক বেশি, আমাদের ভুবনেশ্বর কুমারের সুইং বোলিংয়ের মতো ওর সার্ভিসটা কখনও বাঁ-দিকে কখনও ডান দিতে বাঁক নেয়। আবার কখনও স্লাইস, কখনও ফ্ল্যাট সার্ভিস করে প্রতিপক্ষকে ধন্দে ফেলে দিতে ফে়ডেরারের জুড়ি নেই।
তাই চিলিচের কথা মাথায় রেখেও মনে হচ্ছে, রবিবার রড লেভার এরিনায় এমন একটা ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে টেনিসপ্রেমীরা, যেটা দু’বছর আগেও অনেকেই ভাবতে পারেনি— রজার ফেডেরারের হাতে ২০ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম।