অক্লান্ত: কানপুরের গরমে কোচ কপিল পাণ্ডের নজরে কুলদীপের প্র্যাকটিস।
সরকারি ভাবে আইপিএলের দামামা বাজার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে অনুশীলন। কানপুরের ৪০ ডিগ্রি গরমে, কোচ কপিল পাণ্ডের কাছে। গত বছর কাঁদতে, কাঁদতে ইডেন ছাড়তে হয়েছিল। এ বার কি তার জবাব দেবেন কুলদীপ যাদব? রবিবার ফোনে আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের লক্ষ্যের কথা খুলে বললেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের চায়নাম্যান বোলার।
প্রশ্ন: আইপিএল তো সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে চলল। কী ভাবে তৈরি হচ্ছেন?
কুলদীপ: কানপুরে এখন প্রায় চল্লিশ ডিগ্রি গরম। এই গরমে অনুশীলন করছি অনেকটা সময়। বেশ কয়েকটা প্র্যাক্টিস ম্যাচও খেলেছি। জানি, দুবাইয়ে মারাত্মক গরম। দু’বছর আগে এশিয়া কাপ খেলার সময় তো আমরা ম্যাচ ছাড়া মাঠের দিকেও যেতাম না। হোটেলেই ওয়ার্ম আপ চলত। তবে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রাতে হওয়ায় সমস্যা কিছুটা কমবে। আর গরমের মোকাবিলায় আমি তৈরি।
প্র: প্রস্তুতিতে কীসের উপরে জোর দিচ্ছেন?
কুলদীপ: চায়নাম্যান, গুগলিটা খুব মন দিয়ে অনুশীলন করছি স্যরের (কপিল পাণ্ডে) কাছে। তা ছাড়া টপ স্পিনটার উপরে বেশি জোর দিচ্ছি। যাতে ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করা যায়। কিছু দিন হল, টি-টোয়েন্টি স্টাইলে প্র্যাক্টিস করছি। যেখানে কোচের কথা মতো ফ্লাইটটা একটু কম করাচ্ছি।
প্র: আমিরশাহিতে গত এশিয়া কাপে আপনি ১০ উইকেট নিয়ে রশিদ খানের সঙ্গে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিলেন। ফাইনালে তিন উইকেট নিয়েছিলেন। এই তথ্য নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাস বাড়াবে?
কুলদীপ: অবশ্যই। এশিয়া কাপটা আমার খুব ভাল গিয়েছিল। ওখানকার উইকেটের সঙ্গে আমি পরিচিত। জানি, কী ভাবে বল করলে সফল হওয়া যায়।
প্র: গত বছর আইপিএলটা আপনার ভাল যায়নি। বলেছিলেন, ইডেনের উইকেট থেকে কোনও রকম সাহায্য পাননি।
কুলদীপ: হ্যাঁ, ভারতে খেলা হলে বোঝা যায় কলকাতার উইকেট কতটা আলাদা। আমি তো বলব, ভারতের কোথাও ইডেনের মতো পিচ নেই। বাইরে খেলা হলে মনে হয় অন্য ধরনের উইকেট পাব।
প্র: দুবাই, আবু ধাবির পিচ তো সাধারণত স্পিনারদের সাহায্য করে থাকে।
কুলদীপ: অবশ্যই। আমি সেটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি। ওখানকার পিচ একটু মন্থর হয়। ব্যাটসম্যানদের টাইমিংয়ে তাই গণ্ডগোল করানো যায় ফ্লাইটের হেরফেরে। টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও উইকেট তোলার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
প্র: এ বারের আইপিএলে স্পিনাররা কি গেমচেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে?
কুলদীপ: অবশ্যই পারে। এশিয়া কাপে তো স্পিনাররা ম্যাচ জিতিয়েছিল। মানছি, অনেক দিন খেলা হয়নি বলে উইকেট প্রথম দিকে তাজা থাকবে। কিন্তু ওখানে যা গরম, তাতে উইকেটের উপরে একটা প্রভাব পড়বেই। স্পিনাররা সাহায্য পাবে। কোনও না কোনও মুহূর্তে ঠিক ম্যাচের রং বদলে দেবে স্পিনাররা।
প্র: কেকেআরের এ বার বোলিং আক্রমণ বদলে গিয়েছে। প্যাট কামিন্সের মতো পেসার আছে দলে। বোলিং শক্তি নিয়ে কী বলবেন?
কুলদীপ: অবশ্যই এ বার বোলিংটা দারুণ। আমরা একজন ভাল ফাস্ট বোলার চেয়েছিলাম। কামিন্সকে পেয়েছি। সব মিলিয়ে এ বার বোলিংয়ে খুবই ভারসাম্য আছে। পেস, স্পিন— দু’বিভাগই শক্তিশালী।
প্র: সঙ্গে কেকেআরের বিস্ফোরক ব্যাটিং আক্রমণ তো আছেই!
কুলদীপ: সে আর বলতে। আন্দ্রে রাসেল কী করতে পারে, সেটা সবাই জানে। সঙ্গে এ বার অইন মর্গ্যান। একটা খুব ভাল দল হিসেবেই কেকেআর আইপিএলে নামবে।
প্র: আইপিএল শুরুর আগে একটা শিবির তো নিশ্চয়ই হবে?
কুলদীপ: এক মাসের শিবির হওয়ার কথা। এই শিবিরটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। একসঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ পাব। অনেক কিছু ঠিক করে নিতে পারব।
প্র: এই বিরতিতে সব চেয়ে বেশি কীসে জোর দিলেন?
কুলদীপ: দুটো ব্যাপারে। এক, ফিটনেস। দুই, বোলিংয়ের উন্নতি। নিজের বোলিং খুটিয়ে, খুটিয়ে দেখেছি। কোথায় ভুল হয়েছে বা উন্নতি করা যায়, সেটা নিয়ে ভেবেছি। কোচের সঙ্গে কথা বলে শুধরানোর চেষ্টা করেছি।
প্র: আপনি একজন রিস্ট স্পিনার। এত দিন ম্যাচের বাইরে থাকার ফলে কি ছন্দ ফিরে পেতে সমস্যা হবে?
কুলদীপ: আমি আাত্মবিশ্বাসী, কোনও সমস্যা হবে না। ৭-৮টা প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলেছি। সমস্যা হয়নি। ঠিকঠাক জায়গাতেই বল পড়েছে। বরং এই ফাঁকে নতুন, নতুন কয়েকটা জিনিস শিখেছি। সেটা এখন বলছি না। আশা করছি, ম্যাচে কাজে লাগাতে পারব। তা ছাড়া আইপিএলের আগে মাস খানেকের শিবির হবে। সেখানেও সময় পাব ছন্দ পাওয়ার।
প্র: ম্যাচ থেকে দূরে এই লকডাউনে কী ভাবে সময় কাটালেন? নতুন কী এল জীবনে?
কুলদীপ: আমি অনেক দিন থেকেই ছবি আঁকতাম। এই লকডাউনে সেই ছবি আঁকার ব্যাপারটা আরও ঝালিয়ে নিলাম। তা ছাড়া পরিবারের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটালাম। যে সুযোগ ক্রিকেটারদের জীবনে খুব কমই আসে। তবে মাঠে যেতে না পারায় একটা সময় শারীরিক কসরৎ হয়নি। যেটা সমস্যা ছিল। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে মানসিক ভাবে নিজেকে খুব তরতাজা লাগছে।
প্র: লকডাউনের এই জীবন থেকে কি শিক্ষা পেলেন?
কুলদীপ: দেখলাম, মানুষ কী ভাবে বাঁচার জন্য লড়াই করছে। কী ভাবে বাধ্য হয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাচ্ছে। সমস্যাটা তো তাদের সব চেয়ে বেশি ছিল, যারা বাড়ি ফেরার জন্য বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছিল। যারা খাবারের সন্ধানে রাস্তায় নেমেছিল। চেষ্টা করেছি, যতটা সম্ভব আশেপাশের মানুষকে সাহায্য করতে। ওদের লড়াই দেখে মনে হয়েছে, আমাদের সমস্যাগুলো কোনও সমস্যাই নয়। আমাদের অভিযোগ করার কোনও জায়গা নেই।