চর্চায়: মার্কোসের (বাঁ দিকে) বদলির দাবি বাড়ছে। নিজস্ব চিত্র
রবিবাসরীয় যুবভারতীতে ডার্বি শেষ হওয়ার মিনিট পনেরো পরেও গ্যালারিতে দু’হাতে মুখ ঢেকে বসেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের এক তরুণ সমর্থক। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন এ বারও পূর্ণ হবে না। ঠিক মতো দলই তো গড়া হয়নি এই মরসুমে। মার্কোস, ক্রেসপির মতো নিম্নমানের বিদেশিদের নিয়ে ট্রফি জেতার স্বপ্ন দেখাই অপরাধ।’’
লাল-হলুদ সমর্থকদের কেউ কেউ হারের যন্ত্রণায় ভেঙে পড়েছেন। কেউ আবার ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন কোচ। কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়াও মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। অথচ প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিজেকে স্বাভাবিক প্রমাণ করতে। সহকারী জোসেফ মারিয়ে ফেরেকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে হাসিমুখেই এলেন স্পেনীয় কোচ। বলছিলেন, ‘‘কঠিন ম্যাচ ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত খেলেছে ছেলেরা। প্রচুর সুযোগও তৈরি করেছি। খুয়ান মেরার শট ক্রসবারেও লাগে।’’
প্রথমার্ধে কী হয়েছিল যে, ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন খাইমে সান্তোস কোলাদোরা? লাল-হলুদ কোচের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রথমার্ধে প্রবল স্নায়ুচাপে ভুগছিল ওরা। ডার্বির আগে পরপর দু’ম্যাচে হেরে একেবারেই স্বস্তিতে ছিল না। যে কোনও মূল্যে এই ম্যাচটা জিততে চাইছিল ওরা। এই কারণেই হয়তো চাপটা আরও বেড়ে গিয়েছিল ওদের।’’
আগের ম্যাচে গোকুলম এফসির বিরুদ্ধে রক্ষণের ব্যর্থতায় তিন গোল খেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগানকে আটকাতে রক্ষণাত্মক রণনীতিকেই অস্ত্র করেছিলেন আলেসান্দ্রো। শুধু তাই নয়। রক্ষণ শক্তিশালী করতে আশির আখতারের পরিবর্তে রবিবার মেহতাব সিংহকে প্রথম একাদশে রেখেছিলেন। তা সত্ত্বেও মোহনবাগানের আক্রমণের সামনে বার বার ভেঙে পড়ছিল যাবতীয় প্রতিরোধ। কার্যত বিনাবাধায় গোল করেন জোসেবা বেইতিয়া ও পাপা বাবাকর জিওয়ারা। সবুজ-মেরুনের দুই তারকার কাছাকাছি কোনও ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডারই ছিলেন না। লাল-হলুদ কোচ অবশ্য রক্ষণের ব্যর্থতা মানতে রাজি নন। রীতিমতো বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘‘রক্ষণের ভুলে প্রথম গোল হয়েছে বলে মনে করি না। তবে মোহনবাগান এত সুযোগ তৈরি করতে পারার জন্য আমাদের রক্ষণ যে দায়ী, অস্বীকার করছি না।’’
আলেসান্দ্রো ক্ষুব্ধ রেফারিং নিয়েও। মোহনবাগান গোলরক্ষক শঙ্কর রায়ের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে মাঠে পড়ে গিয়েছিলেন লাল-হলুদের স্পেনীয় স্ট্রাইকার মার্কোস খিমেনেস দে লা এসপারা মার্তিন। পেনাল্টির আবেদন জানান ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা। কিন্তু রেফারি জানান, পড়ে যাওয়ার আগে মার্কোসের হাতে বল লেগেছিল। আলেসান্দ্রো বললেন, ‘‘নিশ্চিত পেনাল্টি দেননি রেফারি।’’ কোচের সুরেই ক্ষোভ উগরে দিলেন মার্কোস। টিম বাসে ওঠার আগে বলে গেলেন, ‘‘বল আমার হাতে আদৌ লাগেনি। কাঁধে লেগেছিল। তার পরেই মোহনবাগান গোলরক্ষক আমাকে টেনে ফেলে দেয়। নিশ্চিত ভাবেই পেনাল্টি। অথচ রেফারি দিলেন না। পেনাল্টিটা পেলে ম্যাচের ছবিটাই হয়তো বদলে যেত।’’
সাত ম্যাচে চার গোল করলেও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা একেবারেই খুশি নন মার্কোসকে নিয়ে। ইতিমধ্যেই তাঁর জায়গায় নতুন বিদেশি স্ট্রাইকারকে আনার দাবিতে সরব। হতাশ মার্কোস বলছেন, ‘‘গোল করার জন্য পর্যাপ্ত পাস পাচ্ছি কোথায়?’’ বিধ্বস্ত খাইমে সান্তোস কোলাদো, খুয়ান মেরা গঞ্জালেসও। মোহনবাগানের ডিফেন্ডার ধনচন্দ্র সিংহের সঙ্গে সংঘর্ষে ম্যাচের ২৫ মিনিটে মাথা ফেটে গিয়েছিল কোলাদোর। ব্যান্ডেজ বেঁধেই পুরো ম্যাচ খেলেন তিনি। আর স্পেনীয় মেরার দুরন্ত শট ক্রসবারে লেগে ফেরে। স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় বলছিলেন, ‘‘একেই বলে দুর্ভাগ্য। এই ম্যাচটা জিততেও পারতাম।’’
রবিবাসরীয় ডার্বিতে গোল করেছেন মার্কোস। কোচও তাঁর পাশে। তা সত্ত্বেও লাল-হলুদ শিবিরে স্পেনীয় স্ট্রাইকারের ভবিষ্যৎ একেবারেই সুরক্ষিত নয়। আগামী মঙ্গলবার কলকাতায় বিনিয়োগকারী সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের। কোচ আলেসান্দ্রোও সেখানে থাকবেন। সেখানেই নতুন ফুটবলার নেওয়া নিয়ে আলোচনা হবে। ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা বলছিলেন, ‘‘রক্ষণ থেকে আক্রমণ— সব বিভাগেই তো ফুটবলার পরিবর্তন দরকার। মঙ্গলবারের বৈঠকেই এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।’’
ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখে হতাশ কেভিন স্মিথও! ডার্বির আকর্ষণেই আয়ারল্যান্ড থেকে কলকাতায় এসেছেন তিনি। রবিবার যুবভারতীর গ্যালারিতে বসেছিলেন মোহনবাগান অন্তপ্রাণ আবু শর্মার পাশে। অভিভূত কেভিন বলেছিলেন, ‘‘ভারতে ফুটবলকে কেন্দ্র করে উন্মাদনা এই স্তরে পৌঁছতে পারে, কোনও ধারণা ছিল না। তবে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল তো সে ভাবে লড়াই করতেই পারল না।’’