মারমুখী বিরাট কোহলী, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। —ফাইল চিত্র।
ভারত-পাক মহারণের চব্বিশ ঘণ্টা আগেও বিরাট কোহালির নেতৃত্ব ছাড়ার বিষয়ে জল্পনা থামছে না।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে বিরাটের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিশ্বকাপের পরে নেতৃত্ব ছাড়ার নেপথ্যে আসল কারণ কী? প্রশ্নটি শুনে বিরক্তই হয়েছেন বিরাট। অনুরোধ করেছেন, এ বিষয়ে যেন আর জলঘোলা না হয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কী হতে পারে তাঁর দলের কৌশল? হার্দিক পাণ্ড্য কি বল করার জন্য সুস্থ? সব কিছু নিয়েই বিরাট মুখ খুললেন সাংবাদিক বৈঠকে।
নেতৃত্ব থেকে অবসর: আমি আগেই এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছি। কেউ যদি মনে করেন তার নেপথ্যে আরও কিছু কারণ আছে, তাঁকে বলে দিতে চাই এ বিষয়ে অযথা কারণ খোঁজা বন্ধ হোক। আমাদের মূল লক্ষ্য দল হিসেবে বিশ্বকাপে ভাল কিছু করে দেখানো। সে দিকেই মনোনিবেশ করছি।
দলীয় গঠন: অবশ্যই এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখনই তা প্রকাশ্যে আনতে চাই না। বলাই যায়, মহারণের জন্য আমরা ভারসাম্য রেখেই দল গড়েছি। প্রত্যেকে ভাল ছন্দে রয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে যা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।
হার্দিক তৈরি: ম্যাচে অন্তত দু’ওভার বল করে দেওয়ার জায়গায় রয়েছে ও। তবে হার্দিক বল না করলেও আমাদের খুব একটা অসুবিধে হবে না। ব্যাটার হার্দিকের কোনও তুলনা হয় না। ছয় নম্বরে নেমে ও যে ভঙ্গিতে ইনিংস সাজায়, তা দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল। অস্ট্রেলিয়াতেও ওকে ব্যাটার হিসেবে খেলিয়েছি। তার ফলও পেয়েছি টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে। ছয় নম্বর ব্যাটার হিসেবে নিঃসন্দেহে প্রথম দলে হার্দিক জায়গা করে নিতে পারে। এ ধরনের জায়গায় বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য কাউকে নামানো যায় না। দল যখন সমস্যায় পড়ে, হার্দিকের মতো ব্যাটাররাই ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে।
বাইরের আলোচনা ভিত্তিহীন: বাইরে কী ঘটে যাচ্ছে মহারণকে কেন্দ্র করে, তা কোনও ভাবেই আমাদের প্রভাবিত করে না। আমি সব সময়ই এই ম্যাচটাকে আরও পাঁচটি ম্যাচের মতোই দেখি। একটাই মন্ত্র, জিততে হলে সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে।
শক্তিশালী বোলিং: এটা বলা ঠিক নয় যে বর্তমানে আমাদের দলে সেরা বোলাররা রয়েছে যা আগে ছিল না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এত দিন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যে ক’টি ম্যাচ খেলেছি, প্রত্যেকটি জিতেছি। যদি এত দিন আমাদের বোলিং বিভাগ নড়বড়ে হত, এই ম্যাচগুলো জেতা সম্ভব হত না। আমার কাছে সবচেয়ে বড় বিষয়, ম্যাচের দিন আমরা মাঠে কতটামরিয়া লড়াই উপহার দিচ্ছি।
পিচ: আইপিএল ফাইনাল দেখে আমি আশাবাদী। মনে হচ্ছে, বিশ্বকাপে পিচের মান উন্নত হবে। দুবাই ও আবু ধাবিতে বড় রানের ম্যাচ আশা করতে পারেন সমর্থকেরা।
শিশির: রাতের ম্যাচগুলোয় শিশির বড় ভূমিকা নেবে। যারা রান তাড়া করবে, কিছুটা হলেও সুবিধেজনক জায়গায় থাকবে।
মানসিক প্রস্তুতি: খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিন-চার বলে ম্যাচের রং পাল্টে যেতে পারে। বোলারদের কাজটা খুব কঠিন। ওভারের প্রথম দুই বলে বড় রান দিয়ে ফেলার পরের চারটি বল সে কী রকম করবে, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। যদিও আইপিএল খেলে প্রত্যেকে তৈরি। অনুভব করেছি এই পরিবেশে কী করে মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচের মোড় ঘুরতে পারে। এই অভিজ্ঞতা অনেকটাই এগিয়ে রাখবে আমাদের।
পাক শক্তি: আমরা বিপক্ষ নিয়ে আলোচনা করিনি। রেকর্ড নিয়েও ভাবিনি। এই সব বিষয়ে চিন্তা করলে খেলা থেকে মন সরে যেতে পারে। এত দিন ভাল ক্রিকেট খেলেছি বলেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বমঞ্চে জিতেছি। নিঃসন্দেহে পাকিস্তান শক্তিশালী। যে কেউ ওদের হয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে।
বলয়ে থাকার চাপ: বলয়ের মধ্যে থেকে দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলা খুবই কঠিন। করোনার জন্য বহু দিন ক্রিকেট বন্ধ ছিল ঠিকই, তবে সেই ঘাটতি পূরণ করার জন্য ক্রিকেটারদের উপরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা ঠিক নয়। ভারসাম্য জরুরি। ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলা উচিত তাঁদের মানসিক পরিস্থিতি বোঝার জন্য। ৫-৬ জনকে আপনি হেসে গল্প করতে দেখলেই ধরে নেওয়া ঠিক নয় সবাই একই রকম মেজাজে আছে। আমি মনে করি, সবাইকে কিছুটা সময় দেওয়া উচিত, যাতে মানসিক ভাবে তৈরি হয়ে সে ফিরে আসতে পারে।