তারকা: ইডেনে অনুশীলনে কোহলি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ইডেনই সাক্ষী তাঁর শেষ সেঞ্চুরির। ২০১৯-এর নভেম্বরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্টে হেলমেট খুলে ব্যাট তুলে দাঁড়াতে শেষ বার দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সে দিনের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনও সেঞ্চুরি নেই বিরাট কোহলির। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ ওয়ান ডে সিরিজ়ে তিন ম্যাচ মিলিয়ে ২৬ রান করেছেন প্রাক্তন অধিনায়ক। কিন্তু বিরাট কোহলি কখনও হাল ছাড়েন না। ছন্দে ফেরার মরিয়া প্রচেষ্টা তাঁর মধ্যে দেখা গেল সোমবারের ইডেনে।
ভারতীয় টিমবাস থেকে শেষের দিকে নেমেই মাঠে প্রবেশ করেন বিরাট। কিন্তু দলের অধিকাংশ ক্রিকেটার যখন ড্রেসিংরুমে, বিরাট দু’টো ব্যাট নিয়ে একাই চলে যান নেটে। সঙ্গী থ্রো-ডাউন বিশেষজ্ঞ ও দীপক চাহার।
ঠিক যে শট মারতে গিয়ে আউট হচ্ছিলেন, সেখানেই ক্রমাগত বল করে চলেন দীপক। একের পর এক কভার ড্রাইভ করে ছন্দে ফেরার মরিয়া চেষ্টা করতে দেখা যায় তাঁকে। দ্বিতীয় ওয়ান ডে ম্যাচে ওডিয়েন স্মিথের বল কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে খোঁচা মেরেই আউট হয়েছিলেন বিরাট। সেই ভুলের পুরনাবৃত্তি যাতে না হয়, সে দিকেই নজর রাখছেন প্রাক্তন অধিনায়ক।
নেটে ব্যাট করার সময় যদিও ভুবনেশ্বর কুমারের বলে এক বার খোঁচা দিতে দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু তার পরেই ব্যাট দিয়ে নিজের প্যাডে এমন জোরে আঘাত করলেন, দেখে বলে দেওয়া যায় শট নির্বাচন নিয়ে তিনি এখনও সন্তুষ্ট নন। ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠৌর যদিও সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘বিরাট খারাপ ছন্দে রয়েছে, এটা বলা যায় না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ়ে ও রান পায়নি ঠিকই তবে নেটে খুব ভাল ব্যাট করছে। ছন্দে ফেরার মরিয়া চেষ্টা করছে। আমি নিশ্চিত আসন্ন সিরিজ়ে যে কোনও একটি ম্যাচে বিরাট বড়
রান পাবে।’’
স্পিনারদের বিরুদ্ধে যদিও সাবলীল ভঙ্গিতেই স্টেপ আউট করে শট খেলতে দেখা গেল তাঁকে। প্রায় এক ঘণ্টার ব্যাটিং শেষে ব্যাগ নিয়ে ড্রেসিংরুমে চলে গেলেন তিনি।
ভারতীয় দলের অনুশীলন তখনও চলছিল। ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, বাইশ গজে বাউন্স থাকবে। স্পোর্টিং উইকেট তৈরি করা হচ্ছে। উইকেটে হাল্কা ঘাসও রাখা হয়েছে মাটির বাঁধন ধরে রাখার জন্য। দ্বিতীয় ইনিংসে নাকি স্পিনাররাও সাহায্য পেতে পারেন। ব্যাটাররা যেমন শট খেলতে পারবেন, বোলাররাও সাহায্য পাবেন। তবে সূত্রের খবর, ভারতীয় দলের কেউ কেউ পিচ দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, বোলাররাই বেশি সাহায্য পাবেন ইডেনের বাইশ গজে। আমদাবাদে উপরের সারির ব্যাটাররা সাফল্য পাননি। ইডেনে কি তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে?
সুজনবাবু অবশ্য বলছিলেন, ‘‘১৭০-১৮০ রানের পিচ তৈরি করা হয়েছে। বাউন্স থাকায় উইকেটের আড়াআড়ি শট খেলতে সমস্যা হবে না।’’ অর্থাৎ, ইডেনের রাজা রোহিত শর্মাকে ফ্রন্টফুট পুল মারতে দেখা যেতেই পারে। কিন্তু সদ্য কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে আসা শ্রেয়স আয়ারের পুল মারতে সমস্যা হচ্ছিল নেটে। দলেই যখন সেই শটের বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, তাঁর কাছেই পরামর্শ চাইতে গেলেন শ্রেয়স। রোহিতও শিক্ষকের মতো শ্রেয়সকে বুঝিয়ে দিলেন। ব্যাট ধরেও দেখিয়ে দিচ্ছিলেন কোন পজ়িশনে থাকলে সহজেই মারা যাবে এই শট।
ভারতীয় দলের অনুশীলনে দেখা গেল না ওয়াশিংটন সুন্দরকে। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট রয়েছে তাঁর। সিরিজ়ের বাকি ম্যাচগুলোয় থাকতে পারবেন না তিনি। অনুশীলনে তাই নিয়ে আসা হয় কুলদীপ যাদব এবং হরপ্রীত ব্রারকে। ওয়াশিংটনের পরিবর্তে টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা করে নিয়েছেন কুলদীপ যাদব। বলয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে হরপ্রীতকেও।
ইডেনের বাইরের দৃশ্যও অবাক করে দেওয়ার মতো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থাকলে অন্তত দু’দিন আগে থেকে ভিড় করতেন সমর্থকেরা। অনুশীলনে ক্রিকেটারেরা প্রবেশ করার সময় তাঁদের নায়ককে এক বার দেখার অপেক্ষায় থাকতেন। সোমবার সে রকম কোনও দৃশ্যও নজরে পড়ল না। সিএবি-র পক্ষ থেকে যদিও জানানো হয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে দর্শক আসার অনুমতি চেয়ে বোর্ডকে আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী এক-দু’দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।