Hima Das

ছোটবেলায় ফুটবলার হতে চাওয়া মেয়ে আজ দেশের সোনার অ্যাথলিট

এই তো সবে শুরু। হিমা জানেন এখানে থেমে গেলে হবে না। আরও দীর্ঘ ট্র্যাক পড়ে আছে তাঁর সামনে। সেখানেও হরিণীর পায়ের ছাপ ফেলতে চান তিনি। ‘ঢিং এক্সপ্রেস’ হিমার কাছে আকাশটাই এখন সীমা। যন্ত্রণাময় অতীতটাই যেন হিমার খিদ্দা। যে সমানে পিছন থেকে চিৎকার করতে থাকে, ‘ফাইট হিমা, ফাইট!’ বা ‘ভাগ হিমা, ভাগ!’ হিমা দাস দৌড়ন। তাঁর জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন করে বেজে ওঠে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ১০:৩৯
Share:
০১ ১১

গ্রামের মেঠো পথ ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল পা দু’টি। এখন তাঁরই হাতে বহুজাতিক জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থার এনডোর্সমেন্ট। আক্ষরিক অর্থেই নিজের কেরিয়ারে সোনাঝরা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন হিমা দাস। তিন সপ্তাহেরও কম সময়ে তাঁর গলায় পাঁচটি আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক। দাঁতে দাঁত চেপে সংগ্রামের পাকদণ্ডি পেরিয়ে জীবনের এই পর্বে অসমের কৃষক পরিবারের এই কন্যা।

০২ ১১

অসমের ঢিং শহরের কাছে কান্ধুলিমারি গ্রামের এক কৃষক পরিবার। রোদে পুড়ে, জলে ভিজে মাঠে কাজ করেন রঞ্জিত দাস। পাঁচ সন্তানের মুখে পান্তাভাত তুলে দিতে নুন ফুরিয়ে যায় তাঁর স্ত্রী জোনালির রান্নাঘরে। তার মধ্যে আবার ছোট মেয়ে হিমার ফুটবলের নেশা। গ্রামের মাঠে ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুটবল খেলে সেই বালিকা। কোনও টিটকিরি, টিপ্পনি থামাতে পারে না তাকে। বাড়ির লোকের নিষেধও কানে তোলে না।

Advertisement
০৩ ১১

জন্ম ২০০০ সালের ৯ জানুয়ারি। ঢিং পাবলিক স্কুলের ছাত্রী হিমা ছোটবেলায় ফুটবলই খেলতেন। বড় হয়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। সবুজ মাঠ থেকে তাঁকে ট্র্যাকে নিয়ে আসেন তাঁর স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক। তাঁর অনুপ্রেরণায় ধীরে ধীরে হিমাকে গ্রাস করল দৌড়ের নেশা। পেটের খিদে আর মনের জেদ, কোনওটাই নেভে না। হরিণীর মতো দৌড়তে থাকেন হিমা। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

০৪ ১১

এক আন্তঃজেলা প্রতিযোগিতায় আলাপ কোচ নিপন দাসের সঙ্গে। তখন অসমের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নিপন। তাঁর জহুরির চোখ চিনতে ভুল করেনি হিমার মতো খাঁটি রত্নকে। কিন্তু ঢিং গ্রামে পড়ে থাকলে কিছু হবে না। সেটাই হিমার বাবা মাকে বোঝালেন নিপন। শেষে একদিন হিমাকে গ্রাম থেকে ১৪০ কিমি দূরে নিয়ে এলেন গুয়াহাটি শহরে। স্পোর্টস কমপ্লেক্স থেকে শুরু হল হিমার নতুন দৌড়।

০৫ ১১

২০১৮-র জুলাইয়ে ফিনল্যান্ডের তাম্পেরে শহরে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। মহিলাদের ৪০০ মিটারের দৌড়। হিমার ঐতিহাসিক ৫১.৪৬ সেকেন্ড পাল্টে দিল পরের দিনের সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম। প্রথম বিশ্বের দেশের প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে স্বর্ণপদক উঠল অখ্যাত ঢিং গ্রামের মেয়ে হিমা দাসের গলায়।

০৬ ১১

২০১৮-র কমনওয়েলথ গেমসে-ও অংশ নিয়েছিলেন হিমা। ৪০০ মিটার ইভেন্টের ফাইনালে তাঁর স্থান ছিল ষষ্ঠ। ৪X৪০০ মিটার রিলে রেসে ভারতীয় দল শেষে করেছিল সপ্তম স্থানে। এশিয়ান গেমসে তাঁর পারফরম্যান্স ভাল হলেও অধরা থেকে গিয়েছিল পদক। তবে ২০১৮-র জাকার্তা এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটার তাঁর ৫০.৭৯ সেকেন্ড সময় এখনও ভারতের জাতীয় অ্যাথলেটিক্স স্তরে রেকর্ড।

০৭ ১১

কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমসে পদকের খরা এ বছর সুদে আসলে উশুল করে নিলেন হিমা। গত ২ জুলাই পোল্যান্ডের পোজনন গ্রাঁ প্রি-তে ২০০ মিটারে স্বর্ণপদক। হিমার সময় ছিল ২৩.৬৫ সেকেন্ড। ৭ জুলাই আবার সোনা। পোল্যান্ডেরই কুতনো অ্যাথলেটিক্স মিটে তাঁর সময় ২৩.৯৭ সেকেন্ড। তৃতীয় স্বর্ণপদক চেক প্রজাতন্ত্রের ক্লাদনো শহরে। ২০০ মিটার দৌড়ে হিমার সময় ছিল ২৩.৪৩ সেকেন্ড।

০৮ ১১

১৭ জুলাই চেক প্রজাতন্ত্রের তাবর অ্যাথলেটিক্স মিটে ২০০ মিটারে চতুর্থ স্বর্ণপদক হিমার। এ বার তাঁর সময় ২৩.২৫ সেকেন্ড। পঞ্চম সোনা এল চেক প্রজাতন্ত্রেরই নোভ মেস্তো-তে। সেখানে ২০ জুলাই ৪০০ মিটার ইভেন্টে হিমা সময় নিয়েছিলেন ৫২.০৯ সেকেন্ড। জুলাই মাস জুড়ে চলছে হিমার সোনালি সময়।

০৯ ১১

এই তো সবে শুরু। হিমা জানেন এখানে থেমে গেলে হবে না। আরও দীর্ঘ ট্র্যাক পড়ে আছে তাঁর সামনে। সেখানেও হরিণীর পায়ের ছাপ ফেলতে চান তিনি। ‘ঢিং এক্সপ্রেস’ হিমার কাছে আকাশটাই এখন সীমা।

১০ ১১

হিমার পা দুটো খুব ভাল করেই জানে, থেমে গেলেই থেমে যাবে সব কিছু। পদক ছাড়া কেউ মনে রাখবে না ২০১৮-র অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত হিমাকে। তাই চরৈবেতিকেই মন্ত্রগুপ্তি করে নিয়েছেন ইউনিসেফ-এর ইউথ অ্যাম্বাসাডর হিমা দাস। তাঁর বানভাসি রাজ্যটাকেই দেশের ক্রীড়া মানচিত্রে আরও স্পষ্ট করে তুলতে চান অসম সরকারের স্পোর্টস অ্যাম্বাসাডর হিমা।

১১ ১১

যন্ত্রণাময় অতীতটাই যেন হিমার খিদ্দা। যে সমানে পিছন থেকে চিৎকার করতে থাকে, ‘ফাইট হিমা, ফাইট!’ বা ‘ভাগ হিমা, ভাগ!’ হিমা দাস দৌড়ন। তাঁর জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন করে বেজে ওঠে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement