ফাইল চিত্র
আইএসএলের হাত ধরে ভারতীয় ফুটবলও এ বার ঢুকে পড়ছে জৈব সুরক্ষা বলয়ে! তেমনই কলকাতার একটি প্রধান দলকে দেখা গেলেও অন্যটিকে নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। নতুন সংযুক্তিকরণের পরে এটিকে-মোহনবাগানের আইএসএল খেলা নিশ্চিত। আর এ বারের মতো সময় ফুরিয়ে আসছে ইস্টবেঙ্গলের।
দশটি দলকে নিয়ে নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা দেশের সর্বোচ্চ লিগ। মারণ ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে এই মরসুমে একটি কেন্দ্রে সব ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছেন আইএসএল কর্তৃপক্ষ। গোয়া না কেরল— শেষ পর্যন্ত কোন রাজ্যে এই প্রতিযোগিতা হবে, তা অগস্টেই চূড়ান্ত হওয়ার কথা। তবে যেখানেই ম্যাচ হোক, স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ঝুঁকি নেওয়া হবে না। ইতিমধ্যেই আইএসএলে অংশগ্রহণকারী দশটি দলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে। তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে, জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করা। যে ভাবে ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট সিরিজ হচ্ছে।
কী ভাবে গড়ে তোলা হবে জৈব সুরক্ষা বলয়? যা জানা গিয়েছে, তা এ রকম—
ত্রিস্তরীয় সুরক্ষা: ফুটবলার, দলের অন্যান্য কর্মী এবং যাঁরা নিয়মিত ফুটবলারদের কাছাকাছি আসবেন, তাঁদের রাখা হচ্ছে সর্বোচ্চ সুরক্ষা (হাই প্রোটেকশন) বলয়ে। সপ্তাহে তিন দিন করোনা পরীক্ষা করা হবে প্রত্যেকের। দ্বিতীয় স্তরে (মিডিয়াম প্রোটেকশন) প্রতিযোগিতা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্মী, ক্লাবের অংশীদার, হোটেলের কর্মীরা থাকবেন। সপ্তাহে দু’বার পরীক্ষা করা হবে তাঁদের। সুরক্ষা বলয়ের তৃতীয় স্তরে থাকা অন্যান্য কর্মী, যাঁদের ফুটবলারদের কাছাকাছি যাওয়ার সম্ভাবনা কম, তাঁদের সপ্তাহে দু’বার করোনা পরীক্ষা করা হবে।
বাধ্যতামূলক নিভৃতবাস: আইএসএল খেলতে গোয়া বা কেরল পৌঁছনোর পরে বাধ্যতামূলক ভাবে দলের সকল সদস্যকে দু’সপ্তাহের (১৪ দিনের) নিভৃতবাসে থাকতে হবে। হোটেলের এক ঘরে এক জনের বেশি কেউ থাকতে পারবেন না।
নির্দিষ্ট মাঠেই খেলা: দশটি দলকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হবে। ‘এ’ গ্রুপে থাকবে চারটি দল। ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রুপে রাখা হবে তিনটি করে দল। প্রত্যেক গ্রুপের ম্যাচের জন্য মাঠ নির্দিষ্ট করা থাকবে। অর্থাৎ, গোয়ায় ফতোরদা, বাম্বোলিম ও ভাস্কো— এই তিনটি মাঠে আইএসএলের ম্যাচ হতে পারে। ধরা যাক, এটিকে-মোহনবাগান, বেঙ্গালুরু এফসি, চেন্নাইয়িন এফসি ও মুম্বই সিটি এফসি রয়েছে ‘এ’ গ্রুপে। তাদের জন্য যদি ফতোরদা স্টেডিয়াম নির্দিষ্ট করা হয়, সেক্ষেত্রে সব ম্যাচই সেখানে খেলতে হবে। একই রকম ভাবে ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রুপের দলগুলো খেলবে নির্দিষ্ট করা অন্য দু’টি মাঠে।
মাঠের পাশেই হোটেল: নির্দিষ্ট করে দেওয়া মাঠের কাছাকাছি হোটেলেই থাকতে হবে দলগুলোকে। একটি হোটেলে রাখা হবে দু’টি করে দলকে। প্রতিযোগিতা চলাকালীন যদি কেউ করোনায় আক্রান্ত হন, তাঁর জন্য নিভৃতবাসের ব্যবস্থাও থাকবে হোটেলে। সর্বক্ষণের জন্য থাকবেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। প্রতিযোগিতা চলাকালীন হোটেলের কর্মী থেকে টিম বাসের চালক— কেউ সুরক্ষা বলয়ের বাইরে যেতে পারবেন না। স্থানীয় ফুটবলারদেরও দলের সঙ্গে হোটেলে থাকতে হবে। কেউ যদি নির্দেশ অমান্য করেন, ইংল্যান্ড পেসার জোফ্রা আর্চারের মতোই শাস্তি পেতে হবে।
ভিডিয়ো কনফারেন্সেই টিম মিটিং: প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজ বা নৈশভোজ করতে হোটেলের ডাইনিং রুমে যাওয়া যাবে না। বাইরে থেকে খাবার আনাও নিষিদ্ধ। নিজেদের ঘরে বসেই সকলকে খেতে হবে। টিম মিটিং করতে হবে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে।
সুরক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় পরিকল্পনার কথা দশটি দলকেই শুধু জানানো হয়েছে। যার অর্থ, ইস্টবেঙ্গলের এ বার আইএসএলের খেলার সম্ভাবনা কার্যত শেষ। ৩১ অগস্ট আইএসএলের ক্রীড়াসূচি ঘোষণা হবে। ১০ অগস্টের মধ্যে ক্লাবগুলিকে তাদের জার্সি পাঠিয়ে দিতে হবে। কারণ, একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ভিডিয়ো গেম প্রস্তুকারক সংস্থা আইএসএলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সুনীল ছেত্রী, রয় কৃষ্ণদের নিয়ে তারা নতুন গেম বানাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে এখনও পর্যন্ত নতুন স্পনসরের নাম ঘোষণা করতে পারেননি ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। আর তাই আইএসএলের কর্তারাও এ বারে আর ইস্টবেঙ্গলের খেলার বিশেষ সম্ভাবনা দেখছেন না। প্রভাবশালী আইএসএল কর্তারা বলে দিচ্ছেন, ‘‘অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। দশটি দলকে নিয়েই যাবতীয় পরিকল্পনা আমরা করেছি। শীঘ্রই আইএসএলের সূচি ও কেন্দ্র ঘোষণা করব।’’ তাঁরা যোগ করেন, ‘‘করোনা-আবহে এত কম সময়ে ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে সব শর্তপূরণ করে আইএসএলে খেলার
সম্ভাবনা ক্ষীণ।’’