Football

ব্লাটারের সামনে সে দিন মোহনবাগানকে ডার্বি জেতানো ‘বুড়ো ঘোড়া’ এ বার চাইছেন তাদেরই হারাতে

এ বারের আই লিগে চেন্নাই সিটি-র বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলে দল নিয়ে কলকাতায় চলে এসেছেন ডগলাস। এখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন তাঁর ছেলেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৫৭
Share:

নতুন জীবন শুরু ডগলাসের। —ফাইল চিত্র।

তখন অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন ডগলাস দ্য সিলভা ‘বুড়ো ঘোড়া’ হয়ে গিয়েছেন। তাঁকে দিয়ে আর চলবে না। মোহনবাগান তাঁকে সই করিয়ে ভুলই করেছে।

Advertisement

বহু যুদ্ধের সৈনিক ব্রাজিলীয় ফুটবলার ডার্বিতে গোল করে সে দিন নিন্দুকদের জবাব দিয়েছিলেন। গোল করার পরে নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ে দিয়ে নিন্দুকদের ভুল প্রমাণ করেছিলেন লড়াকু ফুটবলার। এখন বদলে গিয়েছে তাঁর ভূমিকা। আই লিগের নতুন দল ট্রাউয়ের রিমোট কন্ট্রোল এ বার ডগলাসের হাতে। এক যুগ আগের সেই ঘটনা অবিনাশ রুইদাসদের সামনে তুলে ধরে দলকে তাতাচ্ছেন ডগলাস।

বুধবার কল্যাণীতে ট্রাউয়ের সামনে মোহনবাগান। মঙ্গলবার কল্যাণী থেকে ডগলাস দূরভাষে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “২০০৭ সালে বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন (পয়লা বৈশাখ) একটা ডার্বি হয়েছিল। সেই সময়ের ফিফা প্রেসিডেন্ট জোসেফ ব্লাটার সল্টলেক স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে এসেছিলেন। মোহনবাগান ম্যাচটা ২-১ গোলে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে। আমি মোহনবাগানের হয়ে দ্বিতীয় গোলটা করেছিলাম। সেই সময়ে অনেকেই আমার সমালোচনা করতেন। তাঁদের জবাব দিয়েছিলাম গোল করে। আমার ফুটবল জীবনের সেই ঘটনা তুলে ধরে ছেলেদের বলেছি, মাঠে নেমে নিজের দক্ষতার উপরে বিশ্বাস রাখো। কঠিন অনুশীলনে নিজেকে ডুবিয়ে দাও। সাফল্যের কোনও শর্ট কাট হয় না। ফলাফল আসবেই।’’ ফেলে আসা দিনের স্মৃতিরা ভিড় জমিয়ে রয়েছে তাঁর নতুন জীবনে। ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে তাঁর অগাধ অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন ছেলেদের সঙ্গে। ডগলাসের কথা শুনে ট্রাউয়ের ফুটবলারদের ধমনীতে রক্তের গতি বাড়ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ওয়ান ডে থেকেও ছিটকে গেলেন ধওয়ন, জাতীয় দলে আসতে পারেন...

চিন্তামগ্ন ডগলাস।

এ বারের আই লিগে চেন্নাই সিটি-র বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলে দল নিয়ে কলকাতায় চলে এসেছেন ডগলাস। এখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন তাঁর ছেলেরা। ইস্টবেঙ্গল মাঠে অনুশীলন করিয়েছেন ট্রাউকে। দুই প্রধানের খেলা দেখে তাদের শক্তি-দুর্বলতা টুকে রেখেছেন ডায়রিতে। সেগুলো তাঁর ফুটবলারদের মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছেন তিনি। মোহনবাগান-চার্চিল ব্রাদার্স ম্যাচের কাটাছেঁড়া করে ডগলাস বলছেন, ‘‘মাঝমাঠ থেকে ফ্রান গনজালেজকে তুলে নিয়ে মোহনবাগান সে দিন ভুল করেছিল। গনজালেজের খেলা দেখে মনে হল ও খুব অভিজ্ঞ। ওকে আরও কিছু ক্ষণ রেখে দেওয়া উচিত ছিল।’’ সেই মোহনবাগানের বিরুদ্ধে বল গড়ানোর আগে ডগলাস বলছেন, “আগের ম্যাচে হেরে যাওয়ায় মোহনবাগান স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমাদেরও তৈরি থাকতে হবে। ম্যাচে নিজেদের প্রয়োগ করতে পারলে আমরাও জিততে পারি।’’

আশিয়ান জয়ের পরে ইস্টবেঙ্গল।

ছেলেদের মনে সাহস জুগিয়ে তিন প্রধানের জার্সিতে খেলা ডাকাবুকো প্রাক্তন ফুটবলার বলছেন, ‘‘আমরা যখন খেলতাম, সেই সময়ে ম্যাচ ছিল আমাদের কাছে যুদ্ধ। মাঠে নেমে নিজেদের নিংড়ে দিতাম। বড় দলের বিরুদ্ধেও লড়ে গিয়েছি বুক চিতিয়ে।’’ ছেলেদের সামনে তুলে ধরেছেন ২০০৪ সালের ইস্টবেঙ্গল-লেস্টার সিটি ম্যাচ। ডগলাস বলছিলেন, ‘‘লেস্টার সিটি তখন নামী ক্লাব। সবাই বলেছিল, আমরা পাঁচ-ছ’গোল খাব ওদের কাছে। মাঠে আমরা মরিয়া লড়াই করেছিলাম। রেফারির ভুলে লেস্টার সিটি পেনাল্টি পেয়েছিল। সেই পেনাল্টি থেকে করা গোলে লেস্টার সিটি জিতেছিল। ছেলেদের বলেছি, যত কঠিন দলই হোক না কেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’’

ফুটবল জীবনে কোনও দিন ভয় পাননি। যত শক্তিশালী বিপক্ষই হোক না কেন, ডগলাস মানে লড়াই, লড়াই আর লড়াই। আসিয়ান কাপে পেত্রোকিমিয়া পুত্রার বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ম্যাচটাকে নিজের ফুটবল জীবনের সেরা বলে মনে করেন ডগলাস। তিনি বলছিলেন, ‘‘আসিয়ান কাপের সেমিফাইনালে পেত্রোকিমিয়া পুত্রার বিরুদ্ধে আমরা ১০ জনে নেমে গিয়েছিলাম। মহেশ গাউলি লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যায়। দশ জনে খেলে আমরা টাইব্রেকারে ম্যাচটা জিতেছিলাম।’’

সেই সব ম্যাচের লড়াই থেকে সবুজ-মেরুনের বিরুদ্ধে অনুপ্রেরণা খুঁজছেন ময়দানের বড় ক্লাবের এক সময়ের ‘ইঞ্জিন’। যেন দলকে বলছেন, ফাইট ট্রাউ ফাইট।

আরও পড়ুন: ডোপ বিরোধী নিয়ম লঙ্ঘনে ৪ বছরের জন্য নির্বাসিত রাশিয়া, নেই টোকিয়ো যজ্ঞে

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement