বিরাট কোহলি। —ফাইল চিত্র।
বিশ্বকাপের মাঝে হঠাৎ অধিনায়ক করা হল বিরাট কোহলিকে। লিগ পর্বের খেলা শেষ হওয়ার পরের দিনেই এল এই খবর। ভারতীয় দল টানা ন’টি ম্যাচ জিতে রেকর্ড করলেও রোহিত শর্মার ওপর আস্থা রাখতে পারলেন না ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা) এক দল নির্বাচক।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ১০টি দল ন’টি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে। ছ’টি দল বিদায় নিয়েছে। খেতাব জেতার দৌড়ে ভারত ছাড়াও রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউ জ়িল্যান্ড। প্রতিযোগিতার এক মাস সাত দিন পর বিশ্বকাপের সেরা একাদশ বেছে নিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। সেই দলের অধিনায়ক করা হয়েছে কোহলিকে। অথচ ভাল ফর্মে থাকা রোহিতের জায়গা হয়নি ১১ জনের মধ্যেও। বিশ্বকাপে ধারাবাহিক ভাবে রান পাচ্ছেন রোহিত। ইনিংসের শুরুতে তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সামনে সমস্যায় পড়েছেন সব দলের বোলারেরাই। তবু বিশ্বকাপের সেরা একাদশে জায়গা হয়নি ভারতীয় দলের অধিনায়কের।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পছন্দের সেরা একাদশে প্রথম ওপেনার হিসাবে জায়গা করে নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক-ব্যাটার কুইন্টন ডি’কক। এ বারের বিশ্বকাপে চারটি শতরান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। তাই প্রথম পছন্দ হিসাবে তাঁকে বেছে নিয়েছেন অস্ট্রেলীয় নির্বাচকেরা। এখনও পর্যন্ত ৫৯১ রান করে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। সামলাবেন উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব। দ্বিতীয় ওপেনার হিসাবে তাঁরা বেছে নিয়েছেন নিজেদের দেশের ডেভিড ওয়ার্নারকে। একটা সময় ওয়ার্নারের বিশ্বকাপের থাকা নিয়ে তৈরি হয়েছিল প্রশ্ন। কিন্তু বিশ্বকাপে রানের মধ্যেই রয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ব্যাট হাতে নিয়মিত রান করছেন। রোহিতকে দলে রাখলে ওপেনিংয়ে বাঁহাতি-ডানহাতি জুটির সুবিধা পাওয়া যেত। কিন্তু ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া সেই পথে হাঁটেনি।
ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বরে রাখা হয়েছে এই বিশ্বকাপের আবিষ্কার নিউ জ়িল্যান্ডের রাচিন রবীন্দ্রকে। তরুণ বাঁহাতি অলরাউন্ডারের ক্রিকেটীয় দক্ষতায় মুগ্ধ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরাও। প্রতিযোগিতায় তিনটি শতরান করেছেন তিনি। তাঁর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন নেই। কারণ লিগ পর্বে ৫৬৫ রান করে এখনও পর্যন্ত প্রতিযোগিতার তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী তিনি। বাড়তি পাওনা তাঁর বাঁহাতি স্পিন। নিউ জ়িল্যান্ডের হয়ে ওপেন করলেও তাঁকে রাখা হয়েছে তিন নম্বরে।
রাচিনের পর ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বরে রয়েছেন কোহলি। এখনও পর্যন্ত দু’টি শতরান-সহ মোট ৫৯৪ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। আবার পুরনো কোহলিকে দেখা যাচ্ছে। এখন তিনি অনেক বেশি পরিণত। তাঁকে তাঁর পছন্দের জায়গাই দিয়েছেন অস্ট্রেলীয় নির্বাচকেরা। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে সেরা একাদশের নেতৃত্বের দায়িত্ব।
ব্যাটিং অর্ডারের পাঁচ নম্বরে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এডেন মার্করাম। ভাল ফর্মে রয়েছেন তিনিও। দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডারকে প্রতি ম্যাচেই ভরসা দিচ্ছেন। পাশাপাশি নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা রয়েছে তাঁর। ছয় নম্বরে এক অলরাউন্ডারকে রাখা হয়েছে। তিনি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমে তিনি কী করতে পারেন, তা দেখিয়ে দিয়েছেন আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। চোট নিয়েও তাঁর আগ্রাসী দ্বিশতরানের ইনিংস ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখে মুখে ফিরছে এখনও। তাঁর নির্বাচন নিয়েও তাই প্রশ্ন নেই।
ব্যাটিং অর্ডারের সাত নম্বরে রাখা হয়েছে আর এক অলরাউন্ডারকে। তিনি মার্কো জানসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার ব্যাট এবং বল হাতে ভাল ফর্মে রয়েছেন। ব্যাট হাতে যেমন দ্রুত রান তুলতে পারেন, তেমনই বল হাতেও গুরুত্বপূর্ণ সময় উইকেট নিতে পারেন। অস্ট্রেলীয় নির্বাচকেরা আট নম্বরে রেখেছেন আরও এক অলরাউন্ডারকে। তিনি ভারতের রবীন্দ্র জাডেজা। ২২ গজের লড়াইয়ে তাঁর কার্যকারিতা অজানা নয় ক্রিকেট বিশ্বের। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে সমান দক্ষ তিনি। যে কোনও দলেই অনায়াসে সুযোগ পেতে পারেন জাডেজা। তাঁকে উপেক্ষা করতে পারেনি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও।
ব্যাটিং অর্ডারের শেষ তিনটি জায়গায় রাখা হয়েছে বিশেষজ্ঞ বোলারদের। সেখানেও আধিপত্য ভারতীয়দের। ব্যাটিং অর্ডারের নয় এবং এগারো নম্বরে জায়গা পেয়েছেন যথাক্রমে মহম্মদ শামি এবং যশপ্রীত বুমরা। তাঁদের মাঝে আছেন অ্যাডাম জ়াম্পা। অর্থাৎ, নতুন বলে আক্রমণ শুরুর দায়িত্বে থাকবেন দুরন্ত ফর্মে থাকা ভারতের দুই জোরে বোলার। ভারতীয় উইকেটেও যাঁদের বল খেলতে সব সময় সতর্ক থাকতে হচ্ছে ব্যাটারদের।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বেছে নেওয়া হলে আট নম্বর পর্যন্ত শক্তিশালী ব্যাটিং রয়েছে। জোরে বোলার রয়েছেন তিন জন। স্পিনার রয়েছেন চার জন। অলরাউন্ডার চার জন। প্রথম একাদশে জায়গা পেয়েছেন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠা চারটি দলের ক্রিকেটারেরা। তবে দ্বাদশ সদস্য হিসাবে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার জোরে বোলার দিলশান মদুশঙ্ক। প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কার পারফরম্যান্স ভাল না হলেও নিয়মিত উইকেট পেয়েছেন মদুশঙ্ক। তার স্বীকৃতি পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকদের কাছে।