জুটি: হাফসেঞ্চুরি করার পরে সূর্যকে অভিনন্দন বিরাটের। বিসিসিআই
আরও একটা সিরিজ় জয়ের ট্রফি নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটারদের উল্লাস করতে দেখে অদ্ভুত তৃপ্তি হচ্ছিল। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এটা শুধু নিছকই একটা টি-টোয়েন্টি সিরিজ় জয় নয়। বিশ্বকাপের মহড়ায় আমরা আবার ফিরে পেলাম কিং কোহলিকে। যে নিজে দায়িত্ব নিয়ে খেলে গেল। দলের তরুণ ব্যাটসম্যানকে প্রয়োজন মতো স্ট্রাইক দিল। আর ম্যাচ প্রায় শেষ করে ফিরল।
আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঠিক এই কোহলিকেই তো চায় ভারতীয় সমর্থকেরা। সিরিজ় জয়ের চেয়ে কিং কোহলির প্রত্যাবর্তন কোনও অংশে কম বড় প্রাপ্তি নয়। বরং আমি তো বলব, বেশিই।
হায়দরাবাদের এই পিচে অস্ট্রেলিয়ার ১৮৬ রানটা খারাপ স্কোর ছিল না। তার উপরে দুই ওপেনার দ্রুত ফিরে যায়। ৩০ রানে দু’উইকেট হারানোর পরে প্রত্যাঘাতটা করে কোহলি আর সূর্যকুমার যাদব।
কোহলি যথেষ্ট আগ্রাসী আর ইতিবাচক ভঙ্গিতে ইনিংস শুরু করেছিল। কিন্তু সূর্যকে মারতে দেখে নিজেকে একটু গুটিয়ে নিল। এক রান নিয়ে সূর্যকে স্ট্রাইক দিচ্ছিল। সোজা কথায়, ভারতের তরুণ ব্যাটসম্যানকে খেলাচ্ছিল কোহলি। দু’জনের জুটিতে উঠল ১০৪ রান। কোহলি করল ৪৮ বলে ৬৩। সূর্যকুমারের সংগ্রহ৩৬ বলে ৬৯।
সূর্য আউট হলেও শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করে গেল কোহলি। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১ রান। ড্যানিয়েল স্যামসের প্রথম বলেই দুরন্ত একটা ছয় মেরে ভারতের কাজটা সহজ করে দিল এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান। এর পরের বলে কোহলি ফিরলেও সমস্যা হয়নি। এক বল বাকি থাকতে ছয় উইকেটে ভারতকে ম্যাচ ও সিরিজ় জিতিয়ে দেয় হার্দিক পাণ্ড্য। ঘরের মাঠে ২-১ ফলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে কিন্তু মনোবল বাড়িয়ে রাখল রোহিতরা। অধিনায়কের ফর্মে থাকাটাও ভারতের একটা প্লাসপয়েন্ট হবে।
বছর দু’য়েক আগে এই হায়দরাবাদেই অসাধারণ একটা ইনিংস খেলে ভারতকে জিতিয়েছিল কোহলি। এ দিন পুরনো মেজাজেই দেখা গেল। কভার ড্রাইভ থেকে ফ্লিক— সব রকম শটই পাওয়া গিয়েছে প্রাক্তন অধিনায়কের ব্যাট থেকে। তবে সেরা ছিল অ্যাডাম জ়াম্পাকে স্টেপ আউট করে গ্যালারিতে ফেলে দেওয়া।
আগের ম্যাচে অত ভাল খেলা রোহিত শর্মা এ দিন পাওয়ার প্লে-তে আউট হয়ে গেল প্যাট কামিন্সকে পুল করতে গিয়ে। তার আগে ড্যানিয়েল স্যামসকে পুল করতে গিয়েই ফিরে গিয়েছে আর এক ওপেনার কেএল রাহুলও।
সেখান থেকে পাল্টা লড়াই শুরু করে কোহলি এবং সূর্য। আইপিএলে সূর্য়ের তেজ অনেক বারই দেখা গিয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দেখা যাচ্ছে। এ দিন সূর্যের ব্যাট থেকে পাওয়া গেল পাঁচটা চার, পাঁচটা ছয়। উইকেটের চারদিকে শট খেলেছে। সূর্যের সবচয়ে বড় দক্ষতা হল, কোথায় ফিল্ডার আছে, সেটা বুঝে নিয়ে শট খেলা।
এই সিরিজ়ে ভারতের আরও একটা প্রাপ্তি হয়ে থাকল অক্ষর পটেল। সিরিজ় সেরা ক্রিকেটারও নির্বাচিত হল অক্ষর। চোট পেয়ে বিশ্বকাপ থেকে রবীন্দ্র জাডেজা ছিটকে যাওয়ার পরে একটা প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছিল। এই অলরাউন্ডারের অভাব কি পূরণ করা যাবে? পূরণ করা যাবে কি না, জানি না। কিন্তু এই অস্ট্রেলিয়া সিরিজ় বুঝিয়ে দিল, জাডেজার পরে সেরা স্পিনার-অলরাউন্ডার পেয়ে গিয়েছে ভারত। তার নাম অক্ষর পটেল।
জাডেজার চেয়েও একটা ব্যাপারে এগিয়ে অক্ষর। সেটা হল, পাওয়ার প্লে-তে বল করার দক্ষতা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যখনই ভারতীয় বোলাররা মার খেয়েছে, রোহিত বল তুলে দিয়েছে অক্ষরের হাতে। আর প্রতিবারই অধিনায়কের আস্থার মর্যাদা দিয়েছে অক্ষর। এ দিনও যেমন দিল। ক্যামেরন গ্রিনের বিধ্বংসী ইনিংসের মাঝেও তুলে নিল অ্যারন ফিঞ্চের উইকেট।
এর সঙ্গে রয়েছে ফিল্ডিং। জানি, এ দিন পয়েন্টে একটা ক্যাচটা ছেড়েছে ও। কিন্তু এমনিতে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য ফিল্ডার। বিশেষ করে আউটফিল্ডে। ডিপ স্কোয়ারলেগ থেকে দৌড়ে এসে বল ধরে এক টিপে উইকেট ভেঙে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে রান আউট করল। দীনেশ কার্তিক আগে স্টাম্প ভেঙে দিলেও একটা বেল পড়েনি। অক্ষরের থ্রো উইকেটে লাগার পরে দ্বিতীয় বেলটা পড়ে। যে কারণে তৃতীয় আম্পায়ার ম্যাক্সওয়েলকে রান আউট দেন। অক্ষরের ব্যাটিংটা আমরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে সে ভাবে এখনও দেখিনি। কিন্তু ওর হাতে প্রচুর শট আছে। আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে অক্ষরকে তো ফিনিশারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন কোচ রিকি পন্টিং।
সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে ভারতের বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে অক্ষর। অস্ট্রেলিয়ার পিচের বাউন্স ওকে সাহায্য করবে বলেই মনে হয়।