টোকিয়োয় স্বপ্নপূরণ হবে সানিয়া মির্জার? —ফাইল চিত্র।
একসময় ছিলেন বিশ্বের এক নম্বর। মহিলাদের ডাবলসে পয়লা নম্বর জায়গা ছিল তাঁর দখলে। কেরিয়ারে গ্র্যান্ড স্ল্যামের সংখ্যা ছয়। এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমস, অ্যাফ্রো-এশিয়ান গেমসে ছয় সোনা-সহ রয়েছে ১৪ পদক। সানিয়া মির্জার কৃতিত্ব অবশ্য নিছক পরিসংখ্যানে মাপা যাবে না। তাঁর উত্থান বদলে দিয়েছে ভারতে মহিলা টেনিসের গতিপথ। বিশ্বের সেরা ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় একসময় ছিলেন টেনিস সুন্দরী। আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ‘খেলরত্ন’ সানিয়া মুখ খুললেন করোনার দুঃসময় থেকে ব্য়ক্তিগত জীবন, কেরিয়ার, অলিম্পিক স্বপ্ন—সব প্রসঙ্গেই।
ভারতে মহিলাদের টেনিসে আপনি হলেন রোল মডেল। আপনাকে দেখেই পরের প্রজন্ম টেনিসে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। অনেকের কাছেই আপনার সাফল্য অনুপ্রেরণা। এটা কতটা চাপের? বা, কতটা দায়িত্বের?
সানিয়া মির্জা: অনেকের কাছে প্রেরণা হয়ে উঠতে পারা বিশাল ব্যাপার। এটা আমার কাছে একটা বিরাট প্রাপ্তি। তবে রোল মডেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বও আসে। আপনারা জানেন, আমি খুব কম বয়স থেকেই টেনিস খেলছি। যখন থেকে আমাকে তরুণদের কাছে রোল মডেল বলে তুলে ধরা হতে থাকল, তখনও আমার বয়স খুব কম। তাই শিখতে শিখতেই এগিয়েছি। যে জায়গায় আসতে পেরেছি তাতে আমি সম্মানিত, গর্বিত। এখন অনেক কচিকাঁচা, কিশোর-কিশোরীরা টেনিস খেলতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আর এদের অনেকের কাছেই যে কোনও কারণেই হোক, আমি অনুপ্রেরণা হয়ে গিয়েছি। এর জন্য গর্বিত, সম্মানিত।
আরও পড়ুন: কপিল, ম্যাকগ্রা, আক্রমরা যা পারেননি, কোন রহস্যে সেটাই করে দেখালেন অ্যান্ডারসন
কোভিড অতিমারিতে এখন থমকে গিয়েছে পৃথিবী। ক্রীড়াবিদদের কাছেও এটা কঠিন সময়। হতাশা থেকে নিজেকে বাঁচানোর মন্ত্র কী?
সানিয়া মির্জা: এক্সারসাইজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা হতাশা কাটিয়ে ইতিবাচক রাখবে মনকে। এখানে পজিটিভ থাকা, পজিটিভ ভাবনা জরুরি। নেতিবাচক কিছু মনে রাখলে চলবে না। আমাদের সবাইকে এখন একজোট হয়ে থাকতে হবে। এই পরিস্থিতি সামলাতে হবে এক হয়ে। বেশি এগিয়ে নয়, বর্তমানে থাকতে হবে। এই পরিস্থিতিকে কাটিয়ে ওঠার মতো মনের জোর আনতে হবে, সেই চেষ্টা করতে হবে। আর অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে হবে উপরওয়ালাকে, নিজের ও পরিবারের সবার সুস্থ থাকার জন্য।
ইতিবাচক থাকাই সানিয়ার সাফল্যের মন্ত্র। —ফাইল চিত্র।
কোর্টে ফিরেই জানুয়ারিতে হোবার্ট ইন্টারন্যাশনালে ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। কতটা কঠিন ছিল এই ফিরে আসা?
সানিয়া মির্জা: ইট ওয়াজ ভেরি টাফ রোড ব্যাক। খুব কঠিন ছিল। মা হওয়ার পর আমি ২৬ কেজি ওজন কমিয়েছিলাম। আর ফিরে আসাটা হয়েছিল স্বপ্নেরই মতো। কোর্টে ফেরার সময় চাপ ছিল বলব না, তবে প্রত্যাশা ছিল মারাত্মক। আর আমি সত্যিই ভাবিনি যে, প্রায় দু’বছর পর ফিরেই চ্যাম্পিয়ন হব। সৌভাগ্যই বলব যে তা করতে পেরেছি। খুব খুশি তার জন্য। ওই যে বললাম, স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন।
সন্তানের জন্মের জন্য প্রায় দু’বছর থাকতে হয়েছে বাইরে। আবার এখন করোনার জন্য বসে থাকতে হচ্ছে। এক জন ক্রীড়াবিদের কাছে এই বসে থাকা কতটা যন্ত্রণার?
সানিয়া মির্জা: হ্যাঁ, লং ব্রেক চলছে এখনও। এটা মোটেই সহজ নয়। তবে এটা আমার হাতেও নেই। এটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলতে হচ্ছে সবাইকে। ইতিবাচক রাখছি মনকে। নিজেকে কাজে-কর্মে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি। সুস্থ থাকার দিকে নজর দিচ্ছি। আর মাতৃত্বের জন্য ব্রেকের থেকে এটা একেবারেই অন্য রকমের একটা ব্যাপার। এর আগে চোটের জন্যও কোর্টের বাইরে থাকতে হয়েছে। কিন্তু এ বার করোনা অতিমারির জন্য আমাদের সবাইকে সাবধানে থাকতে হচ্ছে। এটাই শুধু প্রার্থনা, আমরা সবাই যেন এর থেকে সুস্থ দেহে বেরিয়ে আসতে পারি।
আরও পড়ুন: বেগুনি-সোনালি জার্সিতে কেমন লাগবে মেসিকে? জানতে চাইল নাইট রাইডার্স
অলিম্পিক পিছিয়ে গিয়েছে এক বছর। এটা প্রস্তুতির জন্য বাড়তি সময় আনছে। অনেক সাফল্য থাকলেও আপনার কেরিয়ারে অলিম্পিকের পদক অধরা মাধুরী হয়েই থেকে গিয়েছে। টোকিয়োয় কি স্বপ্নপূরণ হবে?
সানিয়া মির্জা: অলিম্পিক পদকের কথা মাথায় সব সময়ই ঘুরছে। দেশের জন্য অলিম্পিক পদক জিততে অবশ্যই মরিয়া। কিন্তু, আমরা, টেনিস খেলোয়াড়রা শুধু একটা প্রতিযোগিতার কথা মাথায় রেখে তৈরি হই না। আরও অনেক প্রতিযোগিতা থাকে। অলিম্পিকের আগে অন্য প্রতিযোগিতাও থাকে তৈরি হওয়ার জন্য। তবে অলিম্পিকের দিকে যত এগোতে থাকব, তত ওই দিকে ফোকাস রাখব। এখনই শুধু অলিম্পিককে পাখির চোখ করছি না। ধীরে ধীরে মন দেব সে দিকে।
পারিবারিক সানিয়া। শোয়েব ও ইজহানের সঙ্গে। —ফাইল চিত্র।
ভারতে মহিলা টেনিসের ভবিষ্যৎ কী? আপনার পর তো তেমন সাড়া জাগানো প্রতিভার খোঁজ মিলছে না।
সানিয়া মির্জা: আমার তো মনে হয় ভারতে মহিলা টেনিসের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। অদূর ভবিষ্যতে এমন কাউকে পেতেই পারি যে কি না বড় প্রতিযোগিতায় সফল হবে, সাড়া ফেলবে। অঙ্কিতা রায়না, করমন কৌর থান্ডির কথা বলতে পারি। দু’জনেই প্রতিশ্রুতিবান। খুব ভাল। কিন্তু এখনও কেউ বিশ্বের সেরা ১০০ জনে আসতে পারেনি। এটা করতে হবে দু’জনকে। আশা করছি এটা করে দেখাবে ওরা।
আপনি ও শোয়েব মালিক ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। কিন্তু গত সাত মাসে আপনাদের দেখা হয়নি। এটা আপনাদের সন্তান ইজহানের কাছেও কতটা কষ্টের?
সানিয়া মির্জা: হ্যাঁ, এটা খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে চলছি আমরা। এটার সঙ্গে ধাতস্থ হওয়া মুশকিলের। আমরা সেই চেষ্টাই করছি। ছেলে ইজহানের কাছেও ব্যাপারটা কষ্টকর। তবে ও বুঝতে পারে সবটাই। যদিও বাবাকে দীর্ঘ দিন দেখতে পায়নি। আমরা এটাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি অন্য ভাবে। এখন সুস্থ থাকাতেই প্রাধান্য দিচ্ছি। এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডে রয়েছে শোয়েব। সিরিজ শেষ হলেই ও আসবে। আশা করছি সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যে ও এসে পড়বে আমাদের কাছে।