রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বা বিরাট কোহলি হওয়া হল না রোহিত শর্মার। তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। পাঁচ বার আইপিএল-সহ মুম্বইকে ছ’টি ট্রফি দেওয়া অধিনায়কের এমন অপসারণ মেনে নিতে পারছেন না ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ। প্রশ্ন উঠছে, অধিনায়ক রোহিতের কি আরও সম্মানজনক বিদায় প্রাপ্য ছিল না?
প্রাপ্য এবং প্রাপ্তির হিসাব মেলে না জীবনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। হয়তো রোহিতেরও মিলল না। একটি সূত্র বলছে, এক দিনের বিশ্বকাপের আগেই রোহিতকে জানানো হয়েছিল তাঁকে আর অধিনায়ক রাখা হবে না। আরেকটি সূত্রের দাবি, মুম্বই কর্তৃপক্ষ রোহিতকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রোহিত নিজে মুখ খোলেননি। খুললে আসল সত্য প্রকাশ্যে আনবেন কি? সম্ভাবনা কম।
রোহিত ১০ বছর নেতৃত্ব দিলেও তিনি মুম্বইয়ে কেনা ক্রিকেটার। চুক্তিবদ্ধ খেলার জন্য। অধিনায়কত্বের কোনও চুক্তি নেই। সূত্রের খবর, অধিনায়ক হবেন এই শর্তেই নাকি গুজরাত টাইটান্স থেকে মুম্বইয়ে ফিরেছেন হার্দিক পাণ্ড্য। অধিনায়ক রাখতে হবে এমন কোনও শর্ত রোহিত দিয়েছিলেন বলে জানা যায়নি।
২০১৩ সালের আইপিএলের মাঝ পথে রিকি পন্টিং দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায় রোহিতকে অধিনায়ক করেছিল মুম্বই। দায়িত্ব নিয়ে প্রথম বছরেই দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। তার পর আরও চার বার রোহিতের নেতৃত্বে আইপিএল জিতেছে মুম্বই। প্রতিযোগিতার সফলতম অধিনায়ক। রোহিত তিন ধরনের ক্রিকেটেই ভারতের ঘোষিত অধিনায়ক। যদিও গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর দেশের হয়ে আর ২০ ওভারের ক্রিকেট খেলেননি তিনি। তার পর থেকে ভারতের খেলা ২৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ১৩টিতেই নেতৃত্ব দিয়েছেন হার্দিক।
হার্দিক কি আইপিএল খেলতে পারবেন। বিশ্বকাপে চোট পাওয়ার পর থেকে মাঠের বাইরে তিনি। কবে মাঠে ফিরবেন, তা নিয়ে কোনও তথ্য দেয়নি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাব পর্ব চলছে তাঁর। হার্দিকের চোট নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চান না বোর্ড কর্তারা। তাঁকে সম্পূর্ণ ফিট করতে ১০০ দিনের প্রকল্প নিয়েছে বোর্ডের মেডিক্যাল টিম। লোকসভা নির্বাচনের জন্য আইপিএল এগিয়ে এলে শুরু থেকে হার্দিককে নাও পেতে পারে মুম্বই। কারণ, মেডিক্যাল টিমের অনুমতি ছাড়া মাঠে নামতে পারবেন না বরোদার অলরাউন্ডার। হার্দিকের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আত্মবিশ্বাসী মুম্বই তাঁকেই অধিনায়ক করেছে।
২০২১ এবং ২০২২ সালের আইপিএলের রোহিতের নেতৃত্বে মুম্বইয়ের ফল ছিল হতাশাজনক। ব্যাটার রোহিতও নিজের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। যদিও ২০২৩ সালের আইপিএলে তৃতীয় স্থানে শেষ করেছিল রোহিতের দল। পর পর দু’বারের ব্যর্থতা তাঁকে নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ধোনি এবং কোহলি নিজেরাই নেতৃত্ব ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন। সেই সুযোগ পাননি রোহিত। সচিন তেন্ডুলকর থেকে হরভজন সিংহ, তাঁর পর পন্টিং, রোহিত এবং হার্দিক— অধিনায়ক পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে মুম্বই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই সাহসী। নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেন। ভবিষ্যতের কথা ভেবে পদক্ষেপ করেন। এ বারও অন্যথা হয়নি।
মুম্বইয়ের ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত রোহিত শর্মার ভবিষ্যৎও। ১৯ ডিসেম্বর আইপিএলের মিনি নিলামের পর ২০ ডিসেম্বর আবার খুলবে ট্রেড উইন্ডো। সেই সময় কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি চাইলে রোহিতকে কিনে নিতে পারে মুম্বইয়ের কাছ থেকে। সে জন্য আগ্রহী ফ্র্যাঞ্চাইজ়িকে নিলামের টেবিলে বাঁচিয়ে রাখতে হবে ১৬ কোটি টাকা। কারণ, চুক্তি অনুযায়ী মুম্বইয়ের কাছ থেকে আইপিএল প্রতি এই টাকা এখন পান রোহিত। ভারতীয় দলের অধিনায়ক কি অন্য দলের হয়ে খেলবেন? তাঁর ইচ্ছাও গুরুত্বপূর্ণ। মুম্বই কি রোহিতকে ছাড়তে রাজি হবে? অন্তত বিশ্বকাপে তাঁর আগ্রাসী ফর্ম দেখার পর আপাত ভাবে হবে না বলেই ধারণা ক্রিকেট মহলের। সে ক্ষেত্রে মুম্বইয়ের হয়েই চাপ মুক্ত হয়ে খেলতে পারবেন রোহিত।
আইপিএলের আগে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ় রয়েছে। পরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বিশেষ করে রোহিতই বিশ্বকাপে অধিনায়ক থাকলে ভারতীয় দল নিয়ে ভাবার আরও বেশি সময় পাবেন। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এবং এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে রোহিতের ভারত হেরে গিয়েছে। ২০২৪ সালে বিশ্বকাপ ব্যর্থতা মোছার সুযোগ পেতে পারেন অধিনায়ক রোহিত। সে ক্ষেত্রে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত রোহিতের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটজীবনের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে।
কোহলি নেতৃত্ব ছাড়লেও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। চেন্নাই সুপার কিংসে ধোনিও আছেন সম্মানে। নেতৃত্ব ছেড়েও আবার ফিরে পেয়েছেন। তাঁরা খেলছেন, কোচ-অধিনায়ককে পরামর্শ দিচ্ছেন, জুনিয়র ক্রিকেটারদের সাহস জোগাচ্ছেন। অনেকটা মেন্টরের ভূমিকা পালন করছেন। রোহিতকে মুম্বইয়ে একই ভূমিকায় দেখা যেতে পারে। এই মুম্বই যে তাঁর হাতেই গড়া। হয়তো নতুন পরিস্থিতিতে চাপমুক্ত রোহিত মাঠে থাকবেন অভিভাবকের মতো। কঠিন পরিস্থিতিতে দলকে জেতাবেন। ক্রিকেটপ্রেমীরা মুগ্ধ হবেন তাঁর স্বার্থহীন আগ্রাসী ব্যাটিং দেখে। দলের স্বার্থে সবই করবেন পেশাদার ক্রিকেটার।
সবই হবে। তবে শুরুটা আরও সুন্দর ভাবে হতে পারত। ধোনি-কোহলি হওয়া হল না রোহিতের।