চর্চায়: ইউরোয় সেরা ইটালির গোলরক্ষক ডোনারুমা। ছবি রয়টার্স।
জানলুইজি ডোনারুমা এই মুহূর্তে নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক। অথচ ইউরো ২০২০ শুরু হওয়ার আগে ওর নাম কত জন জানতেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এই প্রথম কোনও গোলরক্ষক ইউরোয় সেরা ফুটবলারের সম্মান অর্জন করেছে। যে কারণে বলতেই হবে ডোনারুমা ১। আবার ইটালি এই নিয়ে ছ’টি আন্তর্জাতিক ট্রফি ঘরে তুলল। চারটি বিশ্বকাপ, দুটি ইউরো। তাই ইটালির স্কোর এখন ৬। প্রাক্তন গোলরক্ষক হিসেবে ডোনারুমার জন্য আমি গর্বিত।
ইটালির জাতীয় দলে জানলুইজি বুফন দীর্ঘ দিন ধরে গোলরক্ষা করেছে। সেই জায়গায় ২২ বছর বয়সি ডোনারুমাকে নিয়েছেন কোচ রবের্তো মানচিনি। গোলরক্ষকদের কাজটা এমনিতেই কঠিন। তার উপরে যদি পূর্বসূরি কিংবদন্তি হয়, অনেক বেশি চাপ নিয়ে খেলতে হয়। ডোনারুমাকে যেমন সব সময় লড়াই করতে হয়েছে বুফনের ছায়ার সঙ্গে। এই ধরনের পরিস্থিতি অনেকেই ঠিক মতো সামলাতে পারে না। ডোনারুমা ব্যতিক্রম। বয়স মাত্র ২২ বছর। কিন্তু মানসিক ভাবে ও অনেক বেশি পরিণত। সব চেয়ে বড় কথা, ইটালি গোলরক্ষক জানে সব সময়ই বুফনের সঙ্গে ওর তুলনা করা হবে। এই চাপ সামলে গ্রুপ পর্বে নিজেকে প্রমাণ করেছে। একটিও গোল খায়নি। সেমিফাইনালে স্পেনের বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে ইটালিকে জিতিয়েছে। ফাইনালেও নায়ক ফের ডোনারুমা।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে এসি মিলানে যোগ দেওয়া ডোনারুমার টাইব্রেকারে সাফল্য চমকে দেওয়ার মতো। এখনও পর্যন্ত পাঁচ বার টাইব্রেকারে গোললাইনে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ বারই সফল হয়েছে। তিন বার ক্লাবের হয়ে। দু’বার ইটালির হয়ে। অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান।
রবিবার ইউরো ফাইনালে ম্যাচের দু’মিনিটেই লুক শ-র গোলে ইংল্যান্ড এগিয়ে যাওয়ার পরেও মনে হচ্ছিল নাটক এখনও বাকি। ৬৭ মিনিটে লিয়োনার্দো বোনুচ্চি সমতা ফেরানোর পরে মন বলছিল, ম্যাচটা যদি টাইব্রেকারে গড়ায়, তা হলে ইটালিই জিতবে। কারণ, ডোনারুমা রয়েছে। টাইব্রেকারে জাডন স্যাঞ্চো, বুকায়ো সাকার কিক অবিশ্বাস্য দক্ষতায় বাঁচিয়ে ইটালির গোলরক্ষক ট্রফি এনে দিল দলকে।
প্রায় সাড়ে ছ’ফিট উচ্চতা। অসম্ভব নমনীয় শরীর ও অনুমান ক্ষমতা। টাইব্রেকারে এক বার বাদে বাকি সবগুলো কিকের ক্ষেত্রে ঠিক দিকে ঝাঁপিয়েছিল। ডোনারুমা দু’টো হাতই কিন্তু বলের গতিপথের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। অসাধরণ অনুমান ক্ষমতা ও দক্ষতার শীর্ষে থাকলেই এ ভাবে খেলা যায়।
ডোনারুমা খেলে পেনাল্টি বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে। শূন্যে বল ধরার ক্ষেত্রে দুর্দান্ত দক্ষতা রয়েছে। আধুনিক ফুটবলে গোলরক্ষকের কাজ শুধু গোল বাঁচানোই নয়। সতীর্থদের ঠিক মতো পাস দেওয়াও। তাই বলের উপরে নিয়ন্ত্রণ থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। ও এই ব্যাপারেও পারদর্শী। নিখুঁত পাস দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে ডোনারুমাকে আমি বুফনের চেয়েও এগিয়ে রাখব।
বরফ শীতল মস্তিষ্কও সম্পদ মানচিনির দলের নতুন গোলরক্ষকের। রবিবার টাইব্রেকারে হ্যারি কেন ও হ্যারি ম্যাগুয়েরের কিক বাঁচাতে না পারার জন্য যেমন ওকে ভেঙে পড়তে দেখেনি, তেমনই স্যাঞ্চো, সাকা-র গোল বাঁচিয়ে উচ্ছ্বাসে ভেসেও যায়নি। এই কারণেই এসি মিলান থেকে ওকে ছিনিয়ে নিয়েছে প্যারিস সাঁ জারমাঁ-র মতো ক্লাব।
ডোনারুমা একাই একশো!