চাকদহ থেকে লোকাল ট্রেনে রোজ কলকাতা ময়দান। সঙ্গে একরাশ স্বপ্ন। বড় ক্রিকেটার হওয়ার। তখনও দেশের জার্সি পরে খেলার স্বপ্নটা জাঁকিয়ে বসেনি। একটা বছর পেরিয়ে এসেই হাতের মুঠোয় পেয়ে যাওয়া জ্যাকপটের ঘোর এখনও কাটেনি সায়নের। সায়ন ঘোষ। বাংলার ডানহাতি মিডিয়াম পেসার। খেলেন কালীঘাট ক্লাবের হয়ে। সোমবারের দুপুরটা ছিল একদম অন্য রকম। সকাল থেকে বাড়িতেই ছিলেন না। খুব উত্তেজনা হচ্ছিল। তাই বেরিয়ে পড়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। মোবাইলে ‘বাবা’ ভেসে উঠতেই উত্তেজনাটা অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। তার পরই এল সেই খবর। বেস প্রাইজ ১০ লাখে কেকেআর তাঁকে দলে নিয়েছে। মুহূর্তেই বদলে গেল দুনিয়াটা। কলকাতার দলে তিনিই এখন একমাত্র ভারতীয় বাঙালি, কলকাতা ময়দানেরও একমাত্র প্রতিনিধি। এত দিন একমাত্র বাঙালি ছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের। আর এক বাঙালি ২৪ বছরের সায়নের সামনে এখন নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার লড়াই। কেমন করে তৈরি হচ্ছেন? একে একে নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেন সায়ন।
আরও খবর: ইয়র্কারকে অস্ত্র করে আইপিএলে কুলির ছেলে এখন নতুন কোটিপতি
প্রত্যাশাটা ছিলই
নিলামে নাম থাকায় আশা ছিল ডাক আসবে। কিন্তু আলাদা করে কোনও দলের কথা ভাবিনি। ভেবেছিলাম যদি কেউ ডাকে তা হলে সেটা বড় সুযোগ হবে আমার কাছে। পছন্দের দলের কথা ভাবার মতো জায়গায় ছিলাম না।
দিল্লি ডেয়ার ডেভিলসে ট্রায়াল
দিল্লিতে ট্রায়াল দিয়েছিলাম। খুব ভালও হয়েছিল। তাই একটা হালকা আশা ছিল ওরা ডাকতে পারে। ওরা ডাকেনি কিন্তু কলকাতা নিয়েছে আমাকে। এটা বড় প্রাপ্তি।
নিলামের সময় বাড়ির বাইরে
খুব টেনশন হচ্ছিল তাই সকাল থেকেই বেরিয়ে পড়েছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। টিভির সামনে বসলে উত্তেজনায় পাগল হয়ে যেতাম। কিন্তু তাতে কী আর উত্তেজনা কমে। মাথায় ওটাই ঘুরছিল। কিছুতেই মন বসছিল না।
খবর এল ফোনে
বাবা-মা সকাল থেকে টিভির সামনে বসেছিল। বাবাই ফোন করে জানাল কেকেআর আমাকে নিয়েছে। আমার থেকেও বাবা-মা বেশি খুশি। তাদের জন্যই সেরাটা দিতে হবে।
বাংলার হয়ে এটা দ্বিতীয় বছর
গত বছর প্রথম বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে খেলার সুযোগ পাই। একটিই ম্যাচ খেলেছিলাম বিদর্ভের বিরুদ্ধে। দুটো উইকেট পেয়েছিলাম। এই বছর চারটে ম্যাচ খেলেছি। ১৭টি উইকেট পেয়েছি।
এক বছরেই এই উন্নতির পিছনে
ভিশন ২০/২০ হওয়ায় আমার অনেক সুবিধে হয়েছে। অনেক কিছু শিখেছি সেখানকার কোচদের থেকে। সঙ্গে সব সময়ই আমাকে টিপস দিয়েছে মনোজদা (মনোজ তিওয়ারি), দিন্দাদা (অশোক দিন্দা)। মহম্মদ শামির সঙ্গে কখনও দেখা হয়নি। তাই টিপস নেওয়াও হয়নি।
আর দাদা তো আছেই (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়)
দাদার সঙ্গে যত বারই দেখা হয়েছে, আমাকে উৎসাহিত করেছে। ভুল ধরিয়ে দিয়েছে। আরও ভাল খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে।
চাকদহের ঝুলনদি
ঝুলনদির সঙ্গে দেখা হলেই ক্রিকেট নিয়ে কথা হয়। আগে চাকদহ থেকেই যাতায়াত করতাম। কিন্তু এখন পর পর খেলা থাকলে কলকাতায় থেকে যাই কোলে মার্কেটের মেসে। কারণ যখন ক্লাবের হয়ে খেলি বা বাংলার হয়ে খেলি, সকাল-বিকেল প্র্যাকটিস থাকে।
খেলার শুরু
একদম ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলো করি। চাকদহতেই খেলতাম। তখন আর ১০জন বাঙালির মতো সব কিছুই খেলতাম। ফুটবলও খেলেছি। এর পর ক্রিকেটে চলে আসি। কিন্তু সেভেনে যখন পড়ি তখন ছেড়ে দিই খেলা। আবার মাধ্যমিকের পর থেকে শুরু করি।
বাংলার মালিঙ্গা
আমি কখনওই মালিঙ্গাকে লক্ষ্য করে ওরকম বোলিং শুরু করিনি। আমার বোলিং সব সময়ি ফ্রি অ্যাকশন ছিল। তার পর মালিঙ্গাকে দেখে হাতের মুভমেন্টে কিছু পরবর্তন করি। কিন্তু এটাই আমার স্বাভাবিক বোলিং।
মালিঙ্গা আর মিশেল জনসনের অপেক্ষায়
আমার খুব ইচ্ছে আছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে যখন খেলা হবে তখন মালিঙ্গার সঙ্গে দেখা করে কথা বলার। এ ছাড়া মিশেল জনসন আমার খুব প্রিয় প্লেয়ার। ছোটবেলা থেকেই ওর খেলা খুব ভাল লাগে। ওর সঙ্গেও দেখা করে কথা বলে চাই।
পরিবার সবসময় পাশে
বাবা-মা-কাকু রয়েছে। সবাই সমর্থন করে। বাবা কলকাতা কর্পোরেশনে চাকরি করত। অবসর নিয়েছে। আমি বাবা, মার জন্য নিজের সেরাটা দিতে চাই। বাংলার লোকের জন্য সুযোগ পেলেই উজাড় করে দিতে চাই।
বিজয় হাজারেতে ভাল খেলতেই হবে
কাল বিজয় হাজারে খেলতে যাব। এখন টার্গেট ওখানে ভাল খেলা। ওখানে ভাল খেলতে পারলে নিজের আত্মবিশ্বাসটা বাড়বে। আইপিএল-এর আগে যদি কোনও প্র্যাকটিস ম্যাচ হয় তা হলে সেখানেও নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। তবেই আইপিএল খেলার সুযোগ আসবে।
জাতীয় দলের স্বপ্ন
জাতীয় দলের জার্সি পরে খেলার স্বপ্ন তো সবারই থাকে। আমারও আছে। কিন্তু আগে এই পথগুলো পেরোতে হবে। সফল হতে হবে, যাতে জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারি।
আইপিএল-এ বাঙালি
বাংলাকে, দলকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। আইপিএল-এ বাঙালি কম, আমি যখন দলে জায়গা পেয়েছি, যদি সুযোগ পাই সেই ভারসার দাম দেওয়ার চেষ্টা করব। বাঙালি হিসেবে বাংলার মাটিতে খেলার একটা বাড়তি মোটিভেশন তো আছেই।