অনশন শুরুর আগে বুধবার রাতে এসএসসি ভবনের সামনে চাকরিহারা প্রার্থীরা। —নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার থেকে সল্টলেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের দফতরের সামনে অনশন শুরু করেছেন তিন জন চাকরিহারা শিক্ষক। রাতে ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও সেখানেই ঠায় বসে রইলেন তাঁরা। অনশনকারীদের মধ্যে আছেন সুমন বিশ্বাস, পঙ্কজ রায় এবং প্রতাপ রানা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাঁদের চাকরি গিয়েছে। রাতে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা বর্তমানে বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার সকালে তিন জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।
শুক্রবার যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের সদস্যেরা এসএসসি ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন। সল্টলেকের করুণাময়ী থেকে এসএসসি ভবন পর্যন্ত মিছিলে হাঁটবেন তাঁরা। যেখানে অনশন চলছে, সেখানে মিছিল শেষ হবে। এ ছাড়া চাকরিহারাদের একাংশ শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠক করতে বিকাশ ভবনে যাবেন। দিনভর আন্দোলন কর্মসূচিতে শহরের একাংশে যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার বেলার দিকে বিকাশ ভবনে চাকরিহারাদের সঙ্গে কথা বলবেন ব্রাত্য। ওই বৈঠকে চাকরিহারাদের আট জন প্রতিনিধি যাবেন বলে এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়েছে। বৈঠকে থাকবেন এসএসসির চেয়ারম্যান এবং অন্য প্রতিনিধিরা। আন্দোলনরত চাকরিহারারা জানিয়ে দিয়েছেন, বৈঠক যদি ফলপ্রসূ না-হয়, তবে আগামী দিনে তাঁরা আন্দোলন আরও জোরদার করবেন। এসএসসি ভবনের সামনে অবস্থানেও বসতে পারেন তাঁদের কেউ কেউ।
এসএসসি ভবনের সামনে চাকরিহারাদের কয়েক জন বুধবার থেকেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার থেকে অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নেন তাঁদের তিন জন। রাতে অভিজিৎ গিয়ে তাঁদের অনশন তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন বলে খবর। তমলুকের সাংসদ জানিয়েছেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করতে হবে চাকরিহারাদের। কিন্তু তিনি আমরণ অনশনের বিরোধী। চাকরিহারাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন অভিজিৎ।
এসএসসি নিয়োগ মামলায় ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার ফলে প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি গিয়েছে। এঁদের মধ্যে অযোগ্যদের সঙ্গে অনেক যোগ্য প্রার্থীও আছেন। চাকরি ফেরানোর দাবিতে পথে নেমেছেন তাঁরা। এসএসসি মামলায় মূল জটিলতা তৈরি হয়েছে যোগ্য এবং অযোগ্যদের বাছাই নিয়ে। উত্তরপত্রের তথ্য উদ্ধার করা যায়নি। তাই যোগ্য কারা এবং অযোগ্য কারা, আলাদা করা যায়নি। সেই কারণেই সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করতে হয়েছে। আদালতের নির্দেশের পর উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটের ‘মিরর ইমেজ’ প্রকাশ্যে আনার দাবি জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও সেই প্রসঙ্গ উঠতে পারে। এ বিষয়ে সরকার কোনও সমাধান সূত্র দিতে পারে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ্য চাকরিহারাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। জানিয়েছেন, কারও চাকরি যাবে না। সুপ্রিম কোর্টে রায়ের ব্যাখ্যা চাইবে রাজ্য সরকার। সমাধানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। রিভিউ পিটিশনও দাখিল করা হবে। তার আগে আপাতত যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের স্বেচ্ছায় পরিষেবা (ভলান্টারি সার্ভিস) দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চাকরিহারারা অনেকেই এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারেননি। সসম্মানে চাকরি এবং পদ ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার শিয়ালদহ থেকে তাঁদের একটি মিছিল গিয়েছিল ধর্মতলা পর্যন্ত। ডোরিনা ক্রসিংয়ের সামনে তাঁরা অবস্থানেও বসেছিলেন। যার ফলে মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল।