আত্মবিশ্বাসী: এক একটা ম্যাচ ধরে এগোতে চান হাবাস। নিজস্ব চিত্র
তিনি ফিরে আসতেই বদলে গিয়েছে এটিকে। দু’বছর কোচিং করিয়ে দলকে চ্যাম্পিয়ন ও শেষ চারে তুলেছিলেন। তারপর ছেড়ে যান কলকাতা। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে গত দু’বছর এটিকে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিল। লোপেস আন্তোনিয়ো হাবাসের আগমনে ফের লিগ শীর্ষে এটিকে। তিন বছর পরে কলকাতার দায়িত্ব নিয়ে আনন্দবাজারকে প্রথম একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন স্পেনীয় কোচ। বাইপাসের ধারের এক হোটেলে।
প্রশ্ন: নিজের পুরনো দলের (ওড়িশা এফসি) বিরুদ্ধে জিততে না পেরে কি হতাশ লাগছে?
হাবাস: জিততে পারিনি ঠিকই তবে হারিওনি। শীর্ষে তো রয়েছি। সেই জায়গা রাখা লক্ষ্য আমাদের। ওড়িশা এফসি ভাল দল। আমরাও জেতার মতো খেলতে পারিনি। গোলও কিন্তু খাইনি। বাইরের মাঠ থেকে এক পয়েন্ট অর্জনও খারাপ নয়।
প্রশ্ন: আপনার হাতে পড়লেই এটিকে বদলে যায়। টেডি শেরিংহ্যাম, অ্যাশলে ওয়েস্টউডের মতো কোচ এলেও গত দু’বছরে একবারও লিগ শীর্ষে ওঠেনি এটিকে। আপনার সাফল্যের রসায়নটা কি?
হাবাস: আমি কলকাতাকে ভালবাসি। কলকাতাও আমাকে। সেটাই রসায়ন। (গম্ভীর মুখে হাসি)। মজা করছিলাম। পাঁচ ম্যাচে মাত্র একটায় হেরেছি। সেটাও হারতাম না। সেই হারের জন্য কাউকে দোষ দেব না। তবে রেফারিংটা সে দিন পছন্দ হয়নি। এটা লম্বা লিগ। অনেক উত্থান-পতন হবে। তবে অনেক দিন লিগ শীর্ষে থাকা উপভোগ করছি। এখনও পর্যন্ত যা হয়েছে, সব কৃতিত্ব ছেলেদের। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি না, খেলায় বিশ্বাস করি। পরিশ্রমে বিশ্বাসী। অন্য কোনও রসায়ন নেই।
প্রশ্ন: এটিকে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, দু’বারই স্পেনীয় কোচের কোচিংয়ে। এ বারও কি......
হাবাস: এ বার লিগের কাঠামো বদলেছে। লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা দল এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগ পাবে। এক নম্বর লিগ হয়েছে আইএসএল। এতে বাড়তি তাগিদ অনুভব করছে দলগুলো। আবার প্রথম চার দলের মধ্যে প্লে অফ হবে। তারপর ফাইনাল। খুব ভাল হয়েছে। আগে যা ছিল, তাতে টেবলের শীর্ষে থাকা দলও প্লে-অফে ছিটকে যেত বা গিয়েছে। এ বার ছিটকে গেলেও এশিয়ার সেরা লিগে খেলার সুযোগ থাকবে। তবে এখনই অতদূর ভাবছি না। ম্যাচ ধরে এগোতে চাই। লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি টপকানোর দর্শনে বিশ্বাস করি না। একটা করে সিঁড়ি পেরোতে চাই। ম্যাচ জিতলেই প্লে-অফে পৌঁছে যাব। লিগ শীর্ষে থাকব।
প্রশ্ন: দু’বছর কলকাতায় কোচিং করিয়ে সাফল্য পাওয়ার পরেও কেন চলে গিয়েছিলেন পুণে এফসি-তে (বর্তমানে ওড়িশা এফসি)?
হাবাস: কলকাতায় আমায় কোচিং করতে পাঠিয়েছিল আতলেতিকো দে মাদ্রিদ। তারা চায়নি। আমিও পুণেতে চলে যাই।
প্রশ্ন: গত বছর কোচিং করাননি। আপনার মতো কোচ বসে থাকলেন...
হাবাস: কোচেদের মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নিতে হয়। না হলে সিদ্ধান্তে ভুল হয়। হতাশা আসে। জোসে মোরিনহোও তো প্রায় এক বছর বসেছিলেন। আবার ফিরেছেন। পুণেতে সফল হইনি। তাই মনে হয়েছিল একটু বিশ্রাম নিই।
প্রশ্ন: এটিকে ফের ডাকার পর কি মনে হয়েছিল?
হাবাস: মনে হল ঘরে ফেরার ডাক পেয়েছি। এই শহরটাকে দারুণ লাগে। সবাই আমাকে ভালবাসে। যেখানে যাই লোকে চিনতে পারে। নিজস্বী তোলে। তখন মনে হয় যেন মাদ্রিদেই আছি।
প্রশ্ন: আপনার দলে এক ঝাঁক বঙ্গসন্তান। যে শহরের দল, সেখানকার ফুটবলার থাকলে কি সুবিধা হয়?
হাবাস: নিশ্চয়ই। শহরের আবেগকে সঙ্গে পাওয়া যায়। আমার দল যদি সফল হয়, তা হলে এটা একটা বড় কারণ হবে।
প্রশ্ন: এটিকে-কে প্রথম দু’বছর রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলাতেন। হঠাৎ এত আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলাচ্ছেন? এটা কি রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসের মতো দু’জন অস্ট্রেলীয় লিগে খেলা স্ট্রাইকার আছে বলে?
হাবাস: ওরা দু’জনে মিলে ছয় গোল করেছে পাঁচ ম্যাচে। গোল করার জন্য ওদের নিয়েছি। তবুও ওরা অপরিহার্য নয়। আমার কাছে দলই শেষ কথা। হাতে যে অস্ত্রগুলো আছে তা দিয়ে রণনীতি ঠিক করতে হয়। সেটাই করছি।
প্রশ্ন: পরের বছর তো ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান আইএসএল খেলবে? কি বলবেন?
হাবাস: ওই দুই ক্লাব নিয়ে কিছু বলব না। তবে আই লিগের সব ম্যাচ দেখি। দুটো দলের খেলাই দেখেছি। আই লিগও আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা।
প্রশ্ন: এ বার আইএসএলে ফেভারিট কারা?
হাবাস: এখনও সব দলের বিরুদ্ধে খেলিনি। বেঙ্গালুরু, এফসি গোয়ার সঙ্গে খেলেনি। ন’টা ম্যাচ শেষ হলে এটা বলতে পারব।
প্রশ্ন: ম্যাচে সবসময়ই দেখা যায় সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে রিজার্ভ বেঞ্চে। এটা কি কোনও সংস্কার?
হাবাস: আসলে এই দুটো রং-ই আমার খুব প্রিয়।