পরীক্ষা: গুয়ার্দিওলার পাখির চোখ সেই প্রিমিয়ার লিগ। ফাইল চিত্র
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শুরু হচ্ছে শুক্রবার। প্রথম দিনই মাঠে নামছে ইউরোপের সেরা ক্লাব লিভারপুল। অ্যানফিল্ডে তাদের প্রথম প্রতিপক্ষ এ বারই প্রিমিয়ার লিগে যোগ্যতা অর্জন করা নরউইচ। শনিবার খেতাব রক্ষার লড়াই শুরু হচ্ছে পেপ গুয়ার্দিওলার ম্যাঞ্চেস্টার সিটির। অ্যাওয়ে ম্যাচ তাদের খেলতে হবে সাউদাম্পটনের বিরুদ্ধে।
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড জমানার পরে প্রিমিয়ার লিগে এত দাপট ম্যান সিটিই প্রথম দেখাচ্ছে। তাদের সামনে লিগ জয়ের হ্যাটট্রিকের হাতছানি। ফুটবল বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, তাদের নজির গড়ার পথে এ বারও সব চেয়ে বড় কাঁটা হয়ে উঠতে পারে লিভারপুল। যে কথা স্বীকার করেছেন স্বয়ং গুয়ার্দিওলাও।
দু’দলের আকচা-আকচির শুরুর মহড়া হয়ে গেল রবিবার কমিউনিটি শিল্ডে। যে ম্যাচে নির্ধারিত সময়ে ফল ছিল ১-১। রাহিম স্টার্লিং ১২ মিনিটে ১-০ করলেও ৭৭ মিনিটে গোল শোধ করেন লিভারপুলের জোয়েল মাতিপ। ম্যান সিটিই অবশ্য শিল্ড জেতে। তবে টাইব্রেকারে। গত বার ম্যান সিটি খেতাব জিতলেও লিগে তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছে য়ুর্গেন ক্লপের ফুটবলাররা। প্রায় দু’দশক পরে ইংল্যান্ডের ফুটবল লিগে সেরার খেতাব জিততে তারা যে এ বারও মরিয়া হয়ে উঠবে তা মেনে নিয়েছেন লিয়োনেল মেসির প্রাক্তন গুরু গুয়ার্দিওলা। তাঁর কথায়, ‘‘লিভারপুল এমন একটা দল যাদের প্রত্যেকটা পজিশনে সেরা ফুটবলাররা আছে। রিজার্ভ বেঞ্চও অসম্ভব ভাল। সবার উপরে থাকবে ওদের ম্যানেজারের রণকৌশল তৈরির ক্ষমতা। আশঙ্কা করছি, এ বারও লিভারপুলই আমাদের চাপে রেখে যাবে।’’
মরসুম শুরুর ঠিক আগে ম্যান সিটি চমকে দিয়েছে আতলেতিকো দে মাদ্রিদের রদ্রিকে ক্লাবের ইতিহাসে রেকর্ড প্রায় ৫৪৩ কোটি টাকায় সই করিয়ে। পেপের আশা হালফিলে ইংল্যান্ডের এই ক্লাবের সাফল্য ধরে রাখতে এত টাকা খরচ করা সার্থক হবে। গত দুই মরসুমে পাঁচটি বড় টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পেপের ক্লাব। যার মধ্যে রয়েছে গত বারের আগের বার প্রিমিয়ার লিগে ১০০ পয়েন্ট তোলার বিরল নিজর গড়ার কৃতিত্ব। গ্যাব্রিয়েল জেসুসরা কম যাননি গত বারও। ৯৮ পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ম্যান সিটি। স্বভাবতই এ বারও খেতাব জয়ের দৌড়ে ইংল্যান্ডের জুয়াড়িরা তাদেরই ফেভারিট ধরছে। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের পরে সিটিই প্রথম লিগ জয়ের হ্যাটট্রিক করবে ধরে নিচ্ছে।
পেপের কোচিংয়ে শেষ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী ক্লাব বার্সেলোনা। ২০১১ সালে। এই বিখ্যাত কোচ ইউরোপ সেরার ট্রফির থেকে লিগ জেতাকে কঠিন বলে মনে করেন। বলেছেন, ‘‘এখন আমার প্রধান লক্ষ্য থাকে দু’টো। ছেলেদের মনঃসংযোগ ঠিক রাখা এবং ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা। যেটা একমাত্র সম্ভব প্রিমিয়ার লিগে। লিগ মানে স্থায়ী লড়াই। প্রতি সপ্তাহের শেষে পরীক্ষা। ধারাবাহিক থাকতেই হবে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে একটা-দু’টো ম্যাচেই অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে। ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকে না। তবে আমার মনে হয় প্রিমিয়ার লিগ জিতলে ইউরোপ সেরার লড়াইটা বেশি ভাল করা যাবে। তাই এই মুহূর্তে প্রিমিয়ার লিগ জয় ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করতে চাই না।’’
পেপ জানেন কাজটা কঠিন। গত বারই লিগ দু’নম্বরে শেষ করেছে লিভারপুল ৯৭ পয়েন্টে। লিগের ৩৮টি ম্যাচের মাত্র একটিতে হেরে। সেই হারটা ছিল ম্যান সিটির কাছে। অল্পের জন্য খেতাব হাতছাড়া হওয়ার আফসোস অবশ্য ক্লপের অনেকটাই মিটেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে। কিন্তু এখন এই জার্মান কোচ মনে করছেন, তা প্রাচীন কালের কথা। তাঁরও পাখির চোখ প্রিমিয়ার লিগ। আর সব চেয়ে বড় অস্ত্র বিশ্বের সেরা রক্ষণ এবং আক্রমণে অসাধারণ সাদিয়ো মানে ও মহম্মদ সালাহর উপস্থিতি। লিভারপুলের তারকা ফুটবলার জর্জিনো ওয়াইনালডম বলেছেন, ‘‘শুরুতে যত বেশি সম্ভব পয়েন্ট তুলে নিতে হবে। সঙ্গে এমন একটা দল হয়ে উঠতে হবে যারা লিগের শেষ দিকে আরও শক্তিশালী রূপ নেয়। আমার তো মনে হয় আমাদের দলটার নতুন মরসুমে আরও ভাল খেলার ক্ষমতা আছে। কিন্তু যা কিছু করার শুরু থেকে একসঙ্গে করতে হবে।’’