গত দু’টো বছরকে কী বলবেন? অভিশপ্ত? নাকি নিছকই ক্রিকেট-ভাগ্যের ‘ব্যাড প্যাচ’?
বডোদরার অভিজাত হোটেলে বসে অশোক দিন্দা আজও ঠিক করতে পারেন না। কখনও মনে হয় ভাগ্যটাই তাঁর দিকে ছিল না। কখনও মনে হয়, অভিশপ্তটাই বোধহয় সঠিক শব্দ। মরসুমে চল্লিশ-পঞ্চাশ উইকেট পেতেন, ম্যাচের পর ম্যাচ বাংলাকে টানা জেতাতেন, তবু তো কেউ ডাকত না। নির্বাচনী বৈঠকে কেউ তো নামটা তুলত না।
বৃহস্পতিবারের বিশ্বকাপের প্রথমিক দল নির্বাচনের খবরে তাই একটু যেন ঘোর, একটু শান্ত শোনায় ‘বেঙ্গল এক্সপ্রেসে’র গলা। ক্রিকেটের বিশ্বযুদ্ধে ভারতের প্রথম তিরিশে আছেন শুনে ভাল লেগেছে। কিন্তু এটাও মনে হয়েছে যে, এটা স্রেফ একটা সিঁড়ির প্রথম ধাপ। ধরে উঠতে পারলে সাফল্যের রাজপ্রাসাদ অপেক্ষা করবে। না পারলে আবার ব্যর্থতার চোরাবালি।
“অক্সিজেন পেলাম বলতে পারেন। সত্যি বলতে, আমার এই মঞ্চটা দরকার ছিল। এ বার অন্তত আমি লড়তে পারব,” এ দিন সন্ধেয় যখন ফোনে বডোদরা থেকে বলছিলেন অশোক দিন্দা, শুনলে মনে হবে ব্যারেলে বারুদ ঠাসছেন। খবরটা শুনে ক’বার ফিস্ট পাম্প দিলেন? বুধবার দেওধর ফাইনালে তো আপনার আগুনে পেসের সঙ্গে ওটাও প্রবল চর্চিত হয়েছে। শুনে অট্টহাস্য শুরু হয়, “আরে ধুর। ও সব মাঠে হয়। আর আমি জানি এটা একটা প্ল্যাটফর্ম। আসল যুদ্ধ শুরু এ বার। উইকেট নেওয়ার সঙ্গে ভাল বোলিংটাও করতে হবে। ওটাও এখন দেখা হয়। কাল ওয়াংখেড়ের বোলিংটা দেখেছেন? একটাও লুজ ডেলিভারি দিয়েছি?”
কামব্যাকের আবেগ যদি সরিয়ে রেখে চূড়ান্ত পনেরোয় বঙ্গ পেসারের সম্ভাবনা বিচার করতে হয়, তা হলে দেখা যাবে অশোক দিন্দার জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অপেক্ষা করছে। যে দু’টো বছর অশোক দিন্দার থেকে কেড়ে নিয়েছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা, সেই দু’টো বছর আবার প্রতিষ্ঠা দিয়েছে বেশ কিছু ভারতীয় পেসারকে। ভুবনেশ্বর কুমার যেমন। উমেশ যাদব যেমন। বা কোনও এক মহম্মদ শামি বা বরুণ অ্যারনের দাপুটে আবির্ভাব। যাঁদের প্রত্যেকে বিশ্বকাপে ভারতীয় টিমের চূড়ান্ত এগারোয় ঢুকতে দিন্দার সামনে কর্কশ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবেন নয়, দেবেনই!
তা হলে?
“জানি। এটাও জানি আমার হাতেও একটা বল থাকবে। দেখুন, কারও সঙ্গে আমার শত্রুতা নেই। সবাই বন্ধু। কিন্তু এটাও ঠিক যে, ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি কারও কারও চেয়ে অনেক ভাল পারফর্ম করেও জাতীয় দলের বাইরে থেকেছি,” বলতে বলতে থামেন দিন্দা। থেমে আবার, “দু’বছর আমি জাতীয় দলে সুযোগ পাইনি বলে ভাববেন না পারফর্ম করিনি। করেছি। কখনও কখনও মনে হয়, ক্রিকেটারদের ভাগ্যটাও দরকার পড়ে। আর তোমাকে ভাগ্যের সাহায্য পেতে হলে খাটতে হবে। আমি খেটেছি বলে এখন ভাগ্য আমার দিকে। দেওধর ফাইনালে চার উইকেট পাচ্ছি। বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে থাকছি। আর আজ থেকে পিছনে দেখব না।”
অশোক দিন্দা জানেন, আগামী ক’দিনের মধ্যে বিশ্বকাপের লক্ষ্যে দু’টো ভিন্ন ভূখণ্ডে দু’টো যুদ্ধ শুরু হবে। একটা অস্ট্রেলিয়ায়, যেখানে বাউন্সি পিচে একশো চল্লিশ প্লাসে করে যাবেন অ্যারন-উমেশরা। অন্যটা ভারতে, দেশের পাটা উইকেটে রঞ্জি এবং তিনি। অশোক দিন্দা জানেন, মাপকাঠি থাকবে একই, ওই একশো চল্লিশ প্লাস! জানেন, আগামী দু’টো মাস তাঁর জীবনে প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। “বাংলাকে জেতাব। রঞ্জি চাই আমার। আর চাই বিশ্বকাপের ফার্স্ট ইলেভেন। প্রাথমিক দল শেষ নয়।” ফোনের ওপ্রান্ত থেকে অস্ফুটে ভেসে আসে আরও কিছু শব্দ, “পাঁচ, ছয়, সাত...।” ঘণ্টা-মিনিট-সেকেন্ড ভাবছেন? নাহ্। ম্যাচ পিছু উইকেট ওগুলো, প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের সংখ্যা ওগুলো।
আগামী দু’মাসে যাদের ‘চাপা’ দিতে ছুটবে ‘বেঙ্গল এক্সপ্রেস’!