হুঙ্কার: টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পরে উল্লসিত ওয়ার্নার। ছবি: এএফপি।
ব্রিসবেনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে শতরান করেছিলেন দু’জনেই। শুক্রবার অ্যাডিলেডে গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্টেও দেখা গেল, পুরনো ছন্দেই বড় রানের দিকে এগোচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার সেই দুই ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার ও মার্নাস লাবুশানে।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে প্রথম দিনের খেলার শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান এক উইকেটে ৩০২। ওয়ার্নার অপরাজিত রয়েছেন ১৬৬ রানে। আর লাবুশানে অপরাজিত ১২৬। দুরন্ত এই ইনিংস খেলতে গিয়ে কোনও পাক বোলারকেই মাথায় চড়তে দেননি এই দুই অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান। ওয়ার্নার মারলেন ১৯টি চার। টেস্ট ক্রিকেটে এটি তাঁর ২৩তম শতরান। গত সপ্তাহেই কলকাতায় গোলাপি বলে শতরান করেছিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। এ বার সেই গোলাপি বলে শতরান করলেন ওয়ার্নারও। অস্ট্রেলীয় ওপেনারদের মধ্যে টেস্ট শতরানের সংখ্যায় তাঁর আগে রয়েছেন ম্যাথু হেডেন। টেস্টে হেডেনের শতরানের সংখ্যা ৩০। লাবুশানেও মারেন ১৭টি চার।
টস জিতে ব্যাট নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেন। চার ওভারের মধ্যেই ওপেনার জো বার্নস পাক পেসার শাহিন শা আফ্রিদির বলে কট বিহাইন্ড হওয়ার পরে ওয়ার্নার ও লাবুশানের জুটিতে উঠল ২৯৪ রান। দিনরাতের টেস্টে এ পর্যন্ত যে কোনও উইকেটে সব চেয়ে বড় রানের জুটি এটাই। আর তার ফলেই প্রথম দিনের শেষেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে টেস্ট সিরিজে ০-১ পিছিয়ে থাকা পাকিস্তান।
আরও পড়ুন: সচিনদের আবার দায়িত্বে ফিরিয়ে আনার ভাবনা
মনোরম: ইডেনের পরে অ্যাডিলেড ওভালে গোলাপি বলের টেস্ট। অস্ট্রেলিয়া বনাম পাকিস্তান লড়াইয়ের প্রথম দিনে কৃত্রিম আলোয় গোধূলির অপূর্ব দৃশ্য। বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টের প্রথম দিন। ছবি: এএফপি।
দিনের শেষে দুই অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানের গলাতেই স্বস্তির সুর। লাবুশানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘অবিশ্বাস্য লাগছে। ওয়ার্নারের সঙ্গে ব্যাট করার মজাই আলাদা। বড় জুটি গড়াই আমাদের লক্ষ্য। যা সুযোগ এসেছে, তার প্রতিটাই কাজে লাগাতে পেরেছি।’’
গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্টে এটিই প্রথম শতরান লাবুশানে ও ওয়ার্নারের। তাঁদের দু’জনের জুটিতে এই বিশাল রান ওঠার পরে ওয়ার্নারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যে ভাবে ক্রিজে এসে বোলারদের আক্রমণ করল লাবুশানে, তা দুর্দান্ত। প্রথম টেস্টে গাব্বায় যেখানে ও খেলা শেষ করেছিল, আজ যেন সেখান থেকেই শুরু করেছিল। আগামীকাল আমাদের জুটিতে আরও বেশি রান করে স্কোরবোর্ডে একটা বড় রান তুলতে হবে।’’ নিজের পারফরম্যান্স সম্পর্কে যোগ করেন, ‘‘অনেক বিখ্যাত ক্রিকেটার দেশের বাইরে গিয়ে বড় রান করেন। কিন্তু আমার লক্ষ্য একটাই। তা হল দেশের হয়ে ঘরে-বাইরে বড় রান করতে হবে।’’ অস্ট্রেলিয়ার এই দুই ব্যাটসম্যানই সংহারক মূর্তি ধরেছিলেন বৃষ্টির পরে খেলা শুরু হলে।
অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে এসে গত ১৩টি টেস্টেই হারতে হয়েছে। গোলাপি বলে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের এই ব্যাটিং-বিক্রমের ফলে এই টেস্টেও পাকিস্তানের জয় পাওয়া কষ্টকর হবে তা মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাকিস্তান দলে এ দিন প্রথম টেস্টে খেলা ইমরান খানের পরিবর্তে নেওয়া হয়েছিল সিমার মহম্মদ আব্বাসকে। গত অক্টোবরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুই টেস্টে ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন আব্বাস। এই ম্যাচেই অভিষেক হল ডান হাতি পাক মিডিয়াম পেসার মুহম্মদ মুসার। ১৩ ওভার বল করে ৭১ রান দেন তিনি। পাক বোলারদের কেউই ওয়ার্নার ও লাবুশানের সামনে স্বল্প প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি।
ব্রিসবেনে প্রথম টেস্টে চার উইকেট নিয়েছিলেন পাক লেগস্পিনার ইয়াসির শাহ। যার মধ্যে ছিল স্টিভ স্মিথের উইকেট। যে উইকেট পাওয়ার পরে আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করে ইয়াসির বুঝিয়েছিলেন স্মিথকে তিনি সাত বার আউট করেছেন। সেই ইয়াসির এ দিন ১৪ ওভার বল করে দিয়েছেন ৮৭ রান। কোনও উইকেট পাননি। প্রথম টেস্টে ইয়াসিরের ওই আচরণ দেখে ক্ষুব্ধ প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার ওয়াসিম আক্রম। বলেছেন, ‘‘ইয়াসিরের এই আচরণের মূল্য না চোকাতে হয়! যখন খেলতাম, তখন কোন ব্যাটসম্যানকে কত বার আউট করেছি, তা মাথায় রাখার সময় ছিল না। উইকেট পাওয়াই ছিল মূল লক্ষ্য।’’
স্কোরকার্ড
অস্ট্রেলিয়া ৩০২-১ (৭৩)
অস্ট্রেলিয়া (দ্বিতীয় ইনিংস)
ওয়ার্নার ন. আ. ১৬৬ • ২২৮
বার্নসক রিজ়ওয়ান বো শাহিন ৪ • ৯
লাবুশানে ন. আ. ১২৬ • ২০৫
অতিরিক্ত ৬
মোট ৩০২-১ (৭৩)
পতন: ১-৮ (বার্নস, ৩.৩)।
বোলিং: মহম্মদ আব্বাস ১৯-৬-৫৬-০, শাহিন শা আফ্রিদি ১৮-৪-৪৮-১, মহম্মদ মুসা ১৩-১-৭১-০, ইয়াসির শা ১৪-০-৮৭-০, ইফতিকার আহমেদ ৮-০-৩০-০, আজহার আলি ১-০-৯-০।