উন্মাদনা: এক দিন পরেই ইউরোর চূড়ান্ত দ্বৈরথ। শনিবার ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের সামনে দু’দলের সমর্থকেরা। ছবি—রয়টার্স।
মনে হচ্ছে যেন ক্রিসমাস কড়া নাড়ছে দরজায়। তেমনই একটা পরিবেশ গত কয়েক দিনে মিলান-সহ গোটা ইটালিতে তৈরি হয়েছে। সবাই প্রহর গুনছেন অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে (৫৩ বছর) দ্বিতীয় বার ইউরোপ সেরা হওয়ার জন্য। সবারই আশা, চিরো ইমমোবিলে, লোরেনজ়ো ইনসিনিয়ে, জর্জিনহোরা যে রকম অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলছে, তাতে কাজটা অসম্ভব নয়।
শেষ বার আমার দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। সে বারের গোলকিপার ছিলেন দিনো জ়ফ। যিনি ১৯৮২ সালে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপও দিয়েছিলেন। সেই জ়ফ বলেছেন, ‘‘ঘরের মাঠে ফাইনালে ইংল্যান্ড এগিয়ে থেকে নামবে। কিন্তু আমাদের দলে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস সব রয়েছে। কাজেই ইটালিও পিছিয়ে থাকতে পারে না।’’ এটাই কিন্তু গোটা দেশের মনের কথা। ইংরেজরা যেমন ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছে, ‘‘ইট’স কামিং হোম।’’ তার পাল্টাও বলছি আমরা, ‘‘ইট’স কামিং টু রোম।’’
সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কয়েক বার ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হতে দেখেছি ইটালিকে। যার মধ্যে এখনও স্মৃতিতে উজ্জ্বল ২০১৪ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২-১ এবং তার আগে ২০১২ সালে ইউরো কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে জয়টাই। বিশ্বাস করি হ্যারি কেন, রাহিম স্টার্লিংদের দাপট থামিয়ে দেবে লিয়োনার্দো বোনুচ্চি, জর্জে কিয়েল্লিনিরা। তার পরে ট্রফি-সহ ওদের জার্সি, শিন গার্ড বা বুটের স্মারক স্থান পাবে ফ্লোরেন্সের ফুটবল হল অব ফেম মিউজিয়ামে। যেখানে সেই ১৯২৮ সাল থেকে রাখা আছে ফুটবলে ইটালির বিভিন্ন জয়ের স্মারক।
ইউরো নিয়ে মাতোয়ারা মিলান। শহরের অনেক জায়গাতেই উড়ছে মানচিনি, কিয়েল্লিনিদের ছবি দেওয়া ফেস্টুন। জাতীয় পতাকা। এক বছর আগেই এই করোনা সংক্রমণ আমাদের দেশে প্রায় মড়কের আকার নিয়েছিল। এখন সেই ভয় ঝেড়ে ফেলে গোটা দেশ ইউরো জয়ের জন্য উৎসবের পরিকল্পনা করছে। শুক্রবার রাতে স্থানীয় পাবে ইটালীয় ভাষায় লেখা দুর্দান্ত সব স্লোগান চোখে পড়ছিল। কোথাও লেখা, ‘‘আমরা নিছকই একটা ফুটবল দল নই। একটা দেশ। এ বার ইউরো আসবে এখানেই’’। ‘‘একটা দলের স্বপ্ন, গোটা দেশের হৃদস্পন্দন।’’ শনিবার রাতে খুব বেশি উৎসব হচ্ছে না। ইটালি জিতলে আবেগের বিস্ফোরণ হবে।
রাহিম স্টার্লিংয়ের গতি, হ্যারি কেনের গোলে ফেরার ছন্দের মোকাবিলা করতে হবে ইটালির রক্ষণকে। কিন্তু ভুলে যাবেন না, বোনুচ্চি ও কিয়েল্লিনি তার জন্য তৈরি আছে। আক্রমণ ও রক্ষণের ভারসাম্য মানচিনির এই দলটার বিশেষত্ব। যে কারণে ৩৩ ম্যাচ অপরাজিত আমরা। ইনসিনিয়ে, ইমমোবিলে, দোমেনিকো বেরার্দি যখন ইংল্যান্ড রক্ষণে হানা দেবে, ওরা বুঝবে আমরা কতটা শক্তিশালী। মাঝমাঠ থেকে তরঙ্গের মতো বল বাড়াবে মার্কো ভেরাত্তি, জর্জিনহো, নিকোলো বারেল্লা। এই ‘পাওয়ার হাউস’ যতক্ষণ কার্যকর, ততক্ষণ ইংল্যান্ডকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
(লেখক আই লিগে খেলে যাওয়া ইটালির ফুটবলার)