এই বছরেই অস্ট্রেলিয়ায় বসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। সব দেশই সেই দিকে তাকিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছে দল। চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পালা। আর সেই লক্ষ্যে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ হয়ে উঠছে গুরুত্বপূর্ণ। সব দেশের ক্রিকেট বোর্ডই আইপিএলে পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাই জাতীয় দলে ফেরার লক্ষ্যে এই প্রতিযোগিতাকে ব্যবহার করতে চাইছেন অনেকেই। আইপিএলে ভাল পারফর্ম করা মানেই বিশ্বকাপের দলে এক পা বাড়িয়ে রাখা। কাদের কাছে আইপিএল খুব গুরুত্বপূর্ণ? দেখে নেওয়া যাক এমনই কয়েক জন তারকাকে।
শুভমন গিল যেমন এই তালিকায় প্রথম দিকে থাকবেন। গত দুই বছর ধরে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলছেন তিনি। ২০১৮ সালের নিলামে তাঁকে এক কোটি ৮০ লক্ষ টাকায় নিয়েছিল কেকেআর। তার পর থেকে দলে নিয়মিত তিনি। এত দিন তাঁকে প্রধানত ছয়-সাত নম্বরে নামানো হয়েছে। ফলে, বাইশ গজে খুব বেশি সময় কাটাতে পারেননি তিনি।
এ বারের আইপিএলের জন্য যদিও তাঁকে সম্ভবত ওপেনার হিসেবেই ভাবা হচ্ছে। ক্রিস লিন ও রবিন উথাপ্পার মতো দুই নিয়মিত ওপেনারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে, সুনীল নারিনের সঙ্গে ওপেনার হিসেবে হয়ত তাঁকেই দেখা যাবে। যার ফলে বড় রানের সুযোগ বাড়বে। এই মুহূর্তে রোহিত-রাহুলকেই নিশ্চিত দেখাচ্ছে ওপেনার হিসেবে। ধওয়ন ভুগছেন চোট-আঘাতে। ফলে গিল হতেই পারেন তৃতীয় ওপেনার।
প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের নাম শোনা গিয়েছিল ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির মুখে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ’ হিসেবে ব্যবহার করা হতেই পারে কর্নাটকি পেসারকে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। কোহালি বলেছিলেন যে, প্রসিদ্ধের গতি ও বাউন্স অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কাজে আসতে পারে। তবে জাতীয় দলে আসা সহজ হবে না তাঁর জন্য।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেন প্রসিদ্ধ। আইপিএলে এখনও পর্যন্ত খেলেছেন ১৮ ম্যাচ। ২৯ স্ট্রাইক রেটে নিয়েছেন ১৪ উইকেট। ইকনমি রেট ৯.৩২। ২৩ বছর বয়সি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন ছয় ম্যাচ। নিয়েছেন ২০ উইকেট। ৪১ লিস্ট এ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। যাতে নিয়েছেন ৬৭ উইকেট। তবে এখনও জাতীয় দলে আসেননি তিনি।
ক্রুণাল পাণ্ড্য হলেন আইপিএলের অত্যন্ত পরিচিত মুখ। হার্দিকের দাদা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে মনে রাখার মতো অজস্র ম্যাচ খেলেছেন। তিনি হলেন অলরাউন্ডার। তবে ভাইয়ের মতো পেসার নন, তিনি হলেন স্পিনার। আর ব্যাটের হাতও বেশ ভাল। জাতীয় দলে স্পিনার-অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁর দাবি জোরাল করার মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে আইপিএল।
জাতীয় দলের হয়ে এখনও পর্যন্ত ১৯ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ক্রুণাল। বাঁ-হাতি ২৪.২০ গড়ে করেছেন ১২১ রান। নিয়েছেন ১৪ উইকেটও। ইকনমি রেট ৮.১১। সদ্য ভারত এ দলের হয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজে নেন এক উইকেট। একটা ম্যাচে অপরাজিত থাকেন ৫১ করে। দারুন কিছু করতে পারলে ফের জাতীয় দলের জায়গা খুলতে পারে তাঁর জন্য।
Chris Green
আইপিএলে কেকেআরের জার্সিতে দেখা যাবে তাঁকে। স্পিনার হিসেবে রানের গতি আটকানোতেই তাঁর নাম রয়েছে। স্টাম্প আক্রমণ করে বোলিং তাঁর বিশেষত্ব। গতির হেরফেরে বোকা বানান ব্যাটসম্যানদের। নিলামে তাঁকে ২০ লক্ষ টাকায় নিয়েছে কেকেআর। এই মুহূর্তে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য তিন মাস নির্বাসিত হলেও আইপিএলে খেলবেন তিনি।
টম ব্যান্টন হলেন ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। গত মরসুমে ঘরোয়া টি২০ প্রতিযোগিতায় ১৩ ম্যাচে ৫৪৯ রান করেছিলেন। স্ট্রাইক রেট ছিল ১৬০ রানেরও বেশি! প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী ছিলেন তিনি। সমারসেটের হয়ে কেন্টের বিরুদ্ধে এক ম্যাচে ৫১ বলে সেঞ্চুরিতেও পৌঁছে গিয়েছিলেন।
২১ বছর বয়সির বড় শট নেওয়ার ক্ষমতার জন্যই নিলামে কলকাতা নাইট রাইডার্স এক কোটি টাকায় নিয়েছে ব্যান্টনকে। বিগ ব্যাশ লিগে তাঁকে নিয়েছে ব্রিসবেন হিটও। ইংল্যান্ড দলে জস বাটলার, জনি বেয়ারস্টোর মতো উইকেটকিপার থাকায় প্রথম দলে ব্যান্টনের আসা যদিও সোজা হচ্ছে না। তবে আইপিএলে ভাল খেললে ডাক পেতেই পারেন।
শ্রেয়াস গোপাল বেশ কয়েক বছর ধরেই আইপিএলে নিয়মিত। এবং তিনি রীতিমতো ধারাবাহিকও। আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ৩১ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। লেগস্পিনার ৭.৫০ ইকনমি রেট দিয়ে নিয়েছেন ৩৮ উইকেট। গত দুই বছর ধরে রাজস্থান রয়্যালসের বোলিংয়ের বড় ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি।
২০১৯ সালের আইপিএলে ২৬ বছর বয়সি নিয়েছিলেন ২০ উইকেট। ছিলেন দলের এক নম্বর স্ট্রাইক বোলার। পাশাপাশি, লোয়ার অর্ডারে ভাল ব্যাটও করতে পারেন তিনি। এমন বোলারের খোঁজেই কিন্তু আছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। যে বিশেষজ্ঞ বোলার চার ওভার হাত ঘোরানোর পর ব্যাটেও ভরসা দেবে। গোপাল কিন্তু সেটা পারেন।
ক্রিস লিন গত ডিসেম্বরে আইপিএল নিলামের শুরুতে অবিক্রিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত দুই কোটি টাকায় তাঁকে নেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। চার বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বইয়ের দলের ওপেনিংয়ে দেখা যাবে ২৯ বছর বয়সিকে। অস্ট্রেলিয়া দলে তৃতীয় ওপেনার হিসেবে নিজের জায়গা পাকা করতে এই প্রতিযোগিতাকে ব্যবহার করতে চাইছেন তিনি।
এখনও পর্যন্ত আইপিএলে ৪১ ম্যাচ খেলেছেন লিন। ১৪০.৬৫ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১২৮০ রান। তবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের তাঁকে ছেড়ে দেওয়া বিস্মিত করেছিল ক্রিকেটমহলকে। এ বারের আইপিএল তাই নিজেকে চেনানোর মঞ্চও হয়ে উঠছে তাঁর সামনে। সফল হলে বিশ্বকাপের দলে আসার পুরস্কার মিলতেই পারে।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কি জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন? নাকি, আবার তাঁকে দেখা যেতে পারে নীল রঙের জার্সিতে? গত কয়েক মাস ধরে এই প্রশ্নগুলোই আলোচিত হয়েছে ক্রিকেটমহলে। যার উত্তর মেলেনি। জাতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী অবশ্য বলেছেন যে আইপিএলের উপরই নির্ভর করছে ধোনির ভবিষ্যৎ।
চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে ধোনির সামনে এ বারের আইপিএলের গুরুত্ব সেই কারণেই আলাদা। যদি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে থাকতে চান, তবে এই টুর্নামেন্টে পুরনো ছন্দে তাঁকে থাকতেই হবে। আর তিনি শুরু করেও দিয়েছেন অনুশীলন। দীর্ঘদিন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন তিনি। কাজটা তাই বেশ কঠিন। তবে ধোনি বলেই অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলতে পারেন!