পুণের মাঠে ১৫ জানুয়ারি ইয়ন মর্গ্যানের সঙ্গে টস করতে নামছে বিরাট কোহালি, বুধবার রাত পর্যন্ত এই দৃশ্যটার কথা ভাবতেই পারিনি।
যতক্ষণ না মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ওয়ান ডে ও টি টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন্সি ছাড়ার খবরটা এসে পৌঁছয়।
পরে যখন ভাবতে বসলাম, কেন এমন করল ‘ক্যাপ্টেন কুল’, তখন উপলব্ধি করলাম, সিদ্ধান্তটা তো মোটেই খারাপ নেয়নি এমএস।
ন’বছর ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন থাকার পর বুধবার রাতে হঠাৎ বোর্ডের ইমেলে ক্যাপ্টেন্সি ছাড়ার খবর জানানোটা আকস্মিক মনে হলেও এই সিদ্ধান্তের পিছনে ধোনির যথেষ্ট ভাবনা থাকাই স্বাভাবিক। যতটুকু জানলাম, অনেক দিন ধরেই এটা ভাবছিল ও। নির্বাচকদের সঙ্গে এই নিয়ে কথাও বলেছিল। তার পরই এই সিদ্ধান্ত। একই ভাবে হঠাৎ টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিয়েছিল। নিয়ে নিয়েছিল টেস্ট থেকে অবসরও। ফলে অনেকে ভাবতে পারেন এ বারও হঠাৎই এই সিদ্ধান্ত নিল। আমার কিন্তু তা মনে হয় না।
পাঁচ মাস পরেই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। সেখানে কঠিন লড়াই। তার জন্য একটা সেট দল তৈরি করতে গেলে তা এখন থেকেই তৈরি করতে হবে। সম্ভবত সেই কথা ভেবেই বিরাট কোহালিকে নিজের জায়গাটা ছেড়ে দিল ধোনি। ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে তো এটা ভালই হল। এমনকী ওর নিজের কেরিয়ারের পক্ষেও খারাপ হল না।
এখন ব্যাপারটা মেলানোর চেষ্টা করছি নিউজিল্যান্ড ওয়ান ডে সিরিজে দেখা দৃশ্যগুলোর সঙ্গে। বিভিন্ন সিদ্ধান্তের আগে মাঝে মাঝে কোহালিকে ডেকে নিয়ে কথা বলা। মাঠে নামার আগে দু’জনের কথা। জয়ের পর একে অপরের জড়িয়ে ধরা, অভিনন্দন জানানো। এ সবই তা হলে কোহালিকে পরবর্তী ক্যাপ্টেন হিসেবে তৈরি করার জন্য। এই সিদ্ধান্তটার কথা ভেবে।
ভারতীয় ক্রিকেটের ভাল কী করে হবে ধোনির এই সিদ্ধান্তে?
আমাদের টেস্ট টিমের সঙ্গে ওয়ান ডে টিমের আর কি এমন বড় ফারাক আছে? বড় জোর দু-একটা পরিবর্তন হবে। লোকেশ রাহুল, শিখর ধবন, অজিঙ্ক রাহানে, রোহিত শর্মারাই ওয়ান ডে টিমে থাকবে। আসবে কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার। ভারতীয় টেস্ট দলটাই একটু উল্টেপাল্টে নিয়ে ওয়ান ডে-তে নামবে। অর্থাৎ বিরাট কোহালির টিমের বেশিরভাগ সদস্যই ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টিতেও থাকবে।
টিমটা যাতে সেই বিরাটের নেতৃত্বেই খেলতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাই আগে ভাগে করে দিল ধোনি। তাও কোন সময়ে? যখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে অনেকটা প্রস্তুতির সময় পাওয়া যাবে। টিমের সঙ্গে বোঝাপড়াটা এমনিতেই তৈরি বিরাটের। এই সময়ে বাকি ‘টাস্ক’গুলোও করে নিতে পারবে। নিজের মতো করে টিমটাকে তৈরি করে নিয়ে পারবে। এ সব ভেবেই বোধহয় আগে থেকে সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিল। যাতে ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে ভালই হবে।
ধোনির পক্ষে এটা কেন ভাল?
ক্রিকেট জীবনে যে আর বেশি বাকি নেই ওর, তা ধোনি নিজেই খুব ভাল করে জানে। তাই কেরিয়ারের শেষ দিকটা বোধহয় ও চাপমুক্ত হয়ে খেলতে চায়। ক্রিকেটার ধোনির উপর নেতৃত্বের চাপের প্রভাব যাতে না পড়ে। যাতে কখনও শুনতে না হয়, ‘কেন আছ?’, সেই কথা ভেবেই বোধহয় এই সিদ্ধান্ত। ‘কেন যাচ্ছ?’ শুনতে শুনতেই তো এই মাপের একজন ক্রিকেটারের বিদায় নেওয়া ভাল না কি?
তা ছাড়া কনফিডেন্স লেভেল কোন জায়গায় থাকলে এমন একটা কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় ভাবুন। ন’বছর যে টিমটার ক্যাপ্টেন ছিল ধোনি, সেই টিমটাতে শুধু একজন সদস্য হয়ে থাকাটা খুবই কঠিন। সেটা জানা সত্ত্বেও তো ও সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলল। এটা পুরোপুরি নিজের আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করেই। তবু কতদিন ও টিমের সাধারণ সদস্য হিসেবে থেকে খেলতে পারবে, এই নিয়ে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
জোর দিয়ে বলতে পারছি না, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ওকে আর দেখতে পাব কি না। ধোনির এই সিদ্ধান্তটাই যেন আশঙ্কাটাকে আরও উস্কে দিল।
ধোনির ক্যাপ্টেন্সি ছাড়াটা আমার কাছে প্রত্যাশিতই ছিল। চাপমুক্ত হয়ে যাতে বাকি সময়টুকু খেলতে পারে সে জন্যই বোধহয় ক্যাপ্টেন্সিটা ছেড়ে দিল। তা ছাড়া ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ও ক্যাপ্টেন থাকতে পারত কি না, সেটাও নিশ্চিত ছিল না। সে জন্যই আগে ভাগেই বিরাটকে জায়গাটা ছেড়ে দিয়ে ভালই করল। ধোনির নিজের জন্য এবং ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য এটা ভাল সিদ্ধান্ত। বিরাটও এখন ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টি টিমের ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য তৈরি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়