হুঙ্কার: গোল করে দানিশ ফারুখ। বুধবার কল্যাণীতে। নিজস্ব চিত্র
রিয়াল কাশ্মীর ১ • চেন্নাই ০
কাশ্মীরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন। কিন্তু তার প্রভাব মাঠে পড়তে দিলেন না রিয়াল কাশ্মীরের ফুটবলারেরা। বুধবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটি এফসি-কে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হারিয়ে ডুরান্ডে অভিযান শুরু করল রিয়াল কাশ্মীর।
ম্যাচের শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করেন দানিশ ফারুখ। এই মুহূর্তে তাঁর কাছে এই গোলের তাৎপর্যই আলাদা। ম্যাচের পরে কাশ্মীরের জয়ের নায়ক বলেছেন, ‘‘ফুটবল আমাকে শিখিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। কী ভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। তাই এই গোলটা উৎসর্গ করছি আমার পরিবার, সতীর্থ, কোচ ও ক্লাব কর্তাদের।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারছি না। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ছিল, বাইরে যা কিছু ঘটছে তা ভুলে জয়ের জন্য ঝাঁপানো। নিজেদের উজাড় করে দেওয়া। আমরা সেটাই করতে পেরেছি সফল ভাবে। এটাই আমাদের সাফল্যের নেপথ্যে।’’
ডুরান্ড কাপের জন্য এক দিনের বেশি অনুশীলন করতে পারেনি কাশ্মীর। তা সত্ত্বেও দুর্দান্ত সাফল্যের রহস্যটা কী? কোচ ডেভিড রবার্টসন বলেছেন, ‘‘ডুরান্ড কাপের আগে মাত্র তিন দিন আমি দলটাকে দেখেছি। কিন্তু অনুশীলন করানোর সুযোগ পেয়েছিলাম মাত্র এক দিন। মঙ্গলবার প্রস্তুতি নিয়েই চেন্নাই ম্যাচ খেলতে নেমেছিলাম। দলের এই জয়ে আমি গর্বিত। ওরা যে ভাবে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছে, তা আমার কাছে সেরা প্রাপ্তি।’’ রিয়াল কাশ্মীর দলের পাঁচ ফুটবলারের বাড়ি শ্রীনগরে। তাঁরা অবশ্য কিছুটা অনুশীলন করেই ডুরান্ড কাপ খেলতে এসেছেন। বাকিরা সরাসরি যোগ দিয়েছেন কল্যাণীতে।
জয় দিয়ে অভিযান শুরু করেও উদ্বেগ কাটছে না কাশ্মীর শিবিরে। ভূস্বর্গের সাম্প্রতিক অবস্থায় দানিশদের আই লিগের প্রস্তুতিও প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুম্বই অথবা জামশেদপুরে আই লিগের প্রস্তুতি নিতে পারেন তাঁরা। দলের এক শীর্ষ কর্তা বললেন, ‘‘আই লিগের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য শ্রীনগরই আমাদের প্রথম পছন্দ। কিন্তু এই মুহূর্তে ওখানকার কী পরিস্থিতি তা আমরা জানি না। এই কারণেই বিকল্প হিসেবে মুম্বই ও জামশেদপুরের কথা ভেবে রেখেছি।’’ তিনি যোগ করেছেন, ‘‘আমাদের দলের প্রত্যেকে সব রকম পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য তৈরি। এটাই আমাদের দলের মূলধন।’’
প্রতিকূলতার মধ্যে দানিশেরা যে ভাবে লড়াই করে ম্যাচ জিতেছেন, তাতে অভিভূত চেন্নাই কোচ আকবর নওয়াজও। তিনি বলেছেন, ‘‘ওদের দেখে আমার ২০০৭ সালের ইরাকের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক সে-বছর এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কাশ্মীরের ফুটবলারেরাও ঠিক সে-ভাবে লড়াই করছে।’’
ফিফার চিঠি: আইএসএল-কে দেশের সেরা ফুটবল লিগ হিসেবে বেছে নিয়েছিল সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)। যার তীব্র প্রতিবাদ করে ফিফা-কে চিঠি পাঠিয়েছিল আই লিগের ছ’টি ক্লাব।
প্রতিবাদীদের হয়ে মিনার্ভা পঞ্জাব ক্লাবের কর্ণধার স্পষ্ট জানিয়েছেন, ফিফা যদি বিষয়টি খতিয়ে না দেখে তা হলে আইনি সাহায্য
নেওয়া হবে। বুধবার মিনার্ভা কর্ণধারকে চিঠি দিয়ে ফিফা জানিয়েছে, আই লিগের ক্লাবগুলো যেন ফেডারেশনের সঙ্গে সহযোগিতা করে। বিশ্বের ফুটবল নিয়ামক সংস্থা লিখেছে, ‘‘ভারতীয় ফুটবল প্রসঙ্গে সব চেয়ে ভাল বোঝে ফেডারেশন। প্রত্যেকটি ক্লাবের উচিত ফেডারেশনকে সহযোগিতা করা।’’