দুপুরে রটল মৃত্যুর গুজব, সন্ধেয় চলে গেলেন হানিফ

দুপুরে হঠাৎ গুজব রটে যায়, হানিফ মহম্মদ আর নেই। মিনিট পনেরোর মধ্যে খবরটা ভুল বলে জানাজানি হতে আমরা, সাংবাদিকরাও যে যার দফতরে ফেরত চলে যাই। সারা দেশ তখন স্বস্তি ফেলেছিল।

Advertisement

ফয়জান লাখানি

করাচি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২০
Share:

হানিফ মহম্মদ। ২১ ডিসেম্বর ১৯৩৪—১১ অগস্ট ২০১৬

দুপুরে হঠাৎ গুজব রটে যায়, হানিফ মহম্মদ আর নেই। মিনিট পনেরোর মধ্যে খবরটা ভুল বলে জানাজানি হতে আমরা, সাংবাদিকরাও যে যার দফতরে ফেরত চলে যাই। সারা দেশ তখন স্বস্তি ফেলেছিল।

Advertisement

কিন্তু সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামতেই ফের ছড়াল সেই খবর। তবে এ বার আর গুজব নয়।

করাচির আগা খান হাসপাতাল থেকেই সরকারি ভাবে জানিয়ে দেওয়া হল, তিনি সত্যিই নেই। জীবনের ক্রিজে দাঁড়িয়ে এ বার আর ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পেলেন না হানিফ মহম্মদ। চলে গেলেন ৮১ বছর বয়সে।

Advertisement

আগা খান হাসপাতালের আইসিইউ-তে যে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে রাখা হয়েছিল তাঁকে, তা আর কাজ করছে না— দুপুর একটা নাগাদ এমনই খবর রটে যায় সারা ক্রিকেট বিশ্বে। সোশ্যাল মিডিয়া মারফত তা দাবানলের মতো ছড়িয়েও পড়ে। হানিফ-পুত্র শোয়েব নিজেই সে রকম শুনেছেন বলে ধরা গলায় কথাগুলো ফোনে বলেছিলেন তখন। তাঁর মৃত্যুর গুজব শুনে হাসপাতালে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী সিন্ধ মুরাদ আলি শাহ। তাঁর চিকিৎসার জন্য দশ লক্ষ টাকার সরকারি অনুদানও ঘোষণা করে দিয়েছিলেন।

পনেরো মিনিট পরে যখন হাসপাতালে গিয়ে শোনা গেল খবরটা ঠিক নয়, তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শোয়েবকে বলতে শোনা যায়, ‘‘শুনলাম ছ’মিনিটের জন্য নাকি আব্বুর হৃদযন্ত্র থেমে গিয়েছিল। আল্লাহই ফিরিয়ে এনেছেন ওঁকে। সারা দেশের লক্ষ লক্ষ ভক্তের প্রার্থনার জোরে উনি ফিরে এসেছেন।’’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য সরকারি ভাবে এমন কোনও কথা স্বীকার করতে রাজি হননি। তাঁরা জানান, এটা নিছকই একটা ‘মিসকমিউনিকেশন’। বোধহয় বুঝতে ভুল করেছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তা হলে ছ’মিনিটের জন্য তাঁর হৃদযন্ত্র থেমে গিয়েও তাঁর জীবন ফিরে পাওয়ার খবর কি ঠিক ছিল না? না, এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি আগা খান হাসপাতালের মুখপাত্র। হাসপাতালের অন্য একটি সূত্র জানায়, ওটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া কিছুই নয়।

ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছিলেন বেশ কয়েক বছর ধরে। সপ্তাহ খানেক আগে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ক্রমশ শারীরিক অবস্থার উন্নতিও হয় তাঁর। গত সোমবার রাতে ফের অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউ-তে নেওয়া হয়। তার পর থেকেই তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। বৃহস্পতিবার সেই কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র দিয়েও তাঁকে ধরে রাখা গেল না। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দীর্ঘতম ইনিংসের মালিক জীবনের দীর্ঘ ইনিংসে এ বার আউট হয়ে গেলেন।

প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ থেকে আইসিসি শীর্ষকর্তারা— শোকবার্তা পাঠান সবাই। জাহির আব্বাস থেকে শোয়েব আখতার— পাকিস্তানের ক্রিকেট মহলে সবাই বলছেন, পাক ক্রিকেট সাম্রাজ্যের অনেকটা জায়গা ফাঁকা করে দিয়ে চলে গেলেন তিনি।

১৯৫২-য় দিল্লিতে প্রথম টেস্ট খেলার সময় তিনি তাঁর হাইস্কুল জীবনের শেষ দিকে। ১৯৫৮-য় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দীর্ঘতম ইনিংসটি খেলেন ব্রিজটাউনে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। ষোলো ঘন্টারও বেশি সময় তিনি ক্রিজে ছিলেন সেই ম্যাচে। করেছিলেন ৩৩৭ রান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও সবচেয়ে বেশি রানের ইনিংসটির মালিক ছিলেন তিনিই। করাচিতে করা ৪৯৯ রানের সেই নজির গড়া ইনিংস ৩৫ বছর অক্ষত থাকার পর ব্রায়ান লারা সেই রেকর্ড ভেঙেছিলেন ৫০১-এর ইনিংস খেলে। হানিফের প্রায় পুরো পরিবারই ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর অভিষেক টেস্টে তাঁর সঙ্গে খেলেছিলেন তাঁর ভাই ওয়াজির। অন্য ভাইয়েরা মুস্তাক ও সাদিকও দেশের হয়ে খেলেছিলেন। হানিফের শেষ টেস্টে তাঁরাও খেলেছিলেন। আর এক ভাই রইস প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন।

হানিফের মুখ অবশ্য উজ্জ্বল করেন তাঁর পুত্র শোয়েব। সেই শান্তি নিয়েই এই দুনিয়া ছেড়ে গেলেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement