মহড়া: দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টেস্টের আগে অনুশীলনের ফাঁকে শ্রেয়সের সঙ্গে সহ-অধিনায়ক রাহুল। ছবি টুইটার।
দক্ষিণ আফ্রিকায় কখনও টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি কোনও ভারতীয় দল। এখনও পর্যন্ত যে সাতটা সিরিজ় হয়েছে, তার ছ’টিতে হেরেছি আমরা। সেই মহম্মদ আজ়হারউদ্দিনকে দিয়ে শুরু। তার পর সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং বিরাট কোহলি। কেউ সিরিজ় জিতে ফিরতে পারেনি। ধোনিই একমাত্র অধিনায়ক যে সিরিজ ড্র করে ফিরেছিল।
১৯৯২ থেকে মোট ২০টি টেস্ট ম্যাচে ১০টিতে হেরেছে ভারত। জিতেছে মাত্র তিনটিতে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ী অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়। ২০০৬-’০৭ মরসুমে। কিন্তু সিরিজ হেরে যায় ভারত। ২০১৭-’১৮ মরসুমে বিরাট কোহলির ভারতও একটি টেস্ট জিতেছিল কিন্তু তার আগেই সিরিজ় হেরে বসেছিল। যদিও এ সবই ইতিহাস এবং ক্রিকেটে ইতিহাস দিয়ে বর্তমানের দ্বৈরথ বিচার করা যায় না। আর যায় না যে, সেটা একটা ভাল দিক। কারণ, খেলায় অনিশ্চয়তার উপাদানটাই সেরা আকর্ষণ। এই কারণেই তো ক্রীড়াপ্রেমীরা আগ্রহ ভরে খেলা দেখতে বসেন। খেলার মাঠে অনামী কেউ সকলকে চমকে দিয়ে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারে। আবার প্রতিষ্ঠিত, জনপ্রিয় নায়ক মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। নিশ্চয়তা বলে কিছু নেই। চূড়ান্ত ফল নিয়ে এই অনিশ্চয়তার মোড়কই খেলাকে জনপ্রিয় করে তোলে।
তবু ইতিহাসটা জানা থাকলে সাফল্যের নকশাটা করতে সুবিধা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে সেই শিক্ষাটা হল, সেখানকার পিচ এবং পরিবেশ কেমন থাকে। আফ্রিকান সাফারিতে গেলে মনে রাখতে হবে ওখানকার শক্ত মাটির পিচের কথা। মাটিটা ভীষণ শক্ত বলেই দক্ষিণ আফ্রিকার পিচে অনেক বেশি বাউন্স থাকে। ভারতীয় পিচের তুলনায় তো অনেক গুণ বেশি বটেই। ভারতীয়দের তাই বেশি করে এটা মাথায় রাখা দরকার। এই কারণেই পেসাররা বরাবর ওখানে সফল হয়েছে।
তবে এটাও ঠিক যে, সময় পাল্টেছে। এই ভারতীয় দলের হাতে থাকা পেস আক্রমণ এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা। শুধু এক জন বাঁ হাতি পেসারের অভাব রয়েছে। সেটা বাদ দিলে এমন বৈচিত্রপূর্ণ পেস আক্রমণ রয়েছে, যা সব পরিবেশে, সব ধরনের পিচে সফল হয়ে দেখিয়েছে। তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণ অনভিজ্ঞ। রাবাডা রয়েছে, কিন্তু চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছে অনরিখ নখিয়ে। তা হলেও বলতে হবে, ওদের হাতে যা পেস বোলার আছে, তারা কিন্তু দেশের মাঠে খেলবে। নিজেদের দেশের পরিবেশ, পিচ সম্পর্কে অনেক বেশি ওয়াকিবহাল। তা ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডিং খুবই উচ্চ মানের। ভারতীয়দের থেকে এই বিভাগে ওদের এগিয়েই রাখব। তাই প্রতিপক্ষকে হাল্কা ভাবে নেওয়া ঠিক হবে না।
ভারতের ব্যাটিং অন্তত কাগজেকলমে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু সেটা শুধুই কাগজেকলমে। আসল খেলা হবে মাঠে এবং যে দল পরিবেশ, পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে তারাই বেশি সফল হবে। অতীতে দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত বিদেশের মাঠে ভাল খেলতে পারত না ভারতীয় দল। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সংগ্রাম করতে হত। বিদেশের মাঠের গতি, বাউন্স মোকাবিলা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ত। কিন্তু এখন সারা বছর ধরে বিভিন্ন দেশে অনেক ক্রিকেট খেলে বেড়ায় ভারতীয় দল। তাই দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে আর বিদেশ-বিভুঁই মনে হওয়ার কোনও কারণ নেই।
তার উপর এখন ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। আশা করা যায়, দলের আচরণে নিয়ন্ত্রণ দেখা যাবে, ক্রিকেটারেরা বেশি শৃঙ্খলাপরায়ণ থাকবে এবং সফরের গুরুত্ব নিয়ে আপস করা হবে না। তার পাশাপাশি, দল নির্বাচন হবে সঠিক, স্বচ্ছ এবং সম্পূর্ণ ভাবে দলের প্রয়োজনের কথা ভেবেই প্রথম একাদশ বাছা হবে বলে ধরা যায়। আশা করব, বিশ্বের সেরা অফস্পিনারকে আর সাইডলাইনের বাইরে বসে থাকতে দেখতে হবে না।
এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, এই দক্ষিণ আফ্রিকা দল তাদের পূর্বসূরিদের মতো শক্তিশালী নয়। কাগজেকলমে তাই ভারত এগিয়ে থেকে শুরু করবে। প্রথম বার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে টেস্ট সিরিজ জিতে ফেরার সুযোগ তাই ভাল রকমই থাকছে। পারবে কি কোহলির দল? সময়ই বলে দেবে।