প্রথম একদিনের ম্যাচে ৩৪৭ তুলেও হেরে গিয়েছে ভারত। বিরাট কোহালির দল প্রায় সাড়ে তিনশো রানের পুঁজি নিয়েও নিউজিল্যান্ডকে থামাতে পারেনি বুধবার। শনিবার অকল্যান্ডে তাই অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হবে টিম ইন্ডিয়াকে। তার মধ্যে ভারতের যেমন রয়েছে প্রথম এগারোর কম্বিনেশন, তেমনই রয়েছে ইডেন পার্কের ছোট বাউন্ডারিও।
বুধবার রান তাড়ার সময় কিউয়ি ব্যাটসম্যানরা স্পিনের বিরুদ্ধে জোর দিয়েছিলেন সুইপে। চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবকে যেমন বেছে নিয়েছিলেন টম লাথাম। নিউজিল্যান্ড অধিনায়কের সুইপের সামনে অসহায় দেখিয়েছিল কুলদীপকে। শুধু লাথাম নন, রস টেলরও সুইপে ওস্তাদ। আর দুই ব্যাটসম্যান কার্যত সুইপ মেরে মেরেই ছিনিয়ে নিয়েছিলেন প্রথম একদিনের ম্যাচ।
পরিসংখ্যান বলছে, ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে গত তিন বছরে টি-টোয়েন্টি ও একদিনের ম্যাচে অন্য দলগুলোর তুলনায় সুইপে সবচেয়ে বেশি রান করেছে নিউজিল্যান্ড। এই সময়ের মধ্যে সীমিত ওভারের এই দুই ফরম্যাটে ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে সুইপে ১৬৮ রান করেছে ব্ল্যাক ক্যাপস ব্যাটসম্যানরা। পড়েছে আট উইকেট। তার পর রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অজিরা সুইপে করেছে ১৪৫ রান।
গত তিন বছরে ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে একদিনের আন্তর্জাতিক ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মিলিয়ে সুইপে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন টম লাথাম। ৭৭ বলে তিনি সুইপ শটে নিয়েছেন ৬৪ রান। আউট হয়েছেন দু’বার। স্পষ্ট যে, ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে রানের জন্য সুইপকেই কাজে লাগাচ্ছেন তিনি।
শুধু লাথাম নন, ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে গত তিন বছরে একদিনের ম্যাচ ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে সুইপে বেশি রান করার তালিকায় প্রথম পাঁচে রয়েছেন রস টেলর, হেনরি নিকলসও। এখনও পর্যন্ত ৩৯ বলে রস টেলর করেছেন ৩৩ রান। একবারও আউট হননি। আর নিকলস ২৯ বলে করেছেন ২৩ রান। তিনিও উইকেট দেননি স্পিনে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাটসম্যান সুইপ তখনই মারেন, তখন তিনি স্পিনারের হাত দেখে বুঝতে পারেন না বল কোনদিকে ঘুরবে এবং কতটা ঘুরবে। যেহেতু ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারার আত্মবিশ্বাস তাঁর নেই, তাই ক্রিজে থেকে সুইপ শট হয়ে উঠছে তাঁর রুজি-রুটি। প্রশ্ন হল, কী ভাবে ভারতীয় স্পিনাররা এর মোকাবিলা করবে।
এটা পরিষ্কার যে, শনিবার অকল্যান্ডেও ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে সুইপ অস্ত্র প্রয়োগ করবেন কিউয়ি ব্যাটসম্যানরা। স্কোয়ার লেগ ও ডিপ মিড উইকেট অঞ্চলে তাই বাড়তি ফিল্ডার রাখতেই হবে ভারতকে। না হলে কুলদীপদের ফের অসহায় দেখাবে। কিন্তু বাড়তি সুরক্ষা দিতে গেলে লং অন ফিল্ডারকে তুলে আনতে হবে বৃত্তের মধ্যে। যা করতে দেখা যায়নি বুধবার।
. আর একটা কাজও করা যায়। তা হল ভারতীয় স্পিনাররা ফুল লেংথ ডেলিভারি করতে পারেন ঘনঘন। এটাতে কুলদীপ যাদব সিদ্ধহস্ত। ব্যাটসম্যান তাঁকে বুঝতে না পেরে সুইপে জোর দিচ্ছেন দেখলে তিনি অতীতে অনেকবারই ফুল লেংথ ডেলিভারিতে বোকা বানিয়েছেন। তাই এটা একটা বিকল্প হতে পারে।
প্রশ্ন হল, কুলদীপের কি সেটা করার মতো আত্মবিশ্বাস অবশিষ্ট রয়েছে। বুধবার তিনি ৮৪ রান দিয়েছেন। দুই উইকেট নিলেও তাঁকে যে ভাবে মেরেছেন কিউয়িরা, তাতে মনোবল দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তার উপর পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিনি খেলেননি। নেই ভারতের টেস্ট স্কোয়াডেও।
তা ছাড়া, উপমহাদেশের বাইরে চহাল আট ম্যাচে নিয়েছেন ১৮ উইকেট। কুলদীপ সেখানে ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। আর, নিউজিল্যান্ডে পাঁচ ওয়ানডে ম্যাচে ২৪.৩৩ গড়ে ৯ উইকেট নিয়েছেন চহাল। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ছোট মাঠে নিয়মিত আইপিএলে বল করেন তিনি। ফলে, বাউন্ডারি এগিয়ে এলে কী ভাবে বৈচিত্রে জোর দেওয়া যায়, সেই অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে।
তা ছাড়া, উপমহাদেশের বাইরে চহাল আট ম্যাচে নিয়েছেন ১৮ উইকেট। কুলদীপ সেখানে ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। আর, নিউজিল্যান্ডে পাঁচ ওয়ানডে ম্যাচে ২৪.৩৩ গড়ে ৯ উইকেট নিয়েছেন চহাল। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ছোট মাঠে নিয়মিত আইপিএলে বল করেন তিনি। ফলে, বাউন্ডারি এগিয়ে এলে কী ভাবে বৈচিত্রে জোর দেওয়া যায়, সেই অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে।
কেদার যাদবকে বুধবার বোলিং করানো হয়নি। এটা নিয়েও থাকছে প্রশ্ন। যদি কেদারকে দিয়ে বল করানো না-ই যায়, তা হলে প্রথম এগারোয় তাঁকে খেলানো কত যুক্তিযুক্ত, শুরু হয়েছে চর্চা। বলা হচ্ছে, উপমহাদেশের বাইরে কেদারের অফস্পিন তত কার্যকরী হচ্ছে না আর। তাঁর বিরুদ্ধে সুইপ মেরে এলবিডব্লিউ হওয়ার সংখ্যাও কমেছে হালফিল।
তবে তিনি সুযোগও পেয়েছেন কম। ২০১৯ সালের মে মাস থেকে ধরলে ১৩ একদিনের ম্যাচে মাত্র ১৬ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন কেদার। যদি বল করানো না যায়, তা হলে অলরাউন্ডার শিবম দুবেকে খেলানো যেতে পারে পরিবর্তে। বা, বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফর্মে থাকা মণীশ পাণ্ডেকেও আনা যেতে পারে প্রথম এগারোয়।
বোলিংয়ে আর একটা বদলও করা যায়। শার্দুল ঠাকুর বুধবার নয় ওভারে দিয়েছেন ৮০ রান। তাই তাঁর জায়গায় নবদীপ সাইনিকে খেলানোই যায়। টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সাইনির গতি-বাউন্স সমস্যায় ফেলেছেন বিপক্ষকে। জশপ্রীত বুমরা ও মহম্মদ শামির সঙ্গে সাইনি থাকলে তীক্ষ্ণতা বাড়বেও ভারতের আক্রমণে।
ফিল্ডিং অনুসারে বোলিংয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা গিয়েছে বুধবার। রস টেলর-টম লাথামের সামনে একসময় চার ওভারে ৫৭ রান দিয়ে বসেছিলেন বোলাররা। সেই সময় কাউকে দেখেই মনে হয়নি যে উইকেট আসতে পারে। আবার রক্ষণাত্মক বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে সীমাবদ্ধতা। মাঝের ওভারগুলোয় উইকেটও আসেনি, রানের গতিকে থামানোও যায়নি।
বিরাট কোহালি যতই ফিল্ডার হিসেবে অনবদ্য থাকুন, বাকিদের ক্ষেত্রে তা সবসময় দেখা যায়নি। কুলদীপ যেমন ফেলে দিয়েছিলেন টেলরের ক্যাচ। আউটফিল্ডেও গলেছে বল। সীমানায় অনেক সময়ই ফিল্ডাররা বল আটকাতে ঠিক ভাবে ব্যবহার করেননি শরীর। ওভারথ্রোও হয়েছে। এবং ২৪ রান গিয়েছে ওয়াইডে। এ দিকে নজর দিতেই হবে।
ময়াঙ্ক আগরওয়াল ও পৃথ্বী শ, দুই নবাগত ওপেনার বুধবার ইতিবাচক ভঙ্গিতেই শুরু করেছিলেন। প্রথম উইকেটে উঠে গিয়েছিল ৫০ রান। কিন্তু পর পর ফেরেন দু’জনে। যার ফলে চাপে পড়ে মিডল অর্ডার। সেই সময় শ্রেয়স আইয়ার সময় নিয়েছিলেন ক্রিজে থিতু হওয়ার। রস টেলরের ইনিংসের দিকে তাকালে পরিষ্কার, চার নম্বর ব্যাটসম্যানকে বলের চেয়ে রান বেশি করতে হবে।