শতরানের পর বিরাট কোহলি। ছবি: পিটিআই।
নিজের জন্মদিনে সচিন তেন্ডুলকরের বিশ্বরেকর্ড স্পর্শ করলেন বিরাট কোহলি। এক দিনের ক্রিকেটে কোহলির ৪৯তম শতরান এল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘চিকু’ সচিনের কীর্তিতে ভাগ বসালেন কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে। রবিবার কোহলি শতরান পূর্ণ হল ১১৯ বলে। ১০টি চারের সাহায্যে। শেষ পর্যন্ত কোহলি অপরাজিত থাকলেন ১২১ বলে ১০১ রান করে।
এ বারের বিশ্বকাপে তিন বার শতরানের কাছ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে কোহলিকে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি শতরান করলেও ক্রিকেট জনতার মন ভরেনি। অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন এ বারের বিশ্বকাপেই এক দিনের ক্রিকেটে সচিনের শতরানের সংখ্যা টপকে যাবেন কোহলি। তা হবে কি না এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ইডেনের ২২ গজে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের শাসন করতে করতে কোহলি স্পর্শ করে ফেললেন সচিনকে। এক দিনের ক্রিকেটে তাঁর ৪৯তম শতরান পূর্ণ হতেই দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাল ইডেনের ৬৭ হাজারের গ্যালারি।
রবিবার সকাল থেকেই ইডেন গার্ডেন্স সেজেছিল কোহলির জন্য। তাঁর জন্মদিনের জন্য। ইডেনের দর্শকদের কোহলির মুখোশ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সিএবি কর্তারা। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) অনুমোদন না পাওয়ায় কোহলির জন্মদিন পালনের পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে। কিন্তু তাঁর নাম যে বিরাট কোহলি। নিজের জন্মদিন পালনের ব্যবস্থা নিজেই করে নিলেন। সকালেই অনুষ্কা শর্মা জন্মদিনের শুভেচ্ছার জানানোর সঙ্গে সঙ্গে ১২ বছর আগের এক রেকর্ডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিলেন। যাতে অনুষ্কা স্বামীর ব্যতিক্রমী চরিত্রের কথা মনে করিয়ে দেন ক্রিকেটপ্রেমীদের। সন্ধ্যার ইডেনে কোহলি নিজেই আরও এক বার প্রমাণ করলেন, তিনি ব্যতিক্রমী। আইসিসির অনুমোদন ছাড়াই নিজের জন্মদিনে বিরাট উপহার দিলেন।
রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কোহলি শুধু শতরানের নজিরই গড়লেন না। দায়িত্বশীল ইনিংসও খেললেন। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ইনিংসের গিয়ার পরিবর্তন করলেন। কখনও তাঁকে দেখা গেল আগ্রাসী মেজাজে। কখনও সাবধানী। উইকেট বাঁচিয়ে দলের প্রয়োজন বুঝে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বিশ্বরেকর্ড ছোঁয়া শতরান রানের ইনিংস। অযথা বল তুলে মারার চেষ্টা করেননি। আবার আলগা বল পেলে বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতেও ভুল করেননি। উইকেটের অন্য প্রান্তে একের পর এক সঙ্গীকে হারিয়েও নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন কোহলি। আগ্রাসী শুরু করেও প্রিয় ইডেনে বড় রান পাননি অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সেটাই বাড়তি সতর্ক করে দেয় প্রাক্তন অধিনায়ককে।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এ বারের বিশ্বকাপে ভারতের প্রতিটি ম্যাচে রোহিত অথবা কোহলির মধ্যে এক জন বড় রান করছেন। দলের ইনিংসকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রবিবারের ইডেনে সেই দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিলেন কোহলি। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার কেশব মহারাজ ছাড়া আর কোনও বোলারকে সমীহ করেননি। মহারাজকে কেন করলেন? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে শুভমন গিলের আউট হওয়ার বলটি দেখলে। অভিজ্ঞ কোহলি ভুল করেননি। উইকেটের এক প্রান্ত আগলে রেখেছেন দলের ইনিংসের শেষ পর্যন্ত।
সচিনের বিশ্বরেকর্ড ছোঁয়া কোহলির শতরান দেখল বিশ্বকাপ। শুরু হল নতুন বিশ্বরেকর্ডের প্রতীক্ষা। বিশ্বকাপ কি সমৃদ্ধ হবে? ব্যতিক্রমী কোহলির বিরাট উপহারের অপেক্ষায় ক্রিকেট ঈশ্বর থেকে আম ক্রিকেট জনতা। ৫০-এর অপেক্ষা।