ফাইল চিত্র।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দ্বিতীয় টেস্টে কে এল রাহুলের নেতৃত্ব দেওয়ার ধরন দেখে আমি সত্যিই খুব হতাশ। না দেখতে পেলাম আগ্রাসন, না ছিল কোনও পরিকল্পনা। মনে হচ্ছিল, জোর করেই ওর কাঁধে নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে।
আইপিএলের মঞ্চে তো দেখা গিয়েছে, ব্যাট হাতে একাই দলকে টানে রাহুল। কিন্তু ওর নেতৃত্বে বোলাররা বিপক্ষকে কম রানে আটকাতে পারে না। পুরো দোষটাই কি তা হলে বোলারদের? আমার তা একেবারেই মনে হয় না। অধিনায়কের হাঁটাচলাই একটা দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দেয়। তাই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং বিরাট কোহলির নেতৃ্ত্বে ভারতীয় দলের মেজাজ পাল্টে যেতে দেখেছি। তাদের কাছে কোনও প্রতিপক্ষই বড় নয়। অথচ রাহুলের নেতৃত্বে শক্তিশালী ভারত এ ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে আত্মসমর্পণ করবে, সত্যি আশা করিনি। অজিঙ্ক রাহানের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দলে থাকতে কেন রাহুলকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হল? শেষ বারের অস্ট্রেলীয় সফরের কথা কি সবাই ভুলে গিয়েছেন? সেই সাফল্যের কথা মাথায় রেখেই তো রাহানেকে আরও এক বার নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল। অনেকেই বলতে পারেন রাহুল সহ-অধিনায়ক, তাই ওকেই নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে আমি মনে করি, দলের কথা ভেবে রাহানেকেই ওই দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল।
শেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম টেস্ট খেলে দেশে ফিরে এসেছিল বিরাট কোহলি পিতৃত্বকালীন ছুটিতে। অ্যাডিলেডে দিন-রাতের টেস্টে ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জা থেকে দলকে বার করে আনার দায়িত্ব ছিল অজিঙ্ক রাহানের কাঁধে। মেলবোর্নে দুরন্ত সেঞ্চুরি এবং স্মরণীয় জয়। তার পর থেকে ভারতীয় দলের একের পর এক তারকা ক্রিকেটার চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছে। গ্যাবায় শেষ টেস্টে ভারতের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলারের নাম ছিল মহম্মদ সিরাজ! যে মাত্র দু’টি টেস্ট খেলে সেই ম্যাচে নেমেছিল। অভিষেক হয়েছিল টি নটরাজন এবং ওয়াশিংটন সুন্দরের। কারণ, যশপ্রীত বুমরা, আর অশ্বিন, মহম্মদ শামি চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছিল সিরিজ় থেকে। রাহানের নেতৃত্বেই সেই ম্যাচ জিতে সিরিজ় ২-১ করে দেশে ফিরেছিল ভারত। সেই সাফল্যের পুরস্কার হিসেবে অন্তত এক বার নেতৃত্ব তুলে দেওয়া উচিত ছিল রাহানেকে।
বিরাটের মতো আগ্রাসী নয় রাহানে। ও অনেকটা ধোনির মতো, মাথা ঠান্ডা। পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, ও মেজাজ হারায় না। ভয়ও পায় না। জোহানেসবার্গে রান না পেলে ওর ক্রিকেট জীবনই প্রশ্নের মুখে চলে আসত। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কঠিন পিচে লড়াকু ৫৮ রানের ইনিংস তো খেলে দিয়ে গেল। এখানেই বোঝা যায়, মানসিক ভাবে ও কতটা শক্তিশালী। অধিনায়ক হতে গেলে মানসিক ভাবে শক্তিশালী হতেই হবে।
একেবারেই বলছি না যে, রাহুল খারাপ অধিনায়ক। তবে টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা ওর নেই। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচ, যেখানে জোহানেসবার্গে জিতলেই প্রথম বারের মতো সে দেশে টেস্ট সিরিজ় জেতার স্বপ্ন সত্যি হত ভারতীয় দলের। সেখানে অনভিজ্ঞ একজনকে নেতৃত্বের দায়িত্ব না দিলেই পারত টিম ম্যানেজমেন্ট।
চতুর্থ ইনিংসে ওয়ান্ডারার্সের মতো উইকেটে ২৪০ রান করা একেবারেই সহজ নয়। প্রতিপক্ষ যে দলই হোক, লক্ষ্য খুবই কঠিন। শেষ দিন বৃষ্টির পরে পরিবেশ আরও বোলারদের পক্ষে চলে যায়। কোহলি মাঠে থাকলে অন্তত বিপক্ষের উপরে মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারত। রাহুলের মুখ থেকে সে রকম কোনও আওয়াজই শোনা যাচ্ছিল না। এত শান্ত ভারতীয় দল শেষ কবে দেখেছি, মনে করতে পারছি না। বিদেশ সফরে রোহিত শর্মার অনুপস্থিতি আরও এক বার টের পেল ভারতীয় দল। চোটের জন্য অস্ট্রেলিয়া সফরেও শুরু থেকে ও থাকতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও ফের একই সমস্যা। রোহিত থাকলে নেতৃত্ব নিয়ে সমস্যা হত না।