সচিন তেন্ডুলকর থেকে ভিভিএস লক্ষ্মণ। নাগপুরে রবিবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক সহ ছয় উইকেটের পর দীপক চাহারের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত ক্রিকেটমহল। ২৭ বছর বয়সির ক্রিকেট জীবন অবশ্য সরল পথে এগোয়নি। আইপিএলে সুযোগ পেয়েই নজর কেড়ে নেওয়া পেসারের বিধ্বংসী সুইং কী ভাবে উঠে এল, জেনে নিন।
১৯৯২ সালের ৭ অগস্ট উত্তরপ্রদেশের আগরায় জন্ম। বাবা লোকেন্দ্র সিংহ চাহার ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন কর্মী। নেটে নতুন বল তুলে দিতেন ছেলের হাতে। চাইতেন ছেলের হাতে সুইং যেন থাকে। আর তাই নেটে বল পুরনো হয়ে গেলে তা বদলে ফেলতেন। এবং ফের নতুন বল তুলে দিতেন ছেলের হাতে। দীপকের হাতের মারাত্মক সুইংয়ের নেপথ্যে এটাই কারণ।
১৬ বছর বয়সে দীপক চাহারকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাকাডেমির ডিরেক্টর গ্রেগ চ্যাপেল। ২০০৮ সালেরর সেই ঘটনা প্রভাব ফেলেছিল তাঁর জীবনে। বেড়ে গিয়েছিল জেদ। বোলার হিসেবে দাগ কাটতেই হবে, নিজের কাছেই করেছিলেন প্রতিজ্ঞা।
১৮ বছর বয়সে রঞ্জি অভিষেকেই সাড়া ফেললেন দীপক। ২০১০ সালে জয়পুরে রঞ্জির প্লেট লিগে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ৭.৩ ওভারে ১০ রানে নিলেন আট উইকেট। প্রথম ইনিংসের ছন্দে দ্বিতীয় ইনিংসেও করলেন বল। নিলেন চার উইকেট। অভিষেক ম্যাচে ১২ উইকেট পেলেন দীপক।
তার আগেই অবশ্য লিস্ট এ ক্রিকেটে ঘটেছে অভিষেক। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিজয় হাজারে ট্রফিতে বিদর্ভের বিরুদ্ধে মধ্যাঞ্চলের হয়ে প্রথম ম্যাচে ৬১ রানে নিয়েছিলেন দুই উইকেট। সেই প্রতিযোগিতায় তিন ম্যাচে নেন পাঁচ উইকেট।
তবে রঞ্জি অভিষেকেই দুর্দান্ত বোলিং শিরোনামে নিয়ে আসে তাঁকে। তাঁর আট উইকেটের দাপটে ২১ রানে দাঁড়ি পড়েছিল হায়দরাবাদ ইনিংসে। যা ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বনিম্ন স্কোর। প্রথম শ্রেণিতে অভিষেকে দ্বিতীয় সেরা বোলিং হয়ে ওঠে দীপকের আট উইকেট।
সেই মরসুমে রঞ্জির প্লেটে ছয় ম্যাচে ১৯.৬৩ গড়ে ৩০ উইকেট নিয়েছিলেন দীপক। যার ফলে প্লেট থেকে এলিটে উঠে আসে রাজস্থান। ২০১০-১১ মরসুমে এলিটে আট ম্যাচে ৩৭.৬৬ গড়ে নেন ২১ উইকেট। ২০১৭-১৮ মরসুমে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে মাত্র ৯.৯৪ গড়ে নয় ম্যাচে নেন ১৯ উইকেট।
দীপকের উত্থানের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রয়েছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে সাফল্যের পর টি-টোয়েন্টি দলে হন নিয়মিত। রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টস দলে থাকার সময় ধোনি তাঁকে পরের মরসুমে চেন্নাই সুপার কিংসে নেওয়ার আশ্বাস দেন।
সেই শুরু। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে নতুন বল তাঁর হাতেই তুলে দিতে থাকেন অধিনায়ক ধোনি। পাওয়ারপ্লে-র মধ্যে তাঁকে তিন ওভার করিয়ে দিতেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’। বাকি এক ওভার রাখতেন পরের জন্য। আর ধোনির ভরসায় কুড়ি ওভারের ফরম্যাটেও ফুল ফোটাতে থাকেন দীপক।
২০১৮ সালের ৮ জুলাই ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ঘটে। যদিও চার ওভারে দেন ৪৩। নেন এক উইকেট। কিছুদিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে ঘটান অভিষেক। চার ওভারে এক উইকেট নেন ৩৭ রানের বিনিময়ে। ওয়ানডে ক্রিকেটে আর দেখা যায়নি তাঁকে।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখনও পর্যন্ত সাত ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়েছেন দীপক। তার মধ্যে রবিবারই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাত রানের বিনিময়ে নেন ছয় উইকেট। যা এই ফরম্যাটে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত সিরিজের সেরাও হয়েছেন তিনি।