পুনর্মিলন: অনুশীলনের পরে ক্রোমার সঙ্গে কামো। নিজস্ব চিত্র
তিন মাস আগেও কলকাতা লিগে চুটিয়ে খেলছিলেন আইভরি কোস্টের দুই সহোদর। মোহনবাগানে কামো স্টিফেন বায়ি। আর রেনবো-য় বাজি আর্মান্দ। রানিকুঠির ফ্ল্যাট থেকে দুই ভাই খেলতে যেতেন দুই দলের হয়ে। গত সেপ্টেম্বরে কলকাতা লিগে ভাই বাজি-র রেনবো এফসি-কে হারাতে পারেনি দাদা কামোর মোহনবাগান। ম্যাচ শেষ হয়েছিল ১-১। সে বার বাজি হুঙ্কার ছেড়েছিলেন, ‘‘কামোকে গোল করতে দেব না।’’
কলকাতা লিগের পর আইভরি কোস্টের কামো স্টিফেন বায়ি-কে ছেড়ে দিয়েছিলেন মোহনবাগান কর্তারা। লিগ চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিল তখন আই লিগের জন্য দলের পঞ্চম বিদেশি খুঁজছেন। তাঁর নোটবুকে নাকি নাম ছিল কামো এবং বাজি এই দুই ভাইয়ের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাঝমাঠ এবং রক্ষণ পোক্ত করার কথা ভেবে লাল-হলুদ শিবিরের কোচ ডেকে নেন বাজি-কে। আর কামো চলে যান কেরলের গোকুলম এফসি-তে।
বুধবার ফের দুই যুযুধান দলে আইভরি কোস্টের এই দুই ভাই। এ বার অবশ্য রানিকুঠির ফ্ল্যাটে নেই দু’জনে। কামো রয়েছেন নিউটাউনের হোটেলে। ভাইকে কলকাতা এসেই ফোন করে বলে দিয়েছেন, ‘‘ম্যাচের পর হোটেলে আয়। তখন জমিয়ে আড্ডা দেব।’’
মহড়া: গোকুলম-কে হারাতে প্রস্তুতিতে মগ্ন চার্লস ডি’সুজা ও বাজি আর্মান্দ। ছবি: সুমন বল্লভ।
হুঙ্কারের ছবিটাও পাল্টে গিয়েছে এ বার। মঙ্গলবার সকালে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন মাঠে অনুশীলনের পর কামো আগ্রাসী মেজাজে বলে গেলেন, ‘‘কলকাতা লিগে কী হয়েছে, তা ভুলে যান। আই লিগে অন্য খেলা। নব্বই মিনিট কেউ আমার ভাই নয়।’’ বাজি তখন তাঁর ‘খালিদ স্যার’-এর পরামর্শ নিয়ে তাঁবু ছেড়েছেন মুখে কুলুপ এঁটে। নির্লিপ্ত ভাবে।
আই লিগ টেবলে এই মুহূর্তে টানা তিন ম্যাচ জিতে পঞ্চম রাউন্ডের পর ১০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ইস্টবেঙ্গল। কেরলের গোকুলম চতুর্থ রাউন্ডের পর চার পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকায় রয়েছে অষ্টম স্থানে। গত সপ্তাহেই ইন্ডিয়ান অ্যারোজ-কে ২-০ হারিয়ে প্রথম জয় পেয়েছে এ বারই প্রথম আই লিগে খেলতে আসা কেরলের এই কর্পোরেট দলটি। তাদের কোচ বিনু জর্জ নয়ের দশকে খেলে গিয়েছেন কলকাতায় মহমেডান স্পোর্টিং-এ। তিনিও বলছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলকে টিভিতে দেখেছি। কলকাতা থেকে পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে চাই। কারণ গত কয়েক বছর আই লিগে কেরলের কোনও দল নেই। তাই রাজ্যের মানুষও তাকিয়ে রয়েছেন এই ম্যাচটার দিকে।’’ আর কামো? বিনু এ বার বলেন, ‘‘গত দুই ম্যাচ চোটের জন্য খেলেনি। বুধবার নামতে পারে।’’
ইস্টবেঙ্গল বুধবার খেলার পরেই বেরিয়ে পড়বে টানা চার অ্যাওয়ে ম্যাচের জন্য। তার পরে কলকাতায় ফিরেই উইলিস প্লাজাদের খেলতে হবে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। ইস্টবেঙ্গল কোচ তাই বলছেন, ‘‘অ্যাওয়ে ম্যাচ নিয়ে ভাবব গোকুলম-এর বিরুদ্ধে খেলার পর। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে কেউ খেলতে নামলে একশো শতাংশ দেবে তা জানি। তাই গোকুলম-কে হাল্কা ভাবে নেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। ম্যাচটা আমাদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ।’’
মঙ্গলবার সকালে ইস্টবেঙ্গল অনুশীলন দেখে মনে হচ্ছে, চেন্নাই ম্যাচের দলে কোনও পরিবর্তন খুব সম্ভবত আসছে না। অর্থাৎ বাজি আর্মান্দ নামতে পারেন পরিবর্ত হিসেবে। দুই স্ট্রাইকার উইলিস প্লাজা এবং চার্লস ডি’সুজা। চার্লস-এর স্ত্রী কলকাতায় আসায় ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার অনুশীলনেও বেশ চনমনে। এ দিন দুই স্ট্রাইকারের মনোবল আরও বাড়াতে অনুশীলনের পর খালিদ ফাঁকা গোলে বল মারতে দিয়েছিলেন প্লাজা এবং চার্লসকে। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন প্লাজা। যদিও সে সব মাথায় না রেখে ক্যারিবিয়ান স্ট্রাইকার বলছেন, ‘‘আমার গোলের চেয়েও দলের তিন পয়েন্ট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার জন্য কোনও চাপ নেই। চাপ একমাত্র আসে দল হারতে থাকলেই।’’
ম্যাচে দুই সহোদরের মতো দুই দেশোয়ালি ভাইয়ের লড়াইও থাকছে। সিরিয়ার আল আমনাও নামবেন গোকুলম-এ খেলা তাঁর স্বদেশীয় ফুটবলার খালেদ আল সালাহ্-র বিরুদ্ধে। যার নাম শুনে ইস্টবেঙ্গলের মিডফিল্ড জেনারেল বলছেন, ‘‘ওর বিরুদ্ধে খেলেছি দেশে থাকার সময়। তখন জিতেছি। কাল ফের নামব তিন পয়েন্ট নিয়ে আসতে।’’
বুধবার: আই লিগ: ইস্টবেঙ্গল বনাম গোকুলম এফসি (যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে খেলা শুরু রাত ৮ টা থেকে)। সরাসরি সম্প্রচার স্টার স্পোর্টস টু চ্যানেলে।