চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে উইকেট নিয়ে উল্লাস মুম্বইয়ের ভিগ্নেশ পুথুরের। ছবি: পিটিআই।
ইনিংসের বিরতিতে রোহিত শর্মার বদলে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে যখন তাঁর নাম দেখানো হল, তখন সকলে ভেবেছিলেন চেন্নাইয়ের মাঠে এক জন অতিরিক্ত স্পিনার খেলাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুম্বই। কিন্তু আচমকা নয়, অনেক ভেবেচিন্তেই খেলানো হয় ভিগ্নেশ পুথুরকে। অনামী এই স্পিনার ছিলেন মুম্বইয়ের তুরুপের তাস। প্রথম ম্যাচে নামার আগেই নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছিলেন তিনি।
খেলা শেষে মুম্বইয়ের বোলিং কোচ পারশ মামব্রে সবটা খোলসা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, নেটে রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদব, তিলক বর্মাদের সমস্যায় ফেলেছিলেন ভিগ্নেশ। অর্থাৎ, নিজের যোগ্যতায় জায়গা পাকা করেছেন তিনি। মামব্রে বলেন, “রোহিত, সূর্য, তিলকেরা ওর বিরুদ্ধে নেটে ব্যাট করেছে। সকলেই সমস্যায় পড়েছে। ওর হাত দেখে বোঝা মুশকিল কী ধরনের বল করবে। সেই কারণেই ওর উপর আমাদের আস্থা ছিল। আমরা ভেবেছিলাম, ওকে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে খেলাব। সেই সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, তা এখন পরিষ্কার।”
ভিগ্নেশকে নেওয়ার পুরো কৃতিত্ব মুম্বইয়ের স্কাউট দলকে দিয়েছেন মামব্রে। বোলিং কোচ বলেন, “কেরল থেকে ওকে খুঁজে বার করার পুরো কৃতিত্ব স্কাউট দলের। ওরা বুঝতে পেরেছিল, ভিগ্নেশের মধ্যে সেই প্রতিভা রয়েছে। আমরাও ট্রায়ালে সেটা বুঝেছিলাম। দলের সিনিয়র ক্রিকেটারেরা ওকে খেলাতে চেয়েছিল। আগামী দিন ভিগ্নেশ আমাদের দলের বড় অস্ত্র হয়ে উঠবে।”
নিজের রাজ্য কেরলের হয়ে কোনও ফরম্যাটে একটিও ম্যাচ খেলেননি ২৪ বছরের ভিগ্নেশ। কেরলের ক্রিকেট লিগের একটি দলের হয়ে ভাল খেলেছিলেন। সেখানেই চোখে পড়ে যান মুম্বইয়ের ‘স্কাউট’দের। তার পর থেকে ঘষেমেজে তৈরি করা হচ্ছিল তাঁকে। রবিবার সেই আস্থার দাম পেল মুম্বই।
২০০১-এর ২ মার্চ কেরলের মালাপ্পুরমের পেরিনথালমান্নায় জন্ম ভিগ্নেশের। পিতা সুনীল কুমার অটোচালক। মা কেপি বিন্দু গৃহবধূ। আর্থিক দুরবস্থা থাকা সত্ত্বেও বাবা-মা দু’জনেই ভিগ্নেশকে ক্রিকেট খেলায় উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। এখন পিটিএম কলেজে সাহিত্য নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করছেন। কেরলের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৪ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছেন ভিগ্নেশ। ছোটবেলায় ক্রিকেট খেলার সময় মিডিয়াম পেস এবং টুকটাক স্পিন বোলিং করতেন ভিগ্নেশ। পরে স্থানীয় কোচ মহম্মদ শেরিফের পরামর্শে স্পিন বোলিং শুরু করেন। তখন ভিগ্নেশ ‘চায়নাম্যান’ বোলিং কাকে বলে, সেটা জানতেনই না। কিন্তু সেই বোলিং নিখুঁত করার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন।
নিজের ক্রিকেট খেলার উন্নতির জন্য ত্রিশূরে চলে যান। সেন্ট টমাস কলেজের হয়ে কেরল কলেজ প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগে বেশ কিছু উইকেট নিয়ে নজর কাড়েন। ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করায় জলি রোভার্স ক্রিকেট ক্লাব তাঁকে সই করায়। সেখান থেকে তিনি কেরল প্রিমিয়ার লিগে দল আলেপ্পি রিপল্স দলে সুযোগ পান। সেটাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
আলেপ্পির হয়ে খেলার সময় দু’টি ম্যাচে তিনটি উইকেট নেন। সেই সময় তাঁর ‘চায়নাম্যান’ বোলিং নজর কেড়ে নেয়। ওই প্রতিযোগিতায় হাজির ছিলেন মুম্বইয়ের ‘স্কাউট’রা। তাঁরা ভিগ্নেশকে ট্রায়ালের জন্য ডেকে নেন। সেখানে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের তারকা কিছু ক্রিকেটারকে বল করেন তিনি। নির্বাচকেরাও খুশি হন। এর পর মহা নিলামে তাঁকে ন্যূনতম মূল্য ৩০ লাখ টাকাতেই কিনে নেয় মুম্বই।
আইপিএল বা বড় ধরনের ক্রিকেট ম্যাচ খেলা কোনও অভিজ্ঞতা ভিগ্নেশের ছিল না। তাই তাঁকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চায়নি মুম্বই। দক্ষিণ আফ্রিকা টি২০ লিগ চলার সময় এমআই কেপ টাউন দলের নেট বোলার হিসাবে তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গোটা সময়েই কেপ টাউন দলের সঙ্গে ছিলেন। গোটা খরচই বহন করেছিল মুম্বই।
কব্জির মোচড়ে বল করা ভিগ্নেশের খুব পছন্দের। ‘চায়নাম্যান’ বল করেন বলে কুলদীপ যাদব পছন্দের স্পিনার। তবে বোলিং অ্যাকশন নিজের পছন্দমতো করে নিয়েছেন। প্রথম ম্যাচেই নজর কেড়েছেন। এই মরসুমের সেরা প্রতিভা কি হয়ে উঠতে পারবেন এই বাঁহাতি স্পিনার।