Glenn McGrath

মাঠে বেশি বন্ধুত্ব কেন, অস্ট্রেলিয়ার মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন ম্যাকগ্রার

Advertisement

কৌশিক দাশ

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:২৮
Share:

মগ্ন: তৈরি হচ্ছেন ওয়ার্নার। সিডনির পিচে শ্যাডো ব্যাটিং। গেটি ইমেজেস

এই প্রথম সিডনিতে গোলাপি টেস্ট হচ্ছে আর তিনি সেখানে নেই। মাস দেড়েক ধরে ভারতে আছেন সিরিজের সম্প্রচারকারী চ্যানেল সোনি স্পোর্টসে ধারাভাষ্য দেওয়ার কাজে। তারই ফাঁকে মুম্বই থেকে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে। সিডনিতে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় টেস্ট শুরুর আগের দিন।

Advertisement

প্রশ্ন: আপনাকে ছাড়া এই প্রথম সিডনিতে গোলাপি টেস্ট হচ্ছে। কী রকম অনুভূতি?

ম্যাকগ্রা: এই প্রথম বড়দিন আর নববর্ষে আমি বাড়িতে, পরিবারের সঙ্গে নেই। তবে ওদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আমার ছোট মেয়ের সঙ্গে রোজ কথা হচ্ছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সব কিছুই অনলাইনে চলছে। গোলাপি টেস্টেও আমরা অনলাইনে যা করার করছি।

Advertisement

প্র: সেটা কী রকম?

ম্যাকগ্রা: অনলাইনে মাঠের আসন বিক্রি করছি। দু’দলের ক্রিকেটাররা ওদের গোলাপি টুপি নিলামের জন্য দেবে। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা জার্সি দেবে। আরও কিছু সরঞ্জাম নিলাম হবে। এই সব অর্থ স্তন ক্যানসারের সঙ্গে যুক্ত নানা কাজে ব্যবহার করা হবে।

প্র: গোলাপি টেস্ট নিয়ে আপনার কী স্মৃতি?

ম্যাকগ্রা: ২০০৯ সালে আমার স্ত্রী জেন স্তন ক্যানসারে মারা যায়। তার পরে অস্ট্রেলীয় বোর্ড ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশনকে প্রস্তাব দেয়, তৃতীয় দিনটা জেন ম্যাকগ্রার নামে করার। গোলাপি টেস্টও শুরু হয় ওখান থেকে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, তরুণীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং আর্থিক দিক দিয়ে সাহায্য করা। সফরকারী দলগুলো সব সময় সাহায্য করেছে। গত বার তো বিরাট কোহালি গোলাপি গ্লাভস, ব্যাটে গোলাপি স্টিকার লাগিয়ে নেমেছিল।

শুভেচ্ছা: গোলাপি টেস্টের জন্য ম্যাকগ্রাকে জার্সি তুলে দিলেন সচিন। টুইটার

প্র: এ বারের অস্ট্রেলিয়া দলটার মধ্যে কি আগ্রাসী মেজাজের অভাব আছে? যে মেজাজটা আপনাদের সময় খুব ধরা পড়ত?

ম্যাকগ্রা: আমরা যখন খেলতাম, তখন কিছুটা বাগ্‌যুদ্ধ অবশ্যই হত বিপক্ষের সঙ্গে। তাকে আমি স্লেজিং বলব না। কিন্তু চোখে চোখ রেখে ক্রিকেটটা হত। আমি যখন সচিন, সহবাগ, রাহুল, সৌরভ, লক্ষ্মণদের বিরুদ্ধে বল করেছি, তখন ওরা সব সময় আমার প্রতিপক্ষ ছিল। কোনও দিন সতীর্থ ছিল না। কিন্তু এখন তো ছবিটা বদলে গিয়েছে।

প্র: এই যে দু’দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ মেজাজ দেখা যাচ্ছে, সেটা কি আইপিএলের জন্য?

ম্যাকগ্রা: কিছুটা তো বটেই। আইপিএলের ফলে এরা সবাই এখন সতীর্থ হয়ে গিয়েছে। সবাই সবাইকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনে। এই সিরিজে একটু গরম-গরম কথা হওয়ার বদলে দেখলাম, মাঠে খুব হাসি-ঠাট্টা হচ্ছে। বন্ধু হওয়া ভাল, কিন্তু অতিরিক্ত বন্ধুত্ব ভাল নয়।

আরও পড়ুন: সৌরভের ছুটি আজ, ‘দলে এলে স্বাগত’, বললেন অরবিন্দ মেনন

প্র: স্টিভ স্মিথের শক্তিকেই ভারত ওঁর দুর্বলতা বানিয়ে দিয়েছে। ভারতের এই ‘লেগট্র্যাপ’ নিয়ে কী বলবেন?

ম্যাকগ্রা: ভাল কৌশল নিয়েছে ভারত। স্টাম্প টু স্টাম্প বল করছে, লেগ গালি রেখে। অ্যাশেজে ইংল্যান্ড এ রকম একটা পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু কাজে দেয়নি। নিউজ়িল্যান্ডের নিল ওয়াগনার আবার সফল হয়েছিল। এই সিরিজে ভারত তিন বারই স্মিথকে খুব তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে। যেটা সাফল্যের আসল চাবিকাঠি। স্মিথ একবার ২০-৩০ রান করে দিলে, ওকে আউট করা কঠিন।

প্র: স্মিথ বনাম অশ্বিন দ্বৈরথ নিয়ে কী বলবেন?

ম্যাকগ্রা: অশ্বিন এই সিরিজে দুরন্ত বল করেছে। অশ্বিনের প্রশ্নপত্রের কোনও জবাব এখনও নেই অস্ট্রেলিয়ার কাছে। তবে স্মিথ যে ভাবে ওয়ান ডে সিরিজে শুরু করেছিল, তাতে টেস্টে ওকে এই ভাবে ব্যর্থ হতে দেখে অবাক হয়েছি। সিডনিতেই দুটো সেঞ্চুরি করেছিল স্মিথ। এ বার দেখা যাক, টেস্টে কী হয়।

প্র: অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা কি আপনাকে অবাক করেছে?

ম্যাকগ্রা: অবশ্যই। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের একটু ভীতু, ভীতু দেখিয়েছে। ওরা উইকেট বাঁচানোর জন্য খেলছিল। বুমরা, অশ্বিনদের মতো বোলারের বিরুদ্ধে শুধু উইকেটে টিকে থাকার লক্ষ্য নিয়ে নামলে হয় না। রানটাও তুলতে হয়। না হলে যে কোনও সময় আউট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আরও পড়ুন: লক্ষ্মী কি ফিরবেন ময়দানে? শুরু হল কৌতূহল

প্র: কী করা উচিত অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের?

ম্যাকগ্রা: ভারতের শুভমন গিল, ঋষভ পন্থ, রবীন্দ্র জাডেজাদের ব্যাটিংটা দেখুক। গিলরা প্রথম থেকেই ম্যাচের উপরে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছে। অজিঙ্ক রাহানে কী অসাধারণ ব্যাট করল। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের থেকে শিক্ষা নিক অস্ট্রেলিয়া। ভীরু ভাবটা সরিয়ে একটু রান করার তাগিদ দেখাক।

প্র: রোহিত শর্মার প্রত্যাবর্তন নিয়ে কী বলবেন?

ম্যাকগ্রা: রোহিতের মতো বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানকে দলে পাওয়া মানে ভারতের শক্তি বেড়ে যাওয়া। রোহিতও নিশ্চয়ই প্রথম সুযোগে নিজেকে প্রমাণ করতে চাইবে। সাদা বলের ক্রিকেটে ও দুরন্ত। কিন্তু দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও টেস্টে নিজেকে সে ভাবে মেলে ধরতে পারেনি। টেস্টে ওর রেকর্ড আরও ভাল হওয়া উচিত ছিল। আমার মনে হয়, অস্ট্রেলীয়রা প্রথমেই ওর উইকেট তুলতে ঝাঁপাবে। মনে রাখতে হবে, বেশ কিছু দিন খেলার বাইরে আছে রোহিত।

প্র: ডেভিড ওয়ার্নারও তো ফিরে আসছেন?

ম্যাকগ্রা: ওয়ার্নারের আত্মবিশ্বাস, ওর আগ্রাসী মেজাজের অভাবটা অস্ট্রেলিয়া টের পেয়েছে। ওয়ার্নারের মধ্যে যে চনমনে একটা ভাব থাকে, তা দলকে তাতিয়ে দেয়। পুরো সুস্থ ওয়ার্নারকে পেলে তো কথাই নেই। শুরুতে উইল পুকভস্কিকে নিয়ে ওয়ার্নার কেমন ব্যাট করে, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে থাকবে।

প্র: ব্রিসবেন বিতর্ক নিয়ে কী বলবেন?

ম্যাকগ্রা: ব্রিসবেন নিয়ে এত কথার একটা কারণ হল, ভারত ওখানে খুব একটা ভাল কিছু করেনি আর অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘদিন হারেনি। সূচিতে ব্রিসবেনের নাম দেখে আমি প্রথমে একটু অবাকই হয়েছিলাম। তবে এটা বলব, কোভিড পরিস্থিতিতে আধুনিক ক্রিকেটারদের একটু মানিয়ে চলতেই হবে। মাঠ এবং মাঠের বাইরে।

প্র: নবদীপ সাইনির অভিষেক নিয়ে কী মত?

ম্যাকগ্রা: ছেলেটার বলে গতি আছে। আইপিএলে ভাল করেছে। তবে ভারতের বোলিং আক্রমণে একটু অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। দেখা যাক, অস্ট্রেলিয়া সুযোগটা নিতে পারে কি না।

প্র: মেলবোর্নে ভারতের প্রত্যাবর্তন কি আপনাকে অবাক করেছে?

ম্যাকগ্রা: অ্যাডিলেডের পরে ভেবেছিলাম, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দাপট দেখাবে। বিশেষ করে বিরাট কোহালি যেখানে নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে আড়ালে থাকা খেলোয়াড়রা এই সুযোগে নিজেদের মেলে ধরে। অজিঙ্ক রাহানে নিজের কাজটা দারুণ ভাবে করেছে। ওর নেতৃত্বে ভারত এখনও টেস্ট হারেনি।

প্র: শেষ দুটো টেস্ট নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী?

ম্যাকগ্রা: আমি সব সময় অস্ট্রেলিয়ার জয় চাই। ভারত একটু এগিয়ে আছে ঠিকই, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ফিরে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement