জুটি: ইস্টবেঙ্গলের দুই গোলদাতা মার্তি (বাঁ দিকে) ও মার্কোস। —নিজস্ব চিত্র।
ইস্টবেঙ্গল ২ • ট্রাউ ১
শেষ মুহূর্তের গোলে নাটকীয় জয়। ৪ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে আই লিগ টেবলের শীর্ষে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু ডার্বির এক সপ্তাহ আগে লাল-হলুদ শিবিরে উদ্বেগ।
শনিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষ হওয়ার দু’মিনিট আগে মার্তি ক্রেসপি গোল করতেই লাফিয়ে উঠলেন আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া। দু’হাত শূন্যে তুলে আনন্দে চিৎকার করে গ্যালারির সামনে চলে যান তিনি। দর্শকদের অনুরোধ করলেন উৎসবে যোগ দিতে। আলেসান্দ্রোকে এর আগে কখনও এ ভাবে আবেগে ভেসে যেতে দেখা যায়নি।
ম্যাচ দেখতে আসা ৯ হাজার ৮৩২ জন লাল-হলুদ সমর্থকদের রক্তচাপও আলেসান্দ্রোর মতোই বেড়ে গিয়েছিল। ট্রাউয়ের বিরুদ্ধে ১৭ মিনিটে মার্কোস ইউসেবিয়ো খিমেনেস দে লা এসপারা মার্তিনের গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। তার পরেই শুরু হয় গোল নষ্টের প্রতিযোগিতা। সামাদ আলি মল্লিকের শট ক্রসবার ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। অভিষেক আম্বেকরের শট দুর্দান্ত ভাবে বাঁচান ট্রাউ গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিংহ। এই পরিস্থিতিতে প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে গোল করে ট্রাউয়ের ডিফেন্ডার দীপক দেবরানি সমতা ফেরাতেই আতঙ্ক গ্রাস করতে শুরু করে লাল-হলুদ সমর্থকদের। ৮৮ মিনিটে ক্রেসপি তাঁদের উদ্ধার করেন।
উৎসব: ট্রাউকে হারানোর পরে ভাইকিং ক্ল্যাপ ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের। শনিবার কল্যাণীতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
দিন তিনেক আগে কল্যাণীতে ট্রাউকে ৪-০ হারিেয়ছিল মোহনবাগান। সেই দলকে হারাতে কেন হিমশিম খেল ইস্টবেঙ্গল?
নিঃসঙ্গ মার্কোস: প্রথম একাদশে মার্কোসের সঙ্গে রোনাল্ডো অলিভিয়েরাকে ফরোয়ার্ডে রাখেন আলেসান্দ্রো। সমালোচনায় বিদ্ধ স্পেনীয় স্ট্রাইকার গোল করে কোচের আস্থার মর্যাদা দিলেন। চার ম্যাচে তিনটি গোল তাঁর। কিন্তু সতীর্থের কাছ থেকে তিনি সে ভাবে সাহায্যই পেলেন না। নির্বাসিত খাইমে কোলাদোর শূন্যস্থান রোনাল্ডোকে দিয়ে পূরণ করার কথা ভেবেছিলেন আলেসান্দ্রো।
আরও পড়ুন: ইপিএলে লিভারপুল ছুটছে, তাল কাটল চেলসির
৬৫ মিনিটে তাঁকে তুলে বিদ্যাসাগর সিংহকে নামান আলেসান্দ্রো। স্বস্তি ফিরল মার্কোসের। তেজ বাড়ল ইস্টবেঙ্গল আক্রমণের।
ছন্দহীন মাঝমাঠ: কোলাদো ছিটকে যেতেই যেন ছন্দ কেটে গেল মাঝমাঠে। খুয়ান গঞ্জালেস গত তিনটি ম্যাচে মাঠে নেমে ফুল ফুটিয়েছিলেন, এ দিন তিনি বিবর্ণ। মার্কোস, কোলাদো ও মেরা যেন একে অপরের পরিপূরক। এক জন না থাকলেই সুর কেটে যায়। কাশিম আইদারা ও পিন্টু মাহাতোকেও দ্বিতীয়ার্ধে চেনা মেজাজে পাওয়া যায়নি। পাস খেলতে খেলতে বিপক্ষের রক্ষণ ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার ছবিটাই হারিয়ে গিয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠ ছন্দ হারানোয় বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে গেল ট্রাউ। প্রেমজিৎ সিংহের নেতৃত্বে মাঝমাঠে শাসন করল তারা।
ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠের ছবি বদলাল ৬৫ মিনিটে জোড়া পরিবর্তনে। পিন্টুর পরিবর্তে অভিজিৎ সরকার নামলেন। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে খেলা এই ফুটবলার ছিলেন ক্রেসপির গোলের নেপথ্যে।
রক্ষণে বোঝাপড়ার অভাব: ট্রাউয়ের আক্রমণভাগে মার্কোস বা উইলিস প্লাজ়ার মতো স্ট্রাইকার থাকলে হাসি মুখে ফিরতে পারতেন না আলেসান্দ্রো। রক্ষণের দুই প্রধান স্তম্ভ ক্রেসপি ও আশির আখতারের মধ্যে বোঝাপড়া অভাব বারবারই বিপদ ডেকে আনছিল। এই দুর্বলতার সুযোগে গোল শোধ করেন দীপক।
ইস্টবেঙ্গল কোচ অবশ্য দাবি করলেন, দলের খেলায় উদ্বিগ্ন নন। সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘‘আমরা প্রচুর গোলের সুযোগ নষ্ট করেছি।’’ যোগ করেন, ‘‘চব্বিশ ঘণ্টা আগেই বলেছিলাম, ট্রাউ শক্তিশালী দল।’’ জিতলেও ডার্বির আগে এই পারফরম্যান্স কি চিন্তায় রাখছে না? লাল-হলুদ কোচের জবাব, ‘‘এগারো দিনে চারটি ম্যাচ খেলতে হয়েছে। ফুটবলারদের এখন বিশ্রাম দরকার। তা হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ডার্বির জন্য আমরা তৈরি।’’
ইস্টবেঙ্গল: লালথুয়ামাওয়াইয়া রালতে, সামাদ আলি মল্লিক (তনদোম্বা নওরেম), মার্তি ক্রেসপি, আশির আখতার, অভিষেক আম্বেকর, পিন্টু মাহাতো (অভিজিৎ সরকার), কমলপ্রীত সিংহ, কাশিম আইদারা, খুয়েন মেরা গঞ্জালেস, রোনাল্ডো অলিভিয়েরা (বিদ্যাসাগর সিংহ) , মার্কোস ইউসেবিয়ো খিমেনেস দে লা এসপারা মার্তিন।
ট্রাউ: গুরপ্রীত সিংহ, অভিষেক দাস, সন্দীপ সিংহ, দীপক দেবরানি, প্যাট্রিক উচে, ধনচন্দ্রম মিতেই, ফাল্গুনি সিংহ (সিলভা), ওয়াহেংবাম লুয়াং, কৃষ্ণনন্দ সিংহ (কোফি), প্রেমজিৎ সিংহ, প্রিন্সউইল এমেকা (নাগাংবেম নাওচা)।