প্রস্তুতি: অনুশীলনে মার্কোসের সঙ্গে ক্রোমা (বাঁ দিকে)। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এগারো দলের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল দশ নম্বরে!
শেষ ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই হার!
হারের হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে লাল-হলুদ!
ম্যাচের আগের দিন বিকেল পর্যন্ত ক্লাব তাঁবু থেকে বিক্রি হয়েছে মাত্র দশটা টিকিট!
মাঠে দল অনুশীলন করছে আর দলের এক বিদেশি ফুটবলারকে মাঠে নামতে দিতে চাইছেন না কোচ। বাইরে দৌড়োদৌড়ি করে ক্ষোভ উগরে দিয়ে প্রত্যেক দিন হোটেলে ফিরে যাচ্ছেন স্পেনীয় ডিফেন্ডার মার্তি ক্রেসপি।
শতবর্ষ ছুঁতে যাওয়া ইস্টবেঙ্গলে বহু দুর্দিন এসেছে, উত্থান-পতনও হয়েছে। কিন্তু পঞ্জাব এফসির বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগের দিন ক্লাব তাঁবুতে যা হল, তা কখনও মনে হয় দেখেনি ময়দান। লাল-হলুদ তাঁবুতে বসেই প্রতিপক্ষ দলের কোচ মশালধরীদের হাল দেখে হাহুতাশ করছেন, সেটাই দেখা গেল বুধবার বিকেলে।
‘‘ইস্টবেঙ্গলের একটা ঐতিহ্য আছে। সেই ক্লাবের এ রকম অবস্থা দেখে খারাপই লাগছে। এখানে এসে শুনলাম মাত্র দশটা টিকিট বিক্রি হয়েছে। ওদের সমর্থকদের উচিত দলকে উদ্বুদ্ধ করতে মাঠে আসা। আশা করব সেটা দেখতে পাব।’’ বুধবার বিকেলে আই লিগের কনিষ্ঠতম কোচ ইয়ান ল সবাইকে অবাক করে দিয়ে অবলীলায় যখন এসব বলছেন, তখন বোঝা যায় না তিনি প্রতিপক্ষকে কটাক্ষ করছেন না সত্যিই ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতা দেখে ‘ব্যথিত’।
কলকাতার এক চিনা রেস্তরাঁর মালিকের ছেলে ইয়ান। তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা এই শহরেই। কোচিংয়ের শুরুও কলকাতায়। ঝরঝরে বাংলা বলেন বছর তেইশের এই ছটফটে যুবক। ফলে বাংলায় ইস্টবেঙ্গলের প্রভাব ও ব্যাপ্তি কতটা, তা জানেন তিনি। হয়তো সেই ভাবনা থেকেই এ সব বলা। এ বছরই পঞ্জাবের কোচের দায়িত্ব নিয়েই তিনি চমকে দিয়েছেন। ন’ম্যাচ পরে কয়েক দিন আগে মোহনবাগানের কাছে হেরেছে তাংর দল। লিগ টেবলে পঞ্জাব এখন দু’নম্বরে। সে জন্যই প্রতিপক্ষকে ম্যাচের আগে ‘সমবেদনা’ জানানোর পাশাপাশি পেশাদারি কথাও বেরিয়েছে ইয়ানের মুখ থেকে। বলেছেন, ‘‘এই সুযোগ নিতে হবে। আমরা সুবিধাজনক অবস্থায় আছি। ম্যাচটা ড্র হলেও ধরে নেব হেরে গিয়েছি। এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পেতে চাই। জিতলে খেতাবের লড়াইয়ে থেকে যাব।’’
গোলের মধ্যে থাকা দিপান্দা ডিকা এবং সের্খিয়ো বারবোজা রয়েছেন পঞ্জাবে। সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তনী কেভিন লোবো, সঞ্জু প্রধানের মতো অভিজ্ঞরা। কিংগসলে ওবুমেনেমের মতো ময়দানে খেলে যাওয়া বিদেশি স্টপারও আছে। ইন্ডিয়ান অ্যারোজ এবং আইজলের কাছে হারের পরে এ রকম একটা শক্তিশালী দলকে কি হারাতে পারবে আপনার দল? লাল-হলুদের নতুন কোচ মারিয়ো রিভেরা বলছেন, ‘‘ব্রুনেই-এ কোচিং করার সময় এর চেয়েও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছি। আমার কোনও চাপ নেই। শুধু একটা জয় চাই। দেখবেন পরিস্থিতি কেমন বদলে গিয়েছে।’’ চূড়ান্ত পেশাদার স্পেনীয় কোচ। তিনি যে অন্ধকারের মধ্যেও আলোর রেখা দেখাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবটা যে খুবই কঠিন। লাল-হলুদ কোচ যাঁকে বাদ দিয়েছেন, সেই মার্তি ক্রেসপি রোজ মাঠের পাশে দৌড়োদৌড়ি করছেন। বসে থাকছেন। এ দিন তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমার সঙ্গে কোনও ফুটবলারকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। কেন বাদ, সেটাও বলা হচ্ছে না। অনুশীলনেও নামতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রয়োজনে ফিফায় যাব।’’ শোনা যাচ্ছে, ক্রেসপির এই ক্ষোভের আঁচ না কি পড়েছে দলের অন্য স্পেনীয় ফুটবলারদের উপরেও। লালরিন্দিকা রালতের চোট। ‘বুড়ো’ গুরবিন্দর সিংহ অনুশীলন করছেন। কিন্তু সই হয়নি। পাঁচ বিদেশিকে নিয়েই তাই আজ কল্যাণীতে পঞ্জাব-জয়ের স্বপ্ন দেখতে হচ্ছে লাল-হলুদ কোচকে। ‘‘দল খুব ভাল খেলছে, কিন্তু জিতছে না। ভাগ্যটা দরকার,’’ বলার পরে মারিয়ো যোগ করেন, ‘‘ট্রাউকে দেখুন, হারতে হারতে জয়ে ফিরে এখন কোথায়?’’ পাশে বসে আনসুমানা ক্রোমার মন্তব্য, ‘‘মোহনবাগান যদি পঞ্জাবকে হারাতে পারে তা হলে আমরা পারব না কেন?’’
বৃহস্পতিবার আই লিগে: ইস্টবেঙ্গল বনাম পঞ্জাব এফসি (কল্যাণী, বিকেল ৫.০০)।