ক্যাপ্টেন হিসেবে স্মরণীয় সব জয় উপহার দিয়েছেন। এ বার বোর্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য সৌরভের। — ফাইল চিত্র।
সে দিন আর এ দিন এসে মিশে গেল একই বিন্দুতে। সাল ২০০০। ম্যাচ গড়াপেটার কালো মেঘে আচ্ছন্ন ভারতীয় ক্রিকেট। চরম অবিশ্বাসের বাতাবরণ। এ রকম এক কঠিন সময়ে ভারতীয় দলের নেতা হয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তার পরের ঘটনা সবারই জানা।
১৯ বছর পরে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের মসনদে সৌরভ। এ বার তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্ট। এখনও এক অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে চলছে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসন। লোঢা সংস্কারের ফলে নেমে এসেছে নানা বিধিনিষেধ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিযুক্ত সিওএ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে বোর্ড।
এ রকমই এক পরিস্থিতিতে বিসিসিআই-এর নেতা হলেন সৌরভ। সভাপতি পদে এক মাত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েই, বোর্ডের অস্থির এই সময়কে ‘এমার্জেন্সি’ বলে উল্লেখ করেন বহুযুদ্ধের সৈনিক, ভারতের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন। সোমবার মুম্বইয়ে বোর্ডের সদর দফতরে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বেরনোর পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গত তিন বছর ধরে বোর্ডের যা অবস্থা চলছে, তাতে একে এমার্জেন্সিই বলা যায়। আমাদের আট জনের যে দল তৈরি করা হয়েছে, সেই টিম নিয়ে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে স্থিরতা ফেরাতে হবে। বিশ্বের সেরা করতে হবে ভারতীয় ক্রিকেটকে।’’
আরও পড়ুন: মধ্যরাতের নাটক! হেরে যেতে যেতেও কী ভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন সৌরভ
ক্যাপ্টেনের শিরস্ত্রাণ মাথায় চাপিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটকে অন্য পথে পরিচালিত করেছিলেন সৌরভ। নতুন এক দল গড়াই ছিল সৌরভের প্রধান লক্ষ্য। বীরেন্দ্র সহবাগ, যুবরাজ সিংহ, হরভজন সিংহ, জাহির খানের মতো ক্রিকেটার সৌরভের সময়েই নিজেদের মেলে ধরেছিলেন। ২০০৩ সালে প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলার দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ভারতকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে।
বোর্ডের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অস্থির সময় কাটিয়ে তোলাই সৌরভের উদ্দেশ্য। তিনি জানেন তাঁর পথ কতটা কঠিন। সৌরভ বলছেন, ‘‘টিম হিসেবে অনেক কাজ আমাদের করতে হবে। ক্রিকেট টিম হিসেবে মাঠের ভিতরে দুরন্ত পারফরম্যান্স করছে ভারতীয় দল। কিন্তু, ক্রিকেটকে আরও ভাল জায়গায় নিয়ে যেতে হলে প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। পিছন থেকে সেই কাজটাই আমাদের সাবলীল ভাবে করে যেতে হবে।’’
আরও পড়ুন: বিজেপির হয়ে প্রচারের শর্তেই কি বোর্ড প্রেসিডেন্ট? সৌরভ বললেন...
বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমেই কোন বিষয়ের উপরে জোর দেবেন সৌরভ? সেই প্রশ্ন উড়ে আসতেই এক মুহূর্ত সময় খরচ না করে সৌরভ বলেন, ‘‘প্রথমেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের উপরে জোর দেব। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটই যে কোনও দেশের ক্রিকেটের মেরুদণ্ড। গত তিন বছর ধরে আমি বিভিন্ন লেখায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছি এবং তাদের পারিশ্রমিক বেড়েওছে। এটার উপরেই আমি জোর দেব প্রথমে।’’
রবিবার নাটকীয় পট পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে সৌরভকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেন সবাই। এক সময়ে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল, ব্রিজেশ পটেল বোর্ড প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। সৌরভ পিছিয়ে পড়েছেন সেই দৌড়ে। এর পরেই জোরালো ভাবে ফের সৌরভ ঢুকে পড়েন দৌড়ে। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘‘বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ আমি কারও কাছেই করিনি। রাত সাড়ে দশটা পর্যন্তও জানতাম না আমিই বোর্ড প্রেসিডেন্ট হচ্ছি। তার পরে বলা হয় বোর্ড প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পাচ্ছি আমি।’’
২৩ অক্টোবর সরকারি ভাবে বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসবেন সৌরভ। জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে এক সময়ে স্মরণীয় সব জয় উপহার দিয়েছেন তিনি। এ বার ‘ক্যাপ্টেন’ হিসেবে বিসিসিআই-কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ। হাতে মাত্র ১০ মাস সময়।