চর্চায়: হারলেও স্পেনের বিরুদ্ধে সোমারের লড়াই নজর কেড়েছে। রয়টার্স
ইয়ান সোমেরের জন্য খারাপ লাগছে। স্পেনের কাছে হেরে সুইৎজ়ারল্যান্ড বিদায় নেওয়ায় ইউরো ২০২০-তে ওর খেলা আর দেখার সুযোগ নেই। এ বারের প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত সেরা গোলরক্ষক ইয়ান-ই। আমার মতে সোনার দস্তানা (গোল্ডেন গ্লাভস) দেওয়া উচিত সুইস প্রহরীকেই।
শুক্রবার রাতে খেলা দেখতে বসে মনে হচ্ছিল, স্পেনের ফুটবলারদের আসল লড়াইটা যেন ইয়ানের সঙ্গেই। একটাও ভুল না করে ১২০ মিনিট খেলা রীতিমতো কঠিন। যদিও কেউ কেউ বলতে পারেন, আট মিনিটেই তো গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়েছিল সুইৎজ়ারল্যান্ড। এই গোলটার ক্ষেত্রে ইয়ানের কিছু করার ছিল না। স্পেনের জর্দি আলবার শট সুইস ডিফেন্ডার ডেনিস জ়াকারিয়ার পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে গোলে ঢুকে গিয়েছিল। ইয়ান কিন্তু ঠিক জায়গাতেই দাঁড়িয়েছিল। বল ওর কাছেই আসছিল। জ়াকারিয়ার পায়ে লেগেই বলের গতিপথ বদলে যায়। ইয়ানের কিছুই করার ছিল না। টেলিভিশন রিপ্লেতে বারবার তা দেখিয়েছে।
জার্মান বুন্দেশলিগায় মনশেনগ্ল্যাডবাখের হয়ে খেলে ইয়ান। বিশ্বের অন্যতম কঠিন এই লিগে খেলার জন্য সুইস গোলরক্ষক মানসিক ভাবে দারুণ শক্তিশালী। আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে। এ বারের ইউরোয় এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে বেশি গোল বাঁচিয়েছে ইয়ান-ই। উয়েফার দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখলাম, পাঁচ ম্যাচে ২১টি অবধারিত
গোল বাঁচিয়েছে ও!
কম শক্তিশালী দলের গোলরক্ষা করা এক দিকে যেমন কঠিন, অন্য দিকে ইতিবাচকও। কারণ, অনেক বেশি গোল বাঁচাতে হয় গোলরক্ষকদের। এর ফলে তারা নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পায়। গোলরক্ষকদের সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। ইয়ানের ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। গোলরক্ষকেরা ম্যাচে বল যত বেশি বেশি ধরবে, তত তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
আমার নিজের ফুটবলজীবনেও এই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানে খেলার সময় যত বল ধরেছি, তার কয়েক গুণ বেশি গোল বাঁচাতে হয়েছে মহমেডান স্পোর্টিংয়ে থাকার সময়। গোলরক্ষকদের সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের একটা ব্যাপারে ভীষণ মিল। বলের উপরে তীক্ষ্ণ নজর থাকা দরকার। ক্ষণিকের জন্যও বলের উপর থেকে চোখ সরে গেলে বিপদ। শেষ ষোলোয় স্পেন বনাম ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের কথা মনে করুন। গোলরক্ষক উনাই সিমোনের ভুলে পিছিয়ে পড়েছিল স্পেন। পেদ্রির ব্যাক পাস পা দিয়ে ধরার সময় বলের উপর থেকে ওর চোখ সরে গিয়েছিল বলেই বিপর্যয় ঘটে গিয়েছিল। শুক্রবার সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে কিন্তু দারুণ ভাবে নিজেকে প্রমাণ করেছে উনাই। টাইব্রেকারে দু’টি শটও বাঁচিয়েছে স্পেনীয় গোলরক্ষক।
ইউরোর শুরু থেকে লক্ষ্য করেছি, ইয়ান সদাজাগ্রত থাকে। ওর সব চেয়ে বড় গুণ, অসম্ভব ঠান্ডা মাথা। দুর্দান্ত অনুমান ক্ষমতা। সফল গোলরক্ষক হওয়ার আরও একটা শর্ত হল, ফুটওয়ার্ক (পায়ের নড়াচড়া) খুব ভাল হতে হবে। ইয়ানের মধ্যে দেখলাম সব গুণই রয়েছে।
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে টাইব্রেকারে কিলিয়ান এমবাপের শট আটকে দিয়েছিল ইয়ান। শুক্রবার বাঁচায় রদ্রির শট। কিন্তু ফাবিয়ান শেয়া, ম্যানুয়েল আকাঞ্জি ও রুবেন ভার্গাস গোল করতে না পারায় বিফলে গেল সুইস গোলরক্ষকের লড়াই।
আশা করছি, আগামী বছর কাতার বিশ্বকাপে ইয়ানকে আরও শক্তিশালী রূপে দেখা যাবে।