শাকিব আল হাসান ও বিরাট কোহলী। ফাইল ছবি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে না কি বিশ্রাম চেয়েছেন বিরাট কোহলী। অন্য দিকে, জিম্বাবোয়ে সফরে বিশ্রাম চেয়েছেন শাকিব আল হাসান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজেও খেলবেন না তিনি। দেশের হয়ে খেলতে কেন হঠাৎ অনীহা তাঁদের, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। বিশেষ করে যখন কেউই সেরা ছন্দের কাছাকাছি নেই।
আইপিএলের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিরাট কোহলীকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। টেস্টের পর বিশ্রাম দেওয়ার জন্য রাখা হয়নি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের দলে। সূত্রের খবর, তার পরেও কোহলী নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে। বেশ কিছু দিন ধরেই চেনা ছন্দের ধারে কাছে নেই কোহলী। কোনও ধরনের ক্রিকেটেই রান পাচ্ছেন না।
প্রাক্তন অধিনায়কের ছন্দ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে অল্প হলেও। তার উপর তাঁর বিশ্রাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘিরেও প্রাক্তন ক্রিকেটাররা নানা মন্তব্য শুরু করেছেন। কোহলীর মতোই জল্পনা চলছে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক শাকিব আল হাসানকে ঘিরেও।
এখন শাকিবকে বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সম্প্রতি তাঁকে টেস্ট অধিনায়ক করা হয়েছে। দায়িত্ব দেওয়ার আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। কারণ তিনি মাঝে মধ্যেই নিজেকে জাতীয় দল থেকে সরিয়ে নেন। শাকিব যাতে দেশের হয়ে সব ম্যাচ খেলেন, নেতৃত্বের দায়িত্ব দিয়ে সেটাই নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন বিসিবি কর্তারা। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। টেস্ট সিরিজেও তেমন ভাল কিছু করতে পারেননি শাকিব।
এর আগে পারিবারিক কারণে দেশের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ খেলেননি। গত এপ্রিল মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ খেলেননি শাকিব। তার আগে জানুয়ারি মাসে যাননি নিউজিল্যান্ড সফরে। গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ঘরের মাঠে পকিস্তানের বিরুদ্ধেও টেস্ট খেলেননি শাকিব। কখনও চোট, আবার কখনও পারিবারিক কারণে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। গত বছর আইপিএল খেলার জন্য শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ খেলতে রাজি হননি। বার বার জাতীয় দলের হয়ে খেলতে না চাওয়ায় শাকিবের উপর সে সময় বিরক্ত হন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। নাম না করে তিনি জানিয়ে দেন, কোনও ক্রিকেটারকেই দেশের হয়ে খেলার জন্য অনুরোধ করবে না বোর্ড। এক বছরের নির্বাসন মুক্ত হওয়ার পরেই শাকিবের ওই আচরণ ভাল ভাবে নেননি বিসিবি কর্তারা।
দুই দেশের দুই অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের ছন্দ নিয়েই প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনই বার বার জাতীয় দলকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। প্রাক্তন ক্রিকেটার ইরফান পাঠান কয়েক দিন আগেই কোহলীর নাম না করে সমালোচনার সুরে বলেছেন, ‘বিশ্রাম নিয়ে কেউ কখনও ছন্দে ফেরেনি।’ আরেক প্রাক্তন ক্রিকেটার আকাশ চোপড়াও সম্প্রতি বলেছেন, ‘‘কোহলীকে বিশ্রামে পাঠিয়ে কোনও লাভ হবে না। ওকে ম্যাচের মধ্যেই রাখা উচিত।’’ আবার ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভনের মতে, টানা ক্রিকেটের চাপে ক্লান্ত কোহলী। সেরা ছন্দের কোহলীকে ফিরে পেতে হলে তাঁকে অন্তত তিন মাস ক্রিকেট থেকে দূরে রাখা উচিত।
মাঠে নেমে ছন্দ খুঁজে না পেলেও কোহলী, শাকিবদের মাঠের বাইরের ছন্দে কোনও ছাপ পড়েনি। হাসি খুশিই দেখা যাচ্ছে তাঁদের। কোহলীর ব্যাটে রান না থাকলেও মাঠে তাঁর আচরণে কোনও প্রভাব দেখা যায়নি। শাকিব নিজেই জাতীয় দলকে বার বার এড়িয়ে গেলেও সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সতীর্থদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর সেই মন্তব্য ভাল ভাবে নেননি বিসিবি কর্তাদের একাংশও। কোহলীও কি তবে এ বার শাকিবের পথেই হাঁটছেন। অতিরিক্ত ক্রিকেট কি সত্যিই ক্লান্ত করছে ক্রিকেটারদের? খেলার চাপে হারিয়ে যাচ্ছে কোহলী, শাকিবদের ছন্দ?