ছন্দহীন বিরাট কোহলী। —ফাইল চিত্র
কেউ বললেন তাঁকে ছাড়া দল গড়া সম্ভব নয়, কেউ বললেন বাদ দেওয়া উচিত তাঁকে। এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল নির্বাচন হলে বিরাট কোহলীকে সেই দলে রাখা নিয়ে নানা মত প্রাক্তন নির্বাচকদের।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। বাকি এখনও চার মাস। কিন্তু এখনই যদি বেছে নেওয়া হয় সেই বিশ্বকাপের দল, সেই দলে কি সুযোগ পাবেন বিরাট কোহলী? যিনি ব্যাট করতে নামলে এক সময় নিশ্চিন্ত বোধ করত ভারত, সেই ব্যাটারের ছন্দহীন সময়ে তাঁকে দলে রাখা সম্ভব? প্রাক্তন নির্বাচকরা নানা মতে বিভক্ত।
ভারতীয় দলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে যে সময় অধিনায়ক করা হয়েছিল, সেই সময় নির্বাচক ছিলেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “এই মুহূর্তে যে ছন্দে বিরাট রয়েছে তাতে ওকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রাখা একটু মুশকিল। আমি নির্বাচক হলে ওকে নিতাম না। দীর্ঘ দিন ধরে ছন্দে নেই বিরাট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ও যে ভাবে খেলছে তাতে রাখা মুশকিল। শুধু ব্যাটিং নয়, বিরাটের ফিল্ডিংয়েও প্রভাব পড়ছে। এই সময় দাঁড়িয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল নির্বাচন করলে হয়তো বিরাটকে নেওয়া হত না।” তাঁর মতে বিরাটকে দলে রাখলে তরুণ ক্রিকেটারদের বঞ্চিত করা হবে। দল নির্বাচনের সময় এখন যে সব ক্রিকেটার ছন্দে রয়েছেন তাঁদের প্রাধান্য দেওয়াই উচিত বলে মনে করেন সম্বরণ।
ইডেনে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ শতরান বিরাটের। এর পর আড়াই বছর কেটে গিয়েছে। ম্যাচের পর ম্যাচ গিয়েছে, কিন্তু বিরাটের ব্যাট থেকে শতরান আসেনি। শেষ দশটি টি-টোয়েন্টি ইনিংসে বিরাটের সংগ্রহ ৩০৭ রান। চারটি অর্ধশতরান করেছেন। চারটি ইনিংসে আবার দুই অঙ্কের রানই পার করতে পারেননি। ধারাবাহিকতার অভাব দেখা গিয়েছে বার বার। যদিও এখনও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিরাটের গড় ৫০-এর উপর। এমন একজন ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া সম্ভব?
সম্বরণের থেকে ভিন্ন মত সৈয়দ কিরমানির। তিনি প্রধান নির্বাচক থাকার সময়ই ভারতীয় দলে জায়গা পান মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কিরমানি বললেন, “আমি অবশ্যই দলে রাখব বিরাটকে। ওর যা অভিজ্ঞতা রয়েছে তাতে বাদ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এত বছর ধরে খেলছে বিরাট। ও দেখিয়েছে ওর ক্ষমতা কতটা। একটা খারাপ সময় যেতেই পারে। আশা করব বিশ্বকাপের আগে ছন্দে ফিরবে বিরাট। সাজঘরে বিরাট কোহলী থাকা মানে তরুণদের অনুপ্রেরণা। বিশ্বকাপের দলে অবশ্যই রাখব বিরাটকে।”
একই মত প্রণব রায়ের। কিরমানি প্রধান নির্বাচক থাকার সময় পূর্বাঞ্চলের নির্বাচক ছিলেন তিনি। প্রণব বললেন, “বিরাট বড় মাপের ক্রিকেটার। ওকে বাদ দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল নির্বাচন করা যাবে না। বিরাট দলে থাকা মানে বিপক্ষের উপর বাড়তি চাপ। এক বার যদি ও ক্রিজে দাঁড়িয়ে যায় তা হলে একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। বিরাটকে বাদ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ছন্দ খারাপ যেতেই পারে তা বলে বিরাটকে বাদ দেওয়া যায় না।”
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু ২২ অক্টোবর। ভারতের প্রথম ম্যাচ ২৩ অক্টোবর। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলবে ভারত। গত বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই ১০ উইকেটে হেরেছিল ভারত। সে বার অধিনায়ক ছিলেন বিরাট। সেই বিশ্বকাপের পরেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নেতৃত্ব ছেড়ে দেন তিনি। এর পর এক দিনের ক্রিকেটে তাঁকে নেতৃত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়। সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় রোহিত শর্মার হাতে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন তিনিই। রোহিতের দলে জায়গা হবে বিরাটের? সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে চেতন শর্মার নেতৃত্বে থাকা নির্বাচক দল।