হ্যাটট্রিক যাঁকে উৎসর্গ করলেন। সেই বান্ধবী হিনার সঙ্গে।
মাঠের মধ্যে একটা করে গোল করছেন ডুডু ওমাগবেমি। আর ভিভিআইপি বক্সে চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে হাততালি দিচ্ছেন এক মহিলা। গোল করার পরই উচ্ছ্বাসিত সেই মহিলার দিকে তাঁকাচ্ছেন তারপর বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফের ফিরে যাচ্ছেন সেন্টার স্পটে।
বক্সে বসে থাকা সেই বান্ধবী হিনাকেই বৃহস্পতিবারের হ্যাটট্রিকটা উৎসর্গ করলেন ইস্টবেঙ্গল জনতার নতুন হার্টথ্রব ডুডু। বলে দিলেন, “ও আমার লেডি লাক। হিনা আমার অনুশীলনের সময় সারাক্ষণ বসে থাকে। ম্যাচের সময় মাঠে থাকে। আর স্টেডিয়ামে আসার সময় বারবার বলে, ‘তোমার গোল দেখতে চাই’।”
পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ডে খেলে এসেছেন। গোয়ায় খেলে গিয়েছেন স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়ায়। একার কৃতিত্বেই স্পোর্টিংকে তুলেছিলেন ফেড কাপের ফাইনালে। জাতীয় লিগে করেছিলেন রানার্স। খেলেছেন ডেম্পো, সালগাওকরে। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও কলকাতায় খেলা হয়নি কখনও। এবং সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পর, দু’নম্বর ম্যাচেই আরও একটা স্বপ্নপূরণলালহলুদ জার্সিতে হ্যাটট্রিক। “কলকাতা লিগ আমার কাছে গুরুত্বহীন। সেনাদের এই টিমটা ভাল। কিন্তু তেমন শক্তিশালী নয়। ওঁদের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করাকে তাই গুরুত্ব দিতে চাই না। আমার লক্ষ্য তো আই লিগ। যে জন্য আমি খেলতে এসেছি। আরও শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করতে হবে।” পায়ের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে জনতা। হাসছেন, তবে সেখানে তৃপ্তি থাকলেও উচ্ছ্বাস নেই। “আমাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে। আরও গোল করতে হবে। র্যান্টির সঙ্গে আরও বোঝাপড়া বাড়াতে হবে। তবেই তো কলকাতায় আসা সার্থক।” বলতে বলতে হঠাৎ-ই সিরিয়াস হয়ে যান তিনি। পেশাদাররা যেমন হন। “স্পোর্টিংয়ে যখন খেলতাম তখন একার চেষ্টায় টেনে নিয়ে যেতে হত। ইস্টবেঙ্গল তো টিম। র্যান্টি আছে, বার্তোস আছে। মেহতাব-খাবরা আছে। এখানে স্বপ্নপূরণ করা সম্ভব।”
ডার্বিতে টিমের জয় নিশ্চিত হওয়ার পরই ডুডুকে নামিয়েছিলেন কোচ আর্মান্দো কোলাসো। ম্যাচ-প্র্যাক্টিসের জন্য এ দিন তাঁকে নব্বই মিনিটই মাঠে রেখে দিয়েছিলেন লাল-হলুদ কোচ। তিন গোল করে ফিরে ডুডু কিন্তু বললেন, “আমার আরও প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলা দরকার। এখনও হোটেল-বাড়ি করতে হচ্ছে। পুরো গুছিয়ে নিতে পারিনি। রাতে এক ঘণ্টার বেশি ঘুম হচ্ছে না। ফিনল্যান্ডের ঠান্ডা থেকে এসে হঠাৎ প্রচন্ড গরমের মধ্যে পড়েছি। এত সমস্যা সত্ত্বেও যে গোল করতে পারছি সেটা ভেবে ভাল লাগছে। তবে অনেক দূর যেতে হবে।”
নিজের ফর্মের তুঙ্গে পৌঁছতে ঠিক কত ম্যাচ দরকার? নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে রাজি নন ডুডু। বললেন, “দেখি কত ম্যাচ লাগে। দেখা যাক যত তাড়াতাড়ি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি।” ফর্মে না থেকেই তিন গোল। ফর্মে ফিরলে তো আপনি আরও বিস্ফোরক হবেন? “সেটা বলব কী করে? তবে এটা বলছি আমি ভারতে যখন প্রথম এসেছিলাম, এখন সেই ডুডু নেই। ইউরোপে খেলার পর আমি আরও পরিণত হয়েছি। দেখি ইস্টবেঙ্গলকে আই লিগ এনে দিতে পারি কি না?” ডুডু-র এই সোনালি দিনে বন্ধু র্যান্টি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বলে গেলেন, “গোল করে জেতানোটাই তো আমার আর ডুডু-র কাজ।”