চর্চায়: ইউরোর শেষ ষোলোয় নজর থাকবে যাঁদের উপরে। জার্মানির নয়্যার। বেলজিয়ামের কর্তুয়া। ফাইল চিত্র
ইউরো ২০২০-তে উত্তেজনা এ বার কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। আজ, শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে নক-আউট পর্ব। পরীক্ষা আরও কঠিন হতে চলেছে গোলরক্ষকদের। ম্যাচের নিষ্পত্তি যদি নির্ধারিত বা অতিরিক্ত সময়ের মধ্যে শেষ না হয়, তখন টাইব্রেকারই ভরসা। দলের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে গোলরক্ষকদের উপরে।
ম্যানুয়েল নয়্যার, থিবো কর্তুয়া, হুগো লরিস, জানলুইজি দোন্নারুম্মা থেকে রুই প্যাত্রিসিয়া- শেষ ষোলোয় যোগ্যতা অর্জনকারী অধিকাংশ দলেরই গোলরক্ষক দারুণ ছন্দে রয়েছে। কিন্তু টাইব্রেকারে গোলরক্ষকের কাজ শুধু বিপক্ষের ফুটবলারের শট আটকানো নয়, নিজের সঙ্গেও লড়াই করতে হয়। এমনিতেই দল হারলে গোলরক্ষকদেরই বেশি কাঠগড়ায় তোলা হয়। সারা ম্যাচে একাধিক অবধারিত গোল বাঁচানো সত্ত্বেও দল জিতলে নায়কের সম্মান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গোলদাতাকে দেওয়া হয়। প্রবল এই চাপ নিয়েই গোলরক্ষকদের টাইব্রেকারের সময় গোললাইনে গিয়ে দাঁড়াতে হয়। কেউ নায়ক হয়, কেউ আবার ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়ে। কারা হতে পারে এ বারের ইউরোয় নায়ক?
ম্যানুয়েল নয়্যার: জার্মানির হয়ে ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ জিতেছে। দীর্ঘ দিন ধরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে নয়্যারের। নিজের গোলটা দারুণ ভাবে আড়াল করার ক্ষমতা রয়েছে। এই কারণে বিপক্ষের ফুটবলারেরা সমস্যায় পড়ে যায়। টাইব্রেকারে জার্মানিকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। অধিনায়ক হিসেবেও দারুণ। নয়্যারের সব চেয়ে বড় গুণ অনুমান ক্ষমতা। পেনাল্টি বক্স ছেড়ে বেরিয়ে এসে ডিফেন্ডারদের মতো ট্যাকল করে। এই ক্ষমতার জন্যই নয়্যারকে বলা হয় সুইপার-গোলরক্ষক। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে পাঁচটি গোল খেলেও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা টাইব্রেকারে গড়ালে নয়্যারের নায়ক হয়ে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি বলে আমার ধারণা। তবে ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডও ভাল। গ্রুপ পর্বে ওকে অবশ্য খুব একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়নি। তিনটি ম্যাচে একটিও গোল খায়নি। বাঁচিয়েছে চারটি। ২৯ জুন ওয়েম্বলিতে জার্মানির বিরুদ্ধেই আসল পরীক্ষা পিকফোর্ডের।
থিবো কর্তুয়া: সাড়ে ছ’ফিটের বেশি উচ্চতা হওয়ায় বেলজিয়াম গোলরক্ষক গোলমুখ অনেকটা আড়াল করে দিতে পারে। গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচে মাত্র একটি গোল খেয়েছে। বাঁচিয়েছে সাতটি গোল। তার উপরে রিয়াল মাদ্রিদের মতো দলে খেলে কর্তুয়া। তাই জানে টাইব্রেকারের সময় কী ভাবে স্নায়ুচাপ সামলাতে হয়। রিয়ালে একসঙ্গে খেলার সূত্রে রোনাল্ডোর শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আগামী রবিবার কিন্তু পর্তুগালের পথে কাঁটা ছড়িয়ে
দিতে পারে কর্তুয়া।
হুগো লরিস: বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি গোলরক্ষকের বেরিয়ে এসে বল ধরার (আউটিং) ক্ষেত্রে একটু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু গোললাইনে হুগো অসাধারণ। এই কারণেই পেনাল্টি বা টাইব্রেকারে ওকে গোল করা কঠিন। রোনাল্ডো যদিও গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দুটি গোলই করেছিল পেনাল্টি থেকে।
সবাই কিন্তু রোনাল্ডো নয়।
জানলুইজি দোন্নারুম্মা: ইটালির জাতীয় দলে জানলুইজি বুফন দীর্ঘ দিন ধরে গোলরক্ষা করেছে। এ বার সেই জায়গায় খেলছে ২২ বছর বয়সি দোন্নারুম্মা। ও জানে সব সময় বুফনের সঙ্গে তুলনা করা হবে। এই চাপ সামলে গ্রুপ পর্বে নিজেকে প্রমাণ করেছে দোন্নারুম্মা। একটিও গোল খায়নি। দুটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছে। দারুণ নমনীয় শরীর। যদিও ইটালি এ বার যে রকম ছন্দে রয়েছে, মনে হয় না অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচটা টাইব্রেকারে গড়াবে। গেলেও দোন্নারুম্মাকে আমি এগিয়ে রাখব। অস্ট্রিয়ার গোলরক্ষক ড্যানিয়েল বাখম্যানও ভাল। গ্রুপ পর্বে তিনটি গোল খেলেও চার বার দলের নিশ্চিত পতন রোধ করেছে।
রুই প্যাত্রিসিয়া: পর্তুগালের শেষ প্রহরী গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে ছ’টি গোল খেলেও বাঁচিয়েছে ১১টি। দীর্ঘ দিন ধরে খেলছে। টাইব্রেকারে প্যাত্রিসিয়াও নায়ক হতে পারে।
উনাই সাইমন: স্পেনের নতুন এই গোলরক্ষককে দেখে বেশ ভাল লেগেছে। দারুণ ফিটনেস। লুইস এনরিকে যে ওর উপরে আস্থা রেখে ভুল করেননি, তা প্রমাণ করেছে। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে মাত্র একটি গোল খেয়েছে। তবে ২৮ জুন ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচে কিন্তু সাইমনকে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হতে পারে। বিপক্ষে লুকা মদ্রিচের মতো তারকা রয়েছে। ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচকে এখনও সে ভাবে জ্বলে উঠতে দেখিনি। তাই ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালে সাইমনের জন্যই স্পেনকে এগিয়ে রাখব।