মুম্বইয়ের নতুন ক্রিকেটার অশ্বনী কুমার। ছবি: সমাজমাধ্যম।
আইপিএলের প্রথম ম্যাচে অনামী বিগ্নেশ পুতুরকে নামিয়ে চমকে দিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। প্রথম ম্যাচেই তিন উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ঘরের মাঠে সোমবার মুম্বই আবার চমক দিল অখ্যাত অশ্বনী কুমারকে খেলিয়ে। বাঁ হাতি জোরে বোলার নিলেন চার উইকেট। একাই ধসিয়ে দিলেন কেকেআরের ব্যাটিং। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অশ্বনীর বোলিংয়ের সামনে কেঁপে গেল কেকেআর। ম্যাচের মাঝে অশ্বনী জানালেন, স্রেফ কলা খেয়ে কলকাতার বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন!
জোরালো গতি, বাউন্সার দেওয়ার ক্ষমতা, গতির হেরফের এবং চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য পরিচিত অশ্বনী। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে উঠে এসেছেন ঠিকই। তবে বেশির ভাগ উঠতি ক্রিকেটারের মতো তিনিও রাজ্যভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগের ফসল।
পঞ্জাবের মোহালির ঝনজেরীতে জন্ম ২৩ বছরের অশ্বনীর। ১৮ বছর বয়সে পঞ্জাবের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন। ২০ বছর বয়সে এক দিনের ক্রিকেট এবং পরের বছর টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়। তবে পঞ্জাবের নিজস্ব টি-টোয়েন্টি লিগ শের-ই-পঞ্জাব টি২০ ট্রফি খেলে উঠে এসেছেন তিনি। পঞ্জাবের হয়ে এখনও পর্যন্ত দু’টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ এবং চারটি করে এক দিনের ম্যাচ ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন।
২০২৩ সালে একটি ম্যাচ রাতারাতি শিরোনামে তুলে আনে অশ্বনীকে। সেই ম্যাচে শেষ ওভারে জেতার জন্য বিপক্ষ দলের আট রান দরকার ছিল। অশ্বনী চার রান দেন। একটি উইকেটও তুলে নেন। পরের ম্যাচে প্রথম দু’ওভারে ৩৩ রান দেন। তবে শেষ ওভারে চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে দলকে এক রানে জেতান।
শের-ই-পঞ্জাব টি২০ ট্রফিতে অশ্বনীর একের পর এক ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স দেখে পঞ্জাব নির্বাচকেরা নড়েচড়ে বসেন। তাঁকে পঞ্জাবের সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির দলে নেওয়া হয়। সেখানে খারাপ খেলেননি। বিজয় হজারের দলেও সুযোগ পান। সেখানে অরুণাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে তিনটি উইকেট নেন।
মুম্বইয়ের স্কাউটেরা সারা বছরই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের লিগ দেখে সেখান থেকে ক্রিকেটার তুলে আনেন। ভিগনেশ বা সত্যনারায়ণ রাজুরা যে ভাবে স্থানীয় টি-টোয়েন্টি লিগ থেকে উঠে এসেছেন, সে ভাবে পঞ্জাবের লিগ থেকে তুলে আনা হয়েছে অশ্বনীকে। মহা নিলামে তাঁকে ৩০ লাখ টাকায় কিনেছে মুম্বই। প্রথম ম্যাচেই আইপিএলের উঠতি তারকা হয়ে গেলেন তিনি।
সোমবারের ম্যাচে বল করার আগেই নজরে আসেন অশ্বনী। দ্বিতীয় ওভারে দারুণ একটি ক্যাচ নিয়ে ফেরান কুইন্টন ডি’কককে। বল করতে এসে প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন কেকেআরের অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানেকে। এর পর নিজের দ্বিতীয় ওভারে পর পর ফিরিয়ে দেন রিঙ্কু সিংহ এবং মণীশ পাণ্ডেকে। অশ্বনীর বলে স্টাম্প ছিটকে যায় আন্দ্রে রাসেলের। তবে ১৫তম ওভারে রমনদীপ সিংহের একটি সহজ ক্যাচ ফেলেন। না হলে ১০০ রানেই অলআউট হয়ে যায় কেকেআর।
আইপিএলের প্রথম ভারতীয় বোলার হিসাবে অভিষেক ম্যাচেই চার উইকেট নিলেন অশ্বনী। চতুর্থ বোলার হিসাবে অভিষেক ম্যাচের প্রথম বলেই উইকেট নিলেন। এর আগে এই নজির রয়েছে আলি মুর্তাজা (২০১০), আলজারি জোসেফ (২০১৯) এবং ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের (২০২২)।
ম্যাচের বিরতির সময় সঞ্চালকদের সামনে এসেছিলেন অশ্বনী। সেখানে মেনে নিলেন, অভিষেকের আগে চাপে ছিলেন। কিন্তু দলের ক্রিকেটারেরা তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় কোনও কিছুর অভাব বুঝতে পারেননি। এর পরেই হর্ষ ভোগলে প্রশ্ন করেন, দুপুরে কী খেয়েছিলেন অশ্বনী? হাসতে হাসতে পঞ্জাবের ক্রিকেটারের উত্তর, “আসলে চাপে ছিলাম বলে ভাল করে কিছু খেতেই পারিনি। স্রেফ একটা কলা খেয়ে এসেছি। আসলে খুব একটা খিদে পাচ্ছিল না।”
আগে থেকে পরিকল্পনা করেই তাঁকে নামানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন অশ্বনী। তাঁর কথায়, “আগে থেকে পরিকল্পনা করেই আমাকে নামানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, অভিষেক ম্যাচ স্রেফ উপভোগ করতে। যে ভাবে এত দিন বল করে এসেছি, সে ভাবেই যেন বল করি। হার্দিক ভাই পরামর্শ দিয়েছিল শর্ট বল করতে এবং ব্যাটারের শরীর লক্ষ্য করে বল করতে। সেটা করেই উইকেট পেয়েছি।”