(উপরে) গৌতম-ভাইচুং ও (নীচে) শঙ্কর-অশোক। ছবি দু’টি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
ভোটের মরসুমে খেলার মাঠেও ‘ওরা-আমরা’র অভিযোগ উঠল। শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য ঘোষিত ভাবেই ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক। তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া ইস্টবেঙ্গলে দীর্ঘদিন খেলেছেন। কিন্তু শনিবার ডার্বির দিনে দু’জনে কিন্তু দু’রকম অভ্যর্থনা পেলেন। তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের আদার-আপ্যায়ন জুটল। কিন্তু শিলিগুড়ির মেয়র ব্রাত্য থাকলেন বলে অভিযোগ।
এ দিন বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং শিলিগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া স্টেডিয়ামে ঢোকার পরে মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্তারা সমাদর করে দু’জনকে ভিভিআইপি বক্সে নিয়ে গিয়ে বসান। শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য কিন্তু ভিআইপি গ্যালারিতে খেলা শুরুর আধ ঘণ্টা আগে থেকে বসে থাকলেও, মহকুমা পরিষদের কোনও কর্তাব্যক্তি তাঁর কাছাকাছিই ঘেঁষেনি বলে অভিযোগ।
অপমানিত অশোকবাবু খেলা শুরুর মিনিট পাঁচেক আগেই অসৌজন্যের অভিযোগ তুলে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। অশোকবাবুর সঙ্গেই বেরিয়ে যান মাটিগাড়ি-নকশালবাড়ির কংগ্রেস প্রার্থী শঙ্কর মালাকারও। বাম-কংগ্রেসের অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের সাদরে আপ্যায়ন করা, এমনকী তৃণমূলের প্রতীক চিহ্ন লাগানো ব্যাজ পরে নেতারা গ্যালারিতে বসে থাকায় বিধিভঙ্গ হয়েছে।
বিকেল সাড়ে চারটের সময় খেলা শুরুর ঢের আগে ভিভিআইপি গ্যালারিতে চলে এসেছিলেন শঙ্কর মালাকার। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের ভিভিআইপি গ্যালারি বলতে ব্যবসায়ী সঙ্ঘ ব্লক। গ্যালারিতে প্লাস্টিকের চেয়ার পাতা। সেখানে স্টিলের আরামদায়ক কয়েকটি চেয়ার। সেটি ভিভিআইপি বক্স বলে পরিচিত। শঙ্করবাবু যখন গ্যালারিতে ঢোকেন, তখন আশেপাশে মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কোনও কর্তাব্যক্তিকে দেখা যায়নি। গ্যালারিতে থাকা কয়েকজন উঠে শঙ্করবাবুকে বসতে দেন।
কিছু পরেই স্টেডিয়ামে ঢোকেন মেয়র অশোকবাবু। মেয়রকে ঢুকতে দেখেও আয়োজকদের কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। শঙ্করবাবুই উঠে দাঁড়িয়ে অশোকবাবুকে নিজের পাশের একটি চেয়ারে বসতে অনুরোধ করেন। সিপিএম এবং কংগ্রেসের দুই প্রার্থী বসেন সাধারণ প্লাস্টিকের চেয়ারে। তখনও ভিভিআইপি বক্সের কেতাদুরস্ত চেয়ারগুলি ফাঁকা। কিছু পরেই তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে স্টেডিয়ামে ঢোকেন শিলিগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া। মহকুমা পরিষদের ছোট মাঝারি কর্তারা প্রায় ঘিরে ধরে ভাইচুংকে ভিভিআইপি গ্যালারিতে নিয়ে আসেন। সেখানে বসানো হয় ভাইচুংকে। ভাইচুঙের সঙ্গে আসা দলের কর্মী-সমর্থকদেরও জায়গা হয় সেই বক্সে। কয়েক মিনিটের মাথায় মন্ত্রী গৌতম দেব গ্যালারিতে আসেন। গেট থেকে গ্যালারি হয়ে ভিভিআইপি বক্স পর্যন্ত গৌতমবাবুকে ‘এসকর্ট’ করেন খোদ মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতন ঘোষ।
ভাইচুং-গৌতমবাবু চেয়ারে বসার সঙ্গে সঙ্গে জল-চা চলে আসে অপ্যায়নে। এরপরেই মাঠ ছাড়েন কয়েক হাত দূরে ভিড়ের মধ্যে বসে থাকা ‘অপমানিত’ অশোকবাবু-শঙ্করবাবু। দু’জনে বার হওয়ার সময়েও তাঁদের কাছে ক্রীড়া পরিষদের কোনও কর্তাকে যেতে দেখা যায়নি। অশোকবাবু-শঙ্করবাবু এবং গৌতমবাবু-ভাইচুং সকলেই এবারের বিধানসভা ভোটের প্রার্থী।
সংগঠকদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, গৌতমবাবু মন্ত্রী ও ভাইচুং দেশের ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বলে তাঁদের বাড়তি গুরুত্ব দিতেই হয়েছে। তবে পাল্টা অভিযোগ, সেক্ষেত্রে মেয়র হিসেবে অশোকবাবুরও বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু অশোকবাবুকে মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ কোনও আমন্ত্রণ পর্যন্ত জানায়নি বলে অভিযোগ। ডাকা হয়নি বিধায়ক শঙ্করবাবুকেও।
গৌতমবাবু অবশ্য পাল্টা রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন অশোকবাবুদের বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, ‘‘অশোকবাবুরাই তুচ্ছ বিষয়ে রাজনীতি করে থাকেন। আমাকে তো কেউ ডেকে বসাননি, নিজেই এসেছি। অশোকবাবুরাও এখানেই বসতে পারতেন, কেউ আপত্তি তুলত না।’’ আর ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতনবাবুর দাবি, ‘‘ভাইচুং এবং গৌতমবাবুকে মূল গেট দিয়ে ঢুকতে দেখেছিলাম। অশোকবাবুরা কোথা দিয়ে ঢুকলেন, তা আমার চোখে পড়েনি।’’ অশোকবাবুর পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘আমাকে কে সৌজন্য দেখাল না, তা নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন নই। তবে এ দিন মাঠে আমাকে নয় শিলিগুড়ির মেয়রকে অপমান করা হয়েছে। আমি খেলা দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু খেলার মাঠের রাজনীতি দেখে আর বসে থাকতে পারিনি।’’